পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
*১০ পদে বিএনপি আর ৪ পদে আওয়ামী লীগ *অর্ধ যুগ ধরে বারের নেতৃত্ব বিএনপির হাতে *টানা ষষ্ঠবারের সম্পাদক হলেন খোকন//
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব ধরে রেখেছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। এবারের (২০১৮-১৯) নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১০টি পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল বিজয়ী হয়েছেন। একটি সহ সম্পাদকসহ ৪টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) প্যানেল। গত বছরও দুটি শীষ পদসহ ৮টি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। এবারও আরো দুটি পদ বেশি জিতে জিতে নিরষ্কুশ বিজয় হলেন জাতীয়বাদীরা। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিরা গতবারের চেয়ে এবার আরো দুটি কম পদে জয় পেয়েছেন। টানা অর্ধ যুগ ধরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শেনের নেতৃত্বে বিএনপি আইনজীবীদের হাতেই।
সরকার দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের নেপথ্যে দেশের রিবাজমান রাজনৈতিক অবস্থায়কেই দায়ী করেছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তারা মতে, আইনজীবীরা আইনে শাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে ভাবেন। যার প্রভাব র্শীষ আদালতের আইনজীবী সমিতির ভোটেও পড়েছে। এদিকে এই বিজয়কে সরকারের নানা জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমতের প্রতিফলন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিজয়ী সভাপতি ও সম্পাদক।
নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি জয়নুল আবেদীন বিএনপি‘র ভাইস চেয়ার্যমান ও তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ এর উপদেস্টা মন্ডলীয় সদস্য প্রবীণ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। এর আগে তিনি একবার সভাপতি হয়েছিলেন। আর জয়নুল আবেদীন গত কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের একজন অনত্যম সদস্য। সম্পাদক পদে বিজয়ী মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি‘র যুগ্ম মহাসচিব। নোয়াখালীর চাটখিল আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি গত কমিটির সম্পাদক ছিলেন। এর আগে টানা ৫ বারের সম্পাদক ছিলেন। অরপদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রাথী শেখ মো. মোরসেদ প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেন। শেখ মো. মোরসেদ একজন ভদ্র মানুষ; আর মাহবুব উদ্দিন খোকন একজন সদালাপি ব্যক্তি হিসেবে আদালত অঙ্গণে পরিচিত। তবে সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নির্বাচনে সভাপতি, সম্পাদকসহ অধিকাংশ ৮টি পদে জিতে নিয়ে সমিতির নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিলেন বিএনপি আইনজীবীরা। ২০১৬ সালের সম্পাদকসহ ৬টি পদে বিএনপিরা বিজয়ী হয়। ২০১৫ সালেও ৮টি পদে বিজয়ী লাভ করে তারা। এবারও ১০টিতে পদে বিজয়ী হয়ে সমিতির নেতৃত্ব ধরে রাখলো বিএনপি-জামায়াত সমির্থিরা। শুক্রবার সকালে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধান এ ওয়াই মশিহুজ্জামানকে ফলাফল ঘোষণা করেন। এবার ভোট পড়েছে ৭৯ শতাংশের বেশি। মোট ৬ হাজার ১৫২ ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৬৫ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১৪টি পদে এবারের এই নির্বাচনে এবার মোট ৩৩ জন প্রতিদ্বিদ্বীতা করেন।
ঘোষিত ফলে দেখা যায়, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ২ হাজার ৩৬৯ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ২হাজার ৩১৫ ভোট। ৫৪ ভোট বেশি পেয়ে সভাপতি বিজয়ী হন। সম্পাদক পদে মাহবুব উদ্দিন খোকন ২ হাজার ৬১৬ ভোট পান। তার প্রতিদ্বদ্বী শেখ মো. মোরসেদ ২ হাজার ১৭৫ ভোট। সম্পাদক পদে ৪৪১ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন।
নীল প্যানেলের অন্যান্য পদে বিজয়ীরা: সহ সভাপতির দুটি পদে জয় পেয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা ও ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া (জামায়াত)। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন নাসরিন আক্তার। সহসম্পাদকের পদে কাজী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। এছাড়াও ৪জন সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন, মাহফুজ বিন ইউসুফ, মো. আহসান উল্লাহ, মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মেহেদি হাসান।
সাদা প্যানেলে বিজয়ীরা: সহসম্পাদকের পদে মো. আবদুর রাজ্জাক। ৩টি সদস্য পদের বিজয়ীরা হলেন, আশরাফুল হাদী, শাহানা পারভীন ও শেখ মো. মাজু মিয়া।
সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন ইউনুছ আলী আকন্দ ও শাহ খসরুজ্জামান। সহ-সভাপতি পদে মো. আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবুল বাসার ও সদস্য হিসেবে তাপস কুমার দাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। তাদের কেউ উল্লেখ যোগ্য ভোট পাননি।
সমিতির নির্বাচনে দুইদিন ব্যাপী ভোটগ্রহণ গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় শেষ হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণ শেষে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গণনা শুরু হয়। আগামী এক বছর এই নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিই দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দেবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে স্বচছতা নিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের জানিযেছেন, এখানে নির্বাচনে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া। এখানে কেন্দ্র দখল নেই, ব্যালট বাক্স ছিন্তাই নেই, পেশী শক্তি নেই, নিজস্ব নির্বাচন কমিশন নেই, পুলিশ বাহীনি নেই, কতিপয় মিডিয়ার বাড়াবাড়ি নেই। ফলে যারা বেশি ভোট পান তারাই বিজয়ী হন।
টানা ষষ্ঠবারের মতো সম্পাদক খোকন: এক বছর বিরতী দিয়ে টানা অর্ধ যুগের বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শেনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত হয়ে আসছে। সভাপতি পদে বিএনপি সমর্থক প্যানেলে খন্দকার মাহবুব হোসেন ৪ বার নির্বাচিত হন। এ প্যানেলে এজে মোহাম্মদ আলী একবার ও জয়নুল আবেদীন এবারসহ ৩ বার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সম্পাদক পদে মাহবুব উদ্দিন খোকন একটানা ৬ বার নির্বাচিত হলেন। ষষ্ঠবারের মতো সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়া নিয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীরা কাজ করতে চায়। কিন্তু সরকার সেটি করতে দিচ্ছে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে সরকার ভুল করেছে, অন্যায় করেছে। আইনজীবীরা সে অন্যায়ের জবাব দিয়েছে বারের নির্বাচনের মাধ্যমে। আমি অনেক খুশি সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে। সাধারণ আইনজীবীরা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও গণতন্ত্র রক্ষায় ভূমিকা রাখার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।