পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফুট ওভারব্রিজ আছে, কিন্তু ব্যবহার করে না কেউ। ব্যস্ত সময়ে পুলিশের সামনেই পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। অথচ পাশেই ব্যবহার অভাবে ‘জং’ ধরে পড়ে আছে ফুট ওভারব্রিজ। ডিএমপির পক্ষ থেকে পথচারীদের সচেতনতা সৃষ্টি এবং ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের জন্য বহুবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কোনো কোনো ফুট ওভারব্রিজে ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া বনানী ও হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায় ফুট ওভারব্রিজ চলন্ত সিঁড়িও স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে পথচারীদের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে সড়ক পারাপারে শাস্তির বিধান করা হয়েছিল। বসানো হয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। এত সব উদ্যোগের পরও রাজধানীবাসীর ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে কোনো আগ্রহ নেই। এতে করে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়িগুলো থামতে বা ধীর গতিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। বাড়ছে ভোগান্তি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ১২৮টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পথচারীদের পারাপারের জন্য রয়েছে ৮৭টি ফুট ওভারব্রিজ। এ ছাড়া রয়েছে তিনটি আন্ডারপাস। ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস মিলে মোট সংখ্যা ৯০। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি। ট্রাফিক পুলিশের মতে, ভুল জায়গায় ফুট ওভারব্রিজগুলো নির্মিত হওয়ায় তা পথচারীদের শতভাগ কাজে লাগে না। কিছু কিছু ফুট ওভারব্রিজ পরিণত হয়েছে ছিন্নমূল মানুষের আবাসস্থলে। আবার কোনোটিতে বসে মাদকের হাট। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজগুলোর উচ্চতা অনেক বেশি। সিঁড়ির ধাপগুলো আনুপাতিকভাবে সঠিক না হওয়ায় মানুষ এগুলো ব্যবহার করছে না। এ কারনে কোনো কাজেই লাগে না এগুলো।
সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, ব্যস্ত সময়েও কেউই এখানকার ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না। চৌরাস্তার একদিকে মিন্টোরোড, আরেক দিকে বেইলী রোড। মাঝখান দিয়ে মগবাজার-কাকরাইল রোড। সকালে অফিসগামী যাত্রীদের ভিড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও এই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। চলন্ত গাড়ির ভিড়ের মধ্যেই দলে দলে পথচারীরা রাস্তায় নেমে পড়লে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ বাধ্য হয়ে হাতের ইশারায় গাড়িগুলোকে থামিয়ে দেয়। এতে করে পেছনের দিকে গাড়ির সারি দীর্ঘ হয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। এ প্রসঙ্গে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক পুলিশ বলেন, সকালে এই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যানবাহন নয়, আমরা পথচারীদের নিয়ন্ত্রণ করি। যানবাহনের ভিড়ের মধ্যেই দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। সে কারনে মানুষের দিকে নজর রাখতে হয়। তা না হলে কখন যে দুর্ঘটনা ঘটবে কেউ জানে না। সে সময় ভিকারুনন্নেছা স্কুলের এক ছাত্রীকে নিয়ে তার মা ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। সেদিকে দেখিয়ে ওই ট্রাফিক পুলিশ বলেন, ওই যে দ্যাখেন, কিভাবে রাস্তা পার হচ্ছে। এখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কে দায়ী হবে? এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলেন কেন?- জানতে চাইলে ওই অবিভাবক বলেন, ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে চলার মতো অবস্থা নাই। মেয়েকে নিয়ে ওই ব্রিজ দিয়ে কেমনে পার হবো? ফুট ওভারব্রিজে কি আছে জানতে চাইলে ওই অবিভাবক ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনি নিজে গিয়ে দেখে আসেন। চৌরাস্তার মোড় থেকে একটু দুরেই ফুট ওভারব্রিজ। দৃষ্টিনন্দন করতে ব্রিজের উপরে ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছও লাগানো হয়েছে। ঘন সবুজ গাছে ব্রিজের কোনো কোনো স্থানে ঝোঁপের মতো আড়ালের সৃষ্টি হয়েছে। সেই আড়ালে দখল করে আছে কয়েক জোড়া স্কুল পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী। তারা জোড়ায় জোড়ার ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে। কেউ কেউ আবার গাছের আড়ালকে খুঁজে নিয়ে বসে আছে। এসব দেখার জন্য ব্রিজে ওঠার সময় একজন পথচারী বাধা দিয়ে বলেন, ‘ভাই উপরে উইঠেন না। এখানে পোলাপান ছাড়া কেউ ওঠে না। উঠলে যে দৃশ্য চোখে পড়বে তাতে লজ্জা পাবেন।’
একই অবস্থা অন্যান্য ফুট ওভারব্রিজের। বাড্ডা লিঙ্ক রোডের ওভারব্রিজ দিয়ে পথচারীরা পারাপার হয় না। রাতে এই ব্রিজটি অন্ধকার থাকে বলে ভয়ে কেউ ওঠে না বলে জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, এতো উঁচা ব্রিজ, উঠতে কষ্ট হয়। দিনের বেলায়ও ভয়ে কেউ এই ব্রিজে ওঠে না।
শাহবাগে ফুলের পাইকারি আড়তের সামনের ফুট ওভারব্রিজটি মূলত আড়তের ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিজস্ব কাজেই ব্যবহার হয়। ওভারব্রিজর উপর আড়তের বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিসপত্র রেখে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। পথচারীরা এই ব্রিজ ব্যবহার করে না বললেই চলে। কলাবাগান থেকে শ্যামলী পর্যন্ত রয়েছে সাতটি ফুট ওভারব্রিজ, যার একটিও ব্যবহার করা হয় না। মূলত দুই রাস্তার মধ্যকার পার্টিশন ওয়াল ভেঙে যাওয়ায় ওভারব্রিজ ব্যবহার না করেই স্বল্প সময়ে রাস্তা পারাপার হয় পথচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে এ পার্টিশনগুলোও করা হচ্ছে না। পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির সামনে ২০১৪ সালে নির্মিত ফুট ওভারব্রিজটি দিনের বেশির ভাগ সময়ই অব্যবহৃতভাবে পড়ে থাকে। তবে ফার্মগেট, মিরপুর-১০ ও নিউ মার্কেট এলাকার ফুট ওভারব্রিজগুলো ব্যস্ততম সময়ে ব্যবহার করা হলেও ব্রিজের বেশির ভাগ স্থান থাকে হকারদের দখলে। কোনো কোনো ওভারব্রিজে আবার ভিক্ষুকদের উৎপাতে চলায় মুশকিল। কাওরান বাজার ও গাবতলীর আন্ডারপাস পথচারীরা ব্যবহার করে না ছিনতাইকারীর ভয়ে। গাবতলী আন্ডারপাসটি মাদকাসক্তদের চিরস্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়ে আছে দীর্ঘদিন থেকে।
নগরীর ফুট ওভারব্রিজ প্রসঙ্গে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, পথচারীদের নিরাপত্তার জন্যই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা উচিত। তবে ফুট ওভারব্রিজগুলো অবশ্যই সঠিক জায়গার হতে হবে। এগুলো ব্যবহারে আইনের প্রয়োগের চেয়ে মানুষের সচেতনতাই বেশি দরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন প্রকৌশলী বলেন, কিছু কিছু ফুট ওভারব্রিজ ভুল জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে-এটা ঠিক। এগুলোর উচ্চতাও অনেক বেশি। কষ্ট হবে জেনে মানুষ সেগুলো ব্যবহার করে না। তবে আগামীতে সঠিক স্থানে এবং কম উচ্চতায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।