Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালের বাজারে অস্থিরতা থামছে না

মীর আব্দুল আলীম | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চালের বাজারে অস্থিরতা কমছেই না। সরকারও কোনোভাবে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কয়েক দফা শুল্ক কমিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করা হলেও বাজারে এর তেমন কোনোই প্রভাব নেই। এর ফলে অসাধু চাল ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়েছেন কিংবা হচ্ছেন। বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়েনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। বিপুল পরিমাণ চাল সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আমদানি করা হয়েছে। আরও আমদানি করা হচ্ছে। দেশে চালের কোনো রকম সংকট নেই। তাহলে চালের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন?
চালের দাম কমানোর জন্য সরকার নানা রকম উদ্যোগ আমরা লক্ষ করেছি। এর অংশ হিসেবে চালের আমদানি শুল্ক ১৮ শতাংশ কমানো হয়। এতে প্রতি কেজি চালের আমদানি খরচ ছয় টাকা কমেছে। কিন্তু তাতেও খুচরা বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো কয়েক দফায় বেড়েছে। চাল নিয়ে এই অনৈতিক কারসাজিকে হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। স্বেচ্ছাচারী কিংবা অসাধু ব্যবসায়ীরা যা করছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। চালের দাম আরও বাড়তে পারে, এমন গুজবও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাতে চালের দাম বাড়তে থাকে। যারা চাল নিয়ে চালবাজী করছে সরকার তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এভাবে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রশ্ন হলো ‘এখানো কারা চাল নিয়ে খেলছে’? যারা খেলাটা খেলছে তাদের চিহ্নিত করে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন? আমাদের দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে, সব সময় কিছু অসাধু মানুষ, গরিব মানুষকে নিয়ে খেলে। এ খেলা আগে বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে দেশের কোথাও এত বেশি চালের সংকট নেই। তবু এক ধরনের সংকট তৈরির অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। চাল নিয়ে এই অনৈতিক কারসাজিকে ক্ষুদ্রভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।
আসলে এদেশে ভোক্তাস্বার্থ বলে কিছু নেই। যদি থাকতো তাহলে চালের বাজারে এমন অরাজকতা তৈরি হতো না। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এমনিতেই কোনো ছলের অভাব হয় না। চালের ক্ষেত্রেও নানা কারণ তারা সামনে এনেছে। এবার চালের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাজারে মোটা চালই এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। সরু চালের কেজি ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মোটা চালের দাম রেকর্ড ভাঙায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে মোটা চালের কেজি ৪০ টাকা এবং সরু চাল ৫৬ টাকায় উঠেছিল। এদেশ চালের দাম বাড়ে, ডালের দাম বাড়ে, বেগুন, তেল, লবণ, চিনির দাম বাড়ে। কারণে বাড়ে, আকারণে বাড়ে। চালের দাম বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে। টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২.১৯ শতাংশ। মোটা চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরু চালের দামও। চালের বাজার বলতে গেলে বেসামাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বেশি রেড়েছে। সরু চালের দাম বাড়লে উচ্চবিত্তের তেমন সমস্যা হয় না, যত বিপদ বিত্তহীনদের। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৫ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড়ে খাদ্যশক্তির (ক্যালরি) ৬৫ শতাংশ আসে চাল বা ভাত থেকে। আর প্রতিদিন তারা খাবারের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে, তার ২৭ শতাংশ যায় চাল কিনতে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দাম বাড়লে গরিব মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দেয়।
আমরা মনে করি, চালবাজদের ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বিত্তহীনদের স্বার্থে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চালের দাম কমিয়ে আনার দিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন অতি মুনাফাখোর লোভী ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেবল মুখেমুখে নয়, চালের বাজার কারসাজিতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতনির্ভর দেশের মানুষ যদি চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ২৫ মার্চ, ২০১৮, ৭:০১ এএম says : 0
    দেশে চালের দাম খুব একটা বেশি না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের সব পণ্যের দামই বেড়েছে। এর ধারাবাহিতকায় চালের দামও বেড়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে চালের দাম খুব একটা বেশি না। যে মূল্যে বর্তমানে চাল বিক্রি হচ্ছে তা স্বাভাবিক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন