Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপাল ট্রাজেডি: সাংবাদিক ফয়সালের লাশ দাফন

বাকরুদ্ধ পিতা-মাতা

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা : নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক ফয়সাল আহম্মেদের লাশ গতকাল সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার দক্ষিণ ডামড্যা গ্রামে নিজ বাড়ী সর্দার গার্ডেনে দাফন করা হয়েছে। সকাল ১১ টায় ডামুড্যা কলেজ মাঠে নিহত ফয়সালের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। এদিকে তাঁর লাশ একনজর দেখতে শত শত লোক ভিড় জমায় গ্রামের বাড়িতে। সাংবাদিক ফয়সালের লাশ গতকাল সকালে নিজ বাড়িতে আসবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের বাড়িতে শত শত লোক ভিড় জমায়। লাশবাহী গাড়ি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে তার পিতা মাতা আত্মীয়-স্বজন ফয়সালের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আহাজারি করতে থাকেন। ফয়সালের বিভিন্ন স্মৃতি উল্লেখ করে বিলাপ করতে থাকে। এসময় তার পিতা-মাতা সজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। আগুনে পুড়ে মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে যাওয়ায় বঙ্খুলে লাশ দেখানো হয়নি কাউকে। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিহত ফয়সালের পিতা-মাতাকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করেন। এর আগে নিহত সাংবাদিক ফয়সালের বাড়িতে তাঁর স্বজনদের শান্তনা দিতে আসেন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দেসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। সাংবাদিক ফয়সালের অকাল মৃত্যুতে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তার পিতা সামসুদ্দিন সরদার। পরিবারের সদস্যরা ফয়সালের মৃত্যুকে যেন কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার সামসুদ্দিন সরদার ও মোসাম্মৎ সামসুন্নাহার বেগমের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ (২৯)। পাঁচ ভাই বোনের মধ্য সে দ্বিতীয়। ২০০৪ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকা তিতুমীর কলেজে এইচএসসি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স সম্পন্ন করে। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত ফয়সাল বৈশাখি টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিল। ঢাকার ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে বড় বোন শিউলী আক্তারের বাসায় থাকতো সে। গ্রামের বাড়িতে খুব কম আসতো ফয়সাল। নেপালে ঘুরতে যাওয়ার কথা কাউকে বলেনি ফয়সাল। অফিস, বাসা, আত্মীয় স্বজন কাউকে না জানিয়েই নেপাল গিয়েছিল ফয়সাল। ঢাকায় বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বড় বোন শিউলীকে বলেছিল ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। এটাই পরিবারের কারো সাথে ফয়সালের শেষ কথা ছিল।
সর্বশেষ গত ৮/৯ মাস আগে পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শরীয়তপুর এসেছিল সে। অফিস থেকে ৫ দিনের ছুটি নিলেও নেপাল যাওয়ার বিষয়ে অফিসকেও অবহিত করেনি। পরিবারের কেউ জানে না ফয়সাল নেপাল গিয়েছে। মায়ের হাতে রান্না করা গরুর মাংসের খিচুড়ি খুবই পছন্দ ছিল ফয়সালের। মা সামসুন্নাহার বেগম মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরে পেলে সেই খিচুড়ির কথা মনে করেই আহাজারি করছেন। ফয়সালের বাবা সামসুদ্দিন সরদার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কোন কিছু বলার ভাষা নেই আমার।

মাহমুদুর রহমানের দাফন সম্পন্ন
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজ দূর্ঘটনায় নিহত ফরিদপুরের মাহমুদুর রহমানের চতুর্থ জানাজার নামাজ শেষে লস্কারদিয়া গ্রামের দানেশমান বাগদাদী মাজার শরীফ পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় জেলার নগরকান্দা উপজেলার লস্কারদিয়া আতিকুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের তার শেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহিনুজ্জামান, ইউএনও বদরুযোদা সুমন, এস এম জালালদ্দিনসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। ইমামতি করেন মাওলানা মো. কামরুজ্জামান। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার সময় লাশ বাহী এ্যাম্বুলেন্স তার নিজ বাড়ী লস্কারদিয়া পৌছলে সেখানে শত শত মানুষ তাকে দেখার জন্য ছুটে আছে। সকাল ৯টার সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যায়। তিনি তার পরিবারকে তাৎক্ষনিক ভাবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও ৫০হাজার টাকা প্রদান করা হয় বলে জানান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুযোদা সুমন। উল্লেখ্য, নিহত মাহমুদুর রহমান রানার গ্রæপের তেজগাঁও অফিসের হেড অব সার্ভিস পদে কর্মরত ছিলেন। অফিসের কাজে সেদিন ঢাকা থেকে নেপালের যাচ্ছিল তিনি। তাঁর পিতার নাম মশিউর রহমান। সে সাত বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর নাম সানজিদা বেগম ঝর্না।

তাহিয়া তানভিন শশীর দাফন সম্পন্ন
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : নেপালের কাঠমুন্ঠু আন্তর্জাতিক ত্রিভুবন বিমান বন্দরে ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তাহিয়া তানভিন শশীর দাফন স্থানীয় মানিকগঞ্জের সেওতা কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে। বাদ যোহর সরকারী দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে নেপালে ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মানিকগঞ্জের তাহিয়া তানভিন শশীর লাশ গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় পৌর এলাকার লঞ্চঘাট এলাকায় নিজ বাড়িতে আনা হয়। এসময় নিহত শশীকে এক নজর দেখতে বাড়িতে শতশত নারী, পুরুষ শিশু কিশোর ভিড় করে। এসময় এক হদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। আগত দর্শনার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা.বাবা সহ স্বজনেরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুরে যোহরের নামায শেষে মানিকগঞ্জ সরকারী দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে শশীর নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ, আইনজীবী, শিক্ষক, স্কুল কলেজের ছাত্ররা অংশগ্রহন করেন। জানাজায় মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ নাজমুছ সাতাত সেলিম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন, শশীর পিতা রেজা মোঃ জামানসহ তার আত্মীয় স্বজন উপস্থিত ছিলেন। জানাজায় ইমামতি করেন ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার মওলানা মোঃ মুছা।
এরপর পৌর এলাকার সেওতা কবস্থানে তার দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে শশীর স্বামী ডা.রেজায়ানুল হক শাওন বর্তমান সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

নোয়াখালীর ৩ জনের দাফন সম্পন্ন
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : নেপালে ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্থের ঘটনায় নিহত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার একই পরিবারের তিন জনের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নিহতদের লাশ দাফন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার কেশারখিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ভোর ৫টার দিকে নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়ীতে এসে পৌঁছে। নিহতরা হলো, সোনাইমুড়ী উপজেলার কেশারখিল গ্রামের সাতানি ভ‚ঁইয়া বাড়ীর মৃত জহিরুল হকের পুত্র রফিকুজ্জামান রিমু, রফিকুজ্জামানের স্ত্রী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’এর সমন্বয়ক সানজিদা হক বিপাশা এবং তাদের ৭ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র অনিরুদ্ধ। জানা যায়, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন’এর সম্পাদক ডা. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণ করে। উল্লেখ্য, নিহত রফিকুজ্জামান রিমু পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার ধানমন্ডির কলাবাগানে বসবাস করতেন। রফিকুজ্জামান রিমু ও সানজিদা হক বিপাশা দু’জনই পড়াশোনা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রিমু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতেন। কর্মরত ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। আর সানজিদা সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’এ।

আখতারা বেগমের দাফন সম্পন্ন
রাজশাহী ব্যুরো : নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্সের প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত রাজশাহীর মহানগরীর উপশহর এলাকার আখতারা বেগমের জানাজা নামাজের পর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে নগরীর গোরহাঙ্গা গোরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হন।
এর আগে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে সকাল ৯টা ২০মিনিটে লাশ উপশহর ক্রীড়া সংঘের মাঠে পৌঁছায়। এখানে শেষ জানাজার নামাজে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ অংশ নেয়। এসময় শোকাবহ হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। সবাই কফিন ছুঁয়ে শেষ বিদায় জানান তাকে। জানাজার নামাজে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এর আগে নিহত ২৩ জনের লাশের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজনের লাশ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কার্গো প্লেনে নেপাল থেকে সোমবার দুপুরে দেশে ফিরে। এর মধ্যে কেবল আখতারা বেগমের লাশ দাফনের জন্য রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া বাকি চার জনের মধ্যে তিনজনের লাশ ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। একজনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।



 

Show all comments
  • EMRAN KAYSAR ২১ মার্চ, ২০১৮, ১১:৫৮ এএম says : 0
    allah sobaike JANNATUL FERDAUS nosib koruk.nihoto poribarer sobaike dhorjo dharon korar towfik din,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেপাল

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ