Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেব ধোলাইখাল ১০ বছরেও পরিষ্কার করা হয়নি

কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনা আর দখলের কবলে ঢাকার জলাশয়-৩

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাজধানীর ধোলাইখাল থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত বয়ে যাওয়া খালটির নাম দেব ধোলাই খাল। বুড়িগঙ্গা থেকে উৎপত্তি হয়ে এ খালটি পুরান ঢাকার বুক চিরে ধোলাইপাড়ের কোল ঘেষে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি হয়ে ধোলাইখাল, কুতুবখলি দিয়ে শীতলক্ষা নদীতে গিয়ে মিশেছে। বুড়িগঙ্গা থেকে ধোলাইখাল পর্যন্ত এখন আর কোন খালের অস্তিত্ব নেই। কোন এক সময় এখান দিয়ে খর¯্রােতা নদী বয়ে গেছে এটা এখন ওই এলাকার বয়স্ক মানুষের মুখেই শুনতে হয়। ধোলাইখাল থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত খালের অস্তিত্বও বিলিন হওয়ার পথে। যেখানে একসময় ২০০ ফুট খালের খর¯্রােতের মধ্যদিয়ে ১০০ ফুটের নৌকা আসা যাওয়া করতে সেখানে এখন কোথায়ও ১০ ফুট কোথায় ১৫ ফুটের সরু ড্রেনে পরিণত হয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫০, ৫১ ওয়ার্ড ও দনিয়া ইউনিয়ন জুড়ে এ খালটি। স্থানীয় দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউপি চেয়াম্যান ও ঢাকা ওয়াসাসহ সরকারি কোন সংস্থারই এ খালটির রক্ষণা বেক্ষণে নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ। সরজমিনে গতকাল রোববার কুতুবখালি থেকে ধোলাইখাল পর্যন্ত দেব ধোলাই খালটির দুই পাশ ঘুরে দেখা গেছে, খালটি গত ১০ বছরেও পরিষ্কার করা হয়নি। কোথয়ও ময়লা আবর্জনা কোথায়ও কচুরিপানা আবার কোথাও আগাছা জন্মে পুরা খালটিই এখন পরিত্যাক্ত খালে পরিণত হয়েছে। এ ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানাতে জন্মাচ্ছে মশা। এ ময়লা আবর্জনায় জন্ম নেয়া মশার যন্ত্রণায় দেব ধোলাই খালের আশেপাশের এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলাতেও কোথাও স্বস্তিতে একটু স্থির হয়ে বসতে পারে না ওই এলাকার মানুষ। দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টাই এখন মশার যন্ত্রণায় রয়েছে ওই এলাকাবাসী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, খাল ও জলাশয় পরিষ্ককারের জন্য বহু আগেই আঞ্চিল কর্মকর্তাদের (আনিক) নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু তারা এ ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, ডোবা, নালা ও জলাশয় থেকে ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিক্ষারের কাজ করতে আমাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়াও এ কাজে রয়েছে নানা জটিলতায়। যে কারণে আনিকরা এই এগুলো পরিষ্কারের কাজে হাত দিতে চান না।
দেব ধোলই খালের যে সামান্য অংশবিশেষ এখনো দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কাদা পানি, ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানার দখলে রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এটা এখন মশার খামারে পরিণত হয়ে আছে। এ খালটির মালিকানা নামকাওয়াস্তে ঢাকা ওয়াসার থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই অভিভাবকত্বহীন এই খালটি দীর্ঘদিন অযতœ আর অবহেলায় রয়েছে। ভূমিদস্যু আর দখলদার অসাধু চক্রের কবলে পড়ে এ খালটির বড় অংশই ক্রমে ক্রমে দখল হয়েগেছে। এটাকে এখন একটি সরু ড্রেন ছাড়া আর কিছুই নয়। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ খালটিতে কখনও মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে কেউ বলতে পারেনি। গত ১০ বছর যাবত এটি পরিষ্কারও করা হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই খালটিকে ‘মশার খামার’ বলে মন্তব্য করে খালের পাশে দীর্ঘদিনের এক মুদি দোকানী আবদুস সাত্তার বলেন, মাঝে মধ্যে এখানে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে ধোয়া দিয়ে যেতে দেখি কিন্তু তাতে কি হবে। তারা ধোয়া দেয় আবার আমাদেরকে দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা মশাও কমড়ায়। এ ধোয়া দেয়ার কি দরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন খানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি তার পাশের চেয়ারে বসা চামছা টাইফের জনৈক ব্যক্তিকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, যা কিছু জানতে চান তার কাছ থেকে জানুন। দেব ধোলাই খালটির ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানাতে জন্ম নেয়া মশার যন্ত্রণায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এই ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কি জানতে চাইলে পাশে বসা সেই ভদ্রলোক বলেন, এ পর্যন্ত ১০ বার কাউন্সিলর তার পকেটের পয়সা খরচ করে খালটি পরিষ্কার করেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে এ খালটি কোন প্রাকার পরিষ্কার করা হয়নি। এবং খালটির দুপাশ ঘুরেও দেখা গেছে ১০ কেন একবারও এ খালটি পরিষ্কার করা হয়েছে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খালটি ১০ বার পরিষ্কার করা হয়েছে এটা আপনা মুখস্ত কথা নয় কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকাবাসী কি বলেছে আর আপনিই বা কি দেখলেন তাতে আমাদের কি আসে যায়? ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবুর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ধোলাই খাল থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত বয়ে যাওয়া দেব-ধোলাই খালটি পুরাই দখল হয়ে গেছে। যে কারণে এ খালটি দিয়ে এখন আর আগের মতো পানি সরতে পারে না। এতে অল্প বৃষ্টিতেই খালটির আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকার লোকজন বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃষ্টির পানি নামতে দুই থেকে তিন দিন লেগে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, খালের ওপর বিভিন্ন স্থানে ৫৭টি বাঁশের সাকো নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ-বাঁশের মাচা করে নির্মাণ করা হয়েছে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি দোকান। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত খালে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ###

 



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:৪৯ এএম says : 0
    জনগন বলছেন,“ হায়রে ! কচুরিপানা তুই যদি হয়তি সোনা ??এতদিনে থাকতো না পরে একখানা ৷ “
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ