পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশায় ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এই ত্রুটি নিয়েই গত বৃহস্পতিবার ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। কেন ত্রুটি রয়ে গেল, এর সাথে কারা জড়িত, তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিন সদস্যের একটি সংসদীয় সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাধারণত ফ্লাইওভারে উঠার রাস্তা বেশি ঢালু হয়, যাতে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে ফ্লাইওভারে উঠতে পারে। অন্যদিকে ফ্লাইওভার থেকে নামার রাস্তা কম ঢালু হয়, যাতে গাড়ি গতি নিয়ন্ত্রণ করে নেমে যেতে পারে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটা। এতে উঠার রাস্তা খাড়া আর নামার রাস্তা বেশি ঢালু। এর ফলে ফ্লাইওভারের মুখে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফ্লাইওভারটির নকশা করানোর কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটি তার দেশের নিয়ম অনুযায়ী নকশা প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ গাড়ি চালানো হয় বাঁ হাতে বা লেফট হ্যান্ডে। ফলে তাদের চলতে হয় রাস্তার ডান পাশ দিয়ে। আমাদের দেশের সব গাড়ি ডান হাত বা রাইট হ্যান্ডে চালানো হয়। চলতে হয় রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে। দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি চলাচলের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের দেশের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্যম্ভাবীভাবেই এতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা দেখা দেবে এবং এটাই স্বাভাবিক। অথচ বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই এই ভুল নকশায় ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সতর্ক করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ত্রুটি নিয়ে ফ্লাইওভার দাঁড়িয়ে গেছে।
যান চলাচলের জন্য ফ্লাইওভারের মতো একটি স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে মারাত্মক ত্রুটি থাকা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এটি এখন না ভেঙে ফেলা যাবে, না নতুন করে নির্মাণ করা যাবে। এলজিইডি’র অধীনে নির্মিত এবং এর দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের এই ভুলের মাশুল এখন কে দেবে? তদন্ত কমিটি করা হয়েছে ভাল কথা। তবে এতে যদি দোষী ব্যক্তিদের শাস্তিও দেয়া হয়, তাহলে কি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? নাকি এর ত্রুটি মুক্তকরণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে? হয়তো এর কোনোটিই হবে না। অতীতেও আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নির্মিত বনানী-স্টাফ রোড ফ্লাইওভার ছাড়া রাজধানীতে নির্মিত অন্য ফ্লাইওভারগুলোর কোনোটিই যথাযথভাবে নির্মিত হয়নি। ত্রুটি নিয়েই সেগুলো দাঁড়িয়ে আছে। খিলগাঁও ফ্লাইওভারে তো একবার ফাটলই দেখা দেয়। মহাখালি ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও নকশায় ত্রুটির অভিযোগ ওঠে। এয়ারপোর্টের নিকুঞ্জে নির্মিত ফ্লাইওভার ত্রুটিযুক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ, এ কথা উদ্বোধনের পরপরই বলা হয়েছে। হানিফ ফ্লাইওভারের ত্রুটি নিয়েও ইতোমধ্যে কথা উঠেছে। এসব সমস্যার কি সমাধান হয়েছে? নকশারও কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি, সমস্যারও সমাধান হয়নি। যাদের কারণে এসব ত্রুটিপূর্ণ কাজ হয়েছে, তাদের কারও বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উল্টো বিশেষজ্ঞদের কথা উড়িয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবই ঠিক আছে। এখন এসব ত্রুটির কারণে যানজট সৃষ্টি হলে অজুহাতের কোনো শেষ থাকবে না। দুর্ঘটনা ঘটলে বলা হবে, এতে কারো হাত নেই। ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণের সময় শতভাগ ত্রুটিমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি যে এর জন্য দায়ী, তা স্বীকার করা হবে না। আমাদের কথা হচ্ছে, যাতায়াতের সুবিধার জন্য নির্মিত ফ্লাইওভার যদি সুবিধার পরিবর্তে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে এমন ফ্লাইওভার নির্মাণের চেয়ে না নির্মাণ করাই ভালো। নির্মাণ করতে হলে পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত এবং এর সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে নির্মাণ করা হোক। ইতোমধ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করছেন। পরিকল্পনা ত্রুটিজনিত কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত যে যানজটের সৃষ্টি হয়, তার জন্য মহাখালি ফ্লাইওভারকে তারা দায়ী করছেন। একই ঘটনা এখন ঘটছে সদ্য খুলে দেয়া মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে। আমরা দেখেছি, নির্মাণ ত্রুটিজনিত কারণে কী ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে। গত বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী ভারতের কলকাতায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ধসে অনেক লোক নিহত ও আহত হয়েছে। আমাদের রাজধানীতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারে যদি এ ধরনের ত্রুটি থেকে যায়, তাহলে কী অবস্থা হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। তার উপর যদি দেশের যান চলাচলের প্রচলিত ধরণ অনুযায়ী নির্মাণ না করা হয়, তবে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যে থেকে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
উন্নত বিশ্ব ফ্লাইওভার নির্মাণের ধারণা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে। তারা বিকল্প হিসেবে আন্ডার গ্রাউন্ড বা অন্য পন্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। আমাদের এখানে যে এ ধরনের চিন্তাভাবনা করা যায় না, তা নয়। তবে যেহেতু জায়গার তুলনায় যানবাহন অনেকগুণ বেশি, তাই যাতায়াতকে যানজটমুক্ত করে চলাচল সহজ করার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এতে সুপরিকল্পনা, নিñিদ্র নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয়তা শতভাগ পূরণ করার বিষয়গুলো সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। দুঃখের বিষয়, আমরা তা দেখছি না। ফলে ফ্লাইওভারগুলোও অনেকটা অপরিকল্পনার শিকার হচ্ছে। এর ফলে যদি ফ্লাইওভার আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ বা নিছক স্থাপত্যকর্মে পরিণত হয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা মনে করি, এসব আশঙ্কা যথাযথভাবে বিবেচনা করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা অপরিহার্য। নির্মাণের শুরুতে বিশিষ্ট নগরবিদরা যদি ত্রুটি নিয়ে কথা বলেন, তবে সেগুলো আমলে নিয়ে তা সংশোধন করা প্রয়োজন। উন্নয়ন কাজ দেখানো এবং ক্রেডিট নেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার মানসিকতা থেকেও সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত পরিকল্পনা দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করা এবং দুর্ঘটনা ও সমস্যার শঙ্কা জিইয়ে রাখার চেয়ে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে ত্রুটিহীনভাবে কাজ শেষ করার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। তা নাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় সরকারের উপরই বর্তাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।