Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশায় অতিষ্ঠ উত্তরাবাসী

কচুরিপানা ময়লা-আবর্জনা আর দখলের কবলে ঢাকার জলাশয়-৯

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

খিদিরখাল ও উত্তরা লেক ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়
রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরার ৫, ৯, ১১ ও ১৩ নং সেক্টর সংলগ্ন লেক ও হরিরামপুর ইউনিয়নের খিদির খালে জন্ম নেয়া মশায় অতিষ্ঠ উত্তরাবাসী। বিশেষ করে খিদির খালে বহুদিন ধরে জমা হওয়া ময়লা-আবজনা ও পচা পনির দুর্গন্ধে ওই এলাকায় টেকাই দায়। খিদির খালের দক্ষিণ পাশে বহুদিন ধরে পরিষ্কার না করায় কচুরিপানাসহ বিভিন্ন আগাছা ও লতাপাতার জঙ্গল হয়ে এটি এখন মশার গোডাউনে পরিণত হয়েছে। এ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ পুরা উত্তরাবাসী।
দীর্ঘ ৮ কিলোমিটারে এ খালটি তুরাগ নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে হরিরামপুর ইউনিয়নের রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া, উত্তরা ১২ নং সেক্টর খালপাড়, দলিপাড়া, বাউনিয়া, মিরপুর আলোকদি হয়ে আবার তুরাগ নদীতে গিয়ে মিশেছে। অসাধু চক্রের দখল আর রাস্তা ও রাজউকের প্লট নির্মাণের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর অংশে লেকের উত্তর প্রান্ত ময়লা ফেলে দখল করে প্লটও তৈরি করা হয়েছে। ১০ নম্বর সেক্টরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বহমান খালটি এখন পুরোপুরি নর্দমায় পরিণত হয়ে গেছে।
গত দুই বছর আগে ঢাকা ওয়াসার মালিকানাধীন খিদিরখাল থেকে নামে মাত্র ময়লা-আবর্জন পরিষ্কার করা হলেও এটি আবার ময়লা ভাগাড় হয়ে গেছে। বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার ড্রেন ও আবাসিকের স্যুয়ারেজ লাইন খালের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা পড়ছে খালের পানিতে। এ ময়লা-আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ অভিজাত এলাকা উত্তরাসহ রাজধানীবাসী।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক কর্মকর্তা (আনিক) মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ গতকাল শনিবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, খিদির খালটি যেহেতু হরিরামপুর ইউনিয়নে পড়েছে সেহেতু এর ভাল মন্দের দায়ভার সিটি কর্পোরেশনের নয়। আমরা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এরিয়ার মধ্যে মোশা নিধনের নিয়মিত কর্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মশা এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। বাকিটাও আমরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালের পানি দূর্গন্ধ ও মশার উৎপাতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। একসময়ের বহমান এ খালটি অবৈধভাবে দখল হয়ে এখন সরু ড্রেন হয়ে গেছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন এ দখলের প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছে না। খালের ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি ব্রিজ। এরমধ্যে একটি ব্রিজ দখল করে ভাসমান দোকান চালানো হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন থাকলেও সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নতুন করে ১৮টি ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় এটি এখন ডিএনসিসির আওতায় চলে এসেছে। কিন্তু এর দায়ভার নিয়ে এখনও ইউনিয়ন পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে এ নিয়ে চলছে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব।
সরেজমিনে দেখা যায়, খিদির খালের পানিতে ভাসছে ময়লা-আবর্জনা। এছাড়াও খালের দুপাশে পাইলিং করে দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন দোকানঘরসহ নানা স্থায়ী স্থাপনা। খাল পাড়ের দোকানদার জমসেদ মিয়া বলেন, দিন দিন খালের পাড় প্রভাবশালীরা দখল করে নিয় যাচ্ছে। এটি একসময় ছিল ৭০ ফুটের বেশি চওড়া ছিল। বর্তমানে খালটি ৩০ ফুটের বেশি চওড়া হবে না।
এদিকে দখল, দূষণ আর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যস্থাপনায় রাজধানীর উত্তরার লেকটির এখন বিপন্ন দশা। অভিযোগ উঠেছে, ডিসিসি, রাজউক, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফতরের চরম উদাসীনতায় দখল আর দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে নয়নাভিরাম এ লেকটি।
লেক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দখলে-দূষণে এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে উত্তরা এলাকার মনোমুগ্ধঙ্কর লেকটি। পার্শ্ববর্তী ভবন, বাড়িঘর, অফিসের স্যুয়ারেজ সংযোগ সরাসরি লেকের পানিতে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় কাঁচা বাজারগুলোর ময়লা-আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে লেকে। পাহারা বসিয়েও এসব রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন এ লেকে ১০-১৫ টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূষণমাত্রা। পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় মাছ মরে ভেসে উঠছে প্রায়ই। কোথাও কোথাও লেক ভরাট করে অবৈধ প্লট সৃষ্টি করে নির্মাণ হচ্ছে একাধিক বহুতল ভবন অথবা বস্তি।
উত্তরা লেক এলাকায় নিয়মিত বসছে বখাটেদের আড্ডাবাজি ও তাস খেলার আসর। মাদক বেচাকেনা ও সেবন সহজলভ্য হওয়ায় বিকাল পেরোতেই আড্ডা জমছে জম্পেশ। ঘুরতে এসে তরুণীরা শিকার হচ্ছে ইভ টিজিংয়ের। নির্জনতার সুযোগে চলছে ছিনতাই-রাহাজানি। দীর্ঘ তিন দশকের ধারাবাহিক অবহেলায় উত্তরা লেকের অবস্থা আজ বিপন্ন। আনুমানিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০০ ফুট প্রশস্ত উত্তরা লেকটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে জবরদখল হয়ে গেছে। বাকি জায়গাও প্রভাবশালী মহল কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার ধান্ধায় ব্যস্ত।
উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি কেএমআর মঞ্জুরসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশের মতো আন্দোলনেও ভূমি খেকোদের হাত থেকে লেকটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। লেক-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করে জানান, বিকাল হলেই লেক এলাকায় অপরাধীদের মিলনমেলা জমে ওঠে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক বেচাকেনা ও সেবনের হৈ-হুল্লোড়। ছিনতাইকারীদের অবাধ দৌরাত্মে এটি এখন আতঙ্কের স্থান। লেকের জায়গা দখল করে কয়েক জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোট ছোট বস্তি। স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী চক্র বস্তির খুপরিঘরগুলো থেকে মাসে এক-দেড় হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে থাকে। বস্তিপাড়ার খোলা পায়খানা, মলমূত্র, নর্দমা আর লেক মিলেমিশে একাকার।
খিদির খালের ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আফছার উদ্দিন খান বলেন, খালটি সিটি কর্পোরেশনের নয় এটি ঢাকা ওয়াসার। সেজন্য এ খাল নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যর্থা নেই। খাল পরিষ্কারের দেখভাল করে ওয়াসা। উত্তরা ৫, ৯, ১১ ও ১৩ নং সেক্টরের লেকের ব্যপারে তিনি বলেন, লেকের দক্ষিণ পাশে বর্তমানে উন্নয়ন কাজ চছে। ওই অংশের কাজ শেষ হলে উত্তর অংশের কাজ শুরু হবে। লেকের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে উল্লেখিত সমস্যাগুলো আর থাকবে না।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ১ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:২৭ এএম says : 0
    জনগন বলছেন, “ মশার আন্দোলন “ গনতন্ত্র উদ্দারে যেন মেতেছে প্রতিবাদী মশার দল, মেয়র সাহেবের নীরব কেন কোথায় সেই বল ? মানুষ নামলে খবর আছে কোথায় লুকালো সে হুংক্কার, মশা মারার নাই মরদ দেখায় কি অহংকার ৷ মশার কামড় খেতে হলে আপনার কি দরকার, ডোবা-নালায় ময়লার আরত কেন হয়না পরিষ্কার ? ঢাকা এখন মশার শহড় শুনতে কি মজা পান, জনগনের চিন্তা কেউ করেন না ভোটে জিতে কেন হন পাষান ???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ