Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে নৃশংস খুন বাড়ছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গুলশানে গারো সস্প্রদায়ের মা ও মেয়ে হত্যায় সন্দেহ ভাগ্নের দিকে, ডিবির পরিদর্শক হত্যাকান্ডে একাধিক টিম মাঠে
রাজধানীতে নৃশংস খুন বাড়ছে। চলতি মাসেই খুন হয়েছেন বেশ কয়েকজন নারী। জড়িতদের অনেকেই অধড়া। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরের গারো স¤প্রদায়ের মা ও মেয়ে নির্মমভাবে খুন হন। ঘাতকরা সুজাত চিরান (৪২)কে কুপিয়ে ও তার মা বেসেথ চিরান (৬৫)কে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুজাতার শরীরে ১৪ ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া গত সোমবার ১৯ মার্চ দিনগত গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডিবির পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দীন নিহত হন। অন্যদিকে রাজধানীতে গত ৮ ও ৯ মার্চ দুদিনের ব্যবধানে চার নারী খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনকেই নিজ বাসায় খুন করা হয়। আরেক জনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতিটি হত্যাকান্ডই ছিল নৃশংস।
মা-মেয়ে খুন
গুলশানের কালাচাঁদপুরে গারো সম্প্রদায়ের বেছেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাত চিরান (৪০) হত্যার পিছনে পুলিশের সন্দেহের আঙ্গুল সুজাতার ভাগ্নে সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুর দিকে। হত্যার দিন গত মঙ্গলবার বিকাল ৪ টার দিকে সঞ্জীব ও তার তিন বন্ধুসহ কালাচাঁদপুরের ক-২৫ নম্বর বাড়ির চার তলায় বাসায় প্রবেশ করে। প্রবেশের দুই ঘন্টা পর তারা বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তারা বের হওয়ার পর সুজাতের মেয়ের স্বামী পিলেস্তার ওই বাসায় গিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়া দেখতে পান। দরজা খুলেই ঘরে লাশ পড়ে ছিল। এ ঘটনায় গতকাল সুজাতের স্বামী আশীষ মানখিন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুকে আসামী করা হয়েছে।
গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যাকান্ডে জড়িত বলে আমরা ধারনা করছি। তিনি আরো বলেন, বাড়ির নিচতলায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বিকাল চারটার দিকে সুজাতের বোনের ছেলে সঞ্জীব তিন ব্যক্তিসহ বাসায় এসেছিলেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর তারা বেরিয়ে যায়। এরপর সুজাতের বড় মেয়ে মায়াবীর স্বামী পিলেস্তা সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই বাসায় আসেন। সে সময় তিনি দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। পরে ভেতরে ঢুকে তিনি সুজাত ও তার মা বেছেথ চিরানের মরদেহ দেখতে পান।
সুজাতের স্বামী আশীষ মানখিন সাংবাদিকদের বলেন, সুজাতের বড় বোনের ছেলে সঞ্জীব চিরানের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার মরিয়মনগর গ্রামে। বেকার যুবক তার খালার কাছ থেকে টাকা পয়সা দাবি করছিল। এটা থেকেই হয়তো সঞ্জীব এই খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ সমাহিত করার জন্য ময়মনসিংহের হালুঘাটের জয়রামপুর চন্দ্রাঘাট গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সুজাত চিরানের মেয়ে মায়াবী চিরান বলেন, আমার মা ও নানীর খুনী যারাই হোক, তাকে গ্রেফতার করা হোক। আমরা ধারণা করছি এই খুনের পিছনে আমার বড় খালার ছেলে সঞ্জীব জড়িত থাকতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রদীপ কুমার বিশ^াস বলেন, সুজাতা চিরানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার গলাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ১৪ টি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন। তার মা বেছেথ চিরানকে শ^াসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ টিম হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। আসামী সঞ্জীবকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে।
পরিদর্শক জালাল হত্যাকান্ড
মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় দুই পুলিশ সার্জেন্টের চুরি করা নাইন এমএম পিস্তল দিয়েই ডিবির দলের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই দুটি পিস্তল উদ্ধার করতেই গত সোমবার রাতে পীরেরবাগের ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলি পরিদর্শক জালাল উদ্দিন নিহত হন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোখলেছুর রহমান বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছিল। পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরতে ডিবির একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ২৯৯/৯/১/এ নম্বর বাসার চতুর্থ তলায় বসবাসরত দুই সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার সরকারি দুটি অস্ত্র চুরি হয়। বাসার পেছনের গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে দুটি অস্ত্র এবং দুটি মোবাইল নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরদিন এ ঘটনায় মিরপুর থানায় মামলা দায়ের হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের পল্লবী জোনাল টিম অস্ত্র দুটি উদ্ধারে অনুসন্ধান শুরু করে।
মিরপুর থানার এসআই ইস্কান্দার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। মামলার প্রস্তুতি চলছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। থানা ও ডিবি পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ায় ২৮৮ নম্বর বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আমেনা বেগম (৬৫) নামে এক গৃহকর্ত্রীকে। বাসাভাড়া নেয়ার কথা বলে খুনি ওই বাড়িতে প্রবেশ করেছিল বলে নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানিয়েছে। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ছেলে বাবু আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ ঘটনার আগের দিন ৭ মার্চ বুধবার রাজধানীর দারুসসালাম থানার বসুপাড়ার ডি-বøকের ৬৫/৬/১ নম্বর বাড়ির পেছনের খাল থেকে অজ্ঞাত এক নারীর (২৫) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর পরিচয় এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাকে বাড়িতে খুন করে লাশ বস্তায় ভরে খালে ফেলে দেয়া হয়। দারুসসালাম থানার ওসি তদন্ত ফারুক উল আলম বলেন, এখনও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। গত ৭ মার্চ কদমতলী থানার শনিরআখড়া এলাকার নিজ বাসা থেকে শিউলি (২৮) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে নিহতের স্বামী মো. রিপন জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে। মামলাটি তদন্ত করছে কদমতলী থানা পুলিশ।
কদমতলী থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, ঘটনার পর শিউলির সন্তানরা নানার বাড়ি থেকে বাসায় এসে মায়ের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। এরপর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের স্বামী রিপন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গত ৬ মার্চ দারুসসালাম এলাকার টোলারবাগের ৩১২/৪ নম্বর বাসার পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বেগম (৪০) নামে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরিয়ম ঢাকা নার্সিং কলেজের হাউসকিপার ছিলেন। তার স্বামী আব্দুল হান্নান নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের হিসাবরক্ষক। ঘটনার সময় তার ছেলেমেয়েরা কেউ বাসায় ছিলেন না। এই ঘটনায় নিহতের ভাই রেজাউল করিম বাদী হয়ে দারুসসালাম থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর নিহতের স্বামী আব্দুল হান্নানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ