পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
’৯০-এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা বন্ধু মীর সালাউদ্দিন তরুন কর্মসুত্রে থাকেন অষ্ট্রিয়ায় ভিয়েনায়। ছুটিতে এসে কথা প্রসঙ্গে জানালেন, সেখানে ঘরে ঘরে কুকুর পোষা হয়। সকাল-বিকেল মানুষ ঘুরতে বের হন কুকুর নিয়ে। ঘুরতে গিয়ে রাস্তায়-পার্কে কুকুর মল ত্যাগ করলে টিস্যু দিয়ে সে বিষ্ঠা তুলে ব্যাগে রাখেন। ময়লা ফেলার নিদৃষ্ট স্থানে গিয়ে তা ফেলে দেন। এমনকি ময়লা ফেলার নিদৃষ্ট যায়গা না পেলে কুকুরের মল ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে যান। সহকর্মী নুরুল ইসলাম দু’তিন বছর আগে আমেরিকা গিয়েছিলেন। ছিলেন মাস খানেক। তিনিও প্রায়ই আমেরিকার গল্প করতে গিয়ে ওয়াশিংটন শহরের পার্কে কুকুরের মল ত্যাগ ও সেই বিষ্ঠা মালিক টিস্যু দিয়ে তুলে ব্যাগে রাখার দৃশ্যের গল্প শোনান। রাস্তা-পার্ক পরিস্কার রাখতে ওই সব শহরের নাগরিকরা নিজেরাই এটা করে থাকেন।
ওই সব দেশের আইন নিজস্ব গতিতে যেমন চলে; তেমনি মানুষও আইন কানুন মেনে চলতে অভ্যস্ত। শুধু তাই নয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাািশ নাগরিকরা শহর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ‘নাগরিক দায়িত’¡ পালন করে থাকেন। প্রশ্ন হলো আমরা কী কখনো নাগরিক দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি? নাকি নিজেরা অন্যায়-অনিয়ম করছি; পথ চলতে নিত্য আইন অমান্য করছি, আর দায় চাপিয়ে দিচ্ছি হয় পুলিশের ওপর নয়তো সিটি কর্পোরেশনের ওপর!
প্রশ্ন হলো শহর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব কী শুধু সিটি কর্পোরেশনের? ট্রাফিক আইন মান্য করা বা মানতে বাধ্য করার দায়িত্ব কী শুধু ট্রাফিক পুলিশের? ঘর-বাড়ি-বিল্ডিং নির্মাণের নিয়ম দেখভাল করার দায়িত্ব কী শুধু রাজউকের? ওয়াসার পানি সাশ্রয়, গ্যাসের মিতব্যয়ী ব্যবহার, বিদ্যুতের অপচয় রোধ করার দায়িত্ব কী শুধু সংশ্লিষ্ট বিভাগের? নাগরিক হিসেবে আমাদের কী কোনো দায়িত্ব নেই? দায়িত্ব থাকলে বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুণ তো কোন দায়িত্বটা পালন করছি? জাতিসংঘের খাতায় আমরা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠেছি। নিজেদের চিন্তা-চেতনা ও মনকে কী উন্নত-পরিচ্ছন্ন করতে পেরেছি? আসুন না সবাই নিজেদের বদলে ফেলি। মানসিকতার পরিবর্তন করে নিজে ভাল থাকা এবং অন্যেরাও ভাল থাকুক চিন্তা মাথায় এনে নিজ নিজ নাগরিক দায়িত্ব পালন করলে এই ঢাকা শহরকেও করতে পারি পরিচ্ছন্ন তিলোত্তমা শহর। যান্ত্রিক ইট-পাথরের ঘনবসতির ঢাকায় সবাই নিঃশ্বাসে নিতে পারি নির্মল বাতাস। আসুন আমরা সবাই বদলে যাই। আমি যদি বদলে যাই, বদলে যাবে তুমি, তোমরা সবাই। এভাবেই একদিন বদলাবে পাশের লোকজন। বদলে যাবে গোটা ঢাকা শহর। ঢাকাকে বলা হয় যানজটের শহর। নিত্যদিনের দৃশ্য মাইলের পর মাইল ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহন। ট্রাফিকের কোনো সিস্টেম কাজ করে না। ট্রাফিক আইন অমান্য করা আমাদের মজ্জাগত স্বভাব হয়ে গেছে। প্রভাবশালী হোমরা-চোমরা হলে তো কথাই নেই। যানজট এবং ট্রাফিক জ্যাম দেখলেই উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে দেই। এই উল্টো পথে গাড়ী চলাচল বন্ধে তারকাটার বেড়িয়ার বসানো হয়েছিল। দেখা গেল প্রভাবশালী ব্যক্তিই শুধু নন; উল্টো পথে চলতে গিয়ে মন্ত্রী-বিচারপতিদের গাড়িও সেখান আটকে গেছে। এমনকি আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মোটর সাইকেল উল্টো পথে চলার দৃশ্য নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনের কয়েক গজ পর পর ময়লা ফেলার ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘আমাকে ব্যবহার করুন’। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এই ডাষ্টবিনের গায়ে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের নাম বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে। ডাস্টবিনের গায়ে মেয়রের নাম দেখে টিটকারী করা হলেও অনেক পথচারীকে দেখা যায় সিগারেটের অংশ-কলার খোসা ও অন্যান্য ময়লা দু’চার হাত দূরের ডাষ্টবিনে না ফেলে রাস্তায় ফেলছেন। প্রশ্ন হলো নগর পরিস্কার পরিচ্ছন রাখার দায়িত্ব কী শুধু সিটি কর্পোরেশনের? আমার সিটিকে আমি যদি পরিচ্ছন্ন দেখতে চাই আগে আমাকে বদলাতে হবে, অতপর পরিবার। রাজধানী ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তার পথচারী পারাপারে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে ওভার ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি পথচারীদের সুবিধার জন্য বিমানবন্দর ও বনানীতে ওভারব্রীজে স্কেলেটার বসানো হয়েছে। তারপরও দেখা যায় পথচারীদের অনেকেই নীচ দিয়ে পায়ে হেটে রাস্তা পাড় হচ্ছেন। রাস্তার মাঝখানের লোহার রডের গ্রীল টপকাতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। রাস্তায় দ্রæতযান বাস চলাচল করছে অথচ ঝুকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে পথচারী। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা।
হাতিরঝিলকে এখন বলা হয় রাজধানী ঢাকার ফুসফুস। নির্মল হাওয়া খেতে মানুষ সেখানে সকাল-বিকাল ছুটে যায়। কিন্তু হাতিরঝিল আগে যে ঝকঝকে তকতকে পরিচ্ছন্ন ছিল এখন সে অবস্থা আছে কী? হাতিরঝিলকে এখন বলা হয় দূর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। কূটনৈতিক পল্লী বলেন আর অভিজাত এলাকাই বলেন বারীধারা-গুলশান-বনানী বিশেষ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। আবাসিক এলাকাটি গড়ে তোলার সময় খনন করা হয় গুলশান লেক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা লেকটি পানি পরিস্কার রাখা এবং নয়নাভিরাম দৃশ্য অটুট রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ্যের চেস্টার অন্ত নেই। লেকের পাড় ঘেষে ফুলের বাগান, পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ সেই লেকে পানির দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাটাচলা করা যায় না। কোথাও কোথাও লেকের পাড়কে বানানো হয়েছে পাবলিক ভাগাড়। ধানমন্ডি লেকেরও প্রায় অভিন্ন অবস্থা। চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশে যে লেক সেটাও কী অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেনি? প্রশ্ন হলো রাজধানীর এই লেকগুলোর বেহাল অবস্থার জন্য কী শুধু কর্তৃপক্ষই দায়ী? নাগরিকদের কী কোনো দায় নেই? আমেরিকান ও অষ্ট্রিয়ার মানুষ যদি পোষা কুকুরের বিষ্ঠা পার্ক থেকে তুলে ব্যাগে নিয়ে দুই ঘন্টা রেখে নিদৃষ্ট ডাষ্টবিনে ফেলতে পারেন; তাহলে আমরা পারি না কেন? জাতি হিসেবে আমরা কী সভ্য নই? মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী ওঠানামা করে। বিমানবন্দরটি ২৪ ঘন্টাই থাকে ঝকঝকে। কারণ শুধু কর্তৃপক্ষই সব দায়িত্ব পালন করে না; যারা সেখানে চলাচল করেন তারা নিজেরাই নাগরিক দায়িত্ব পালন করেন। অথচ আমাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্র দেখুন। অনিয়ম, অপরিচ্ছন্ন, অব্যবস্থাই যেন আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের প্রধান ব্যবস্থা। আমরা নিজেরা যদি বদলে না যাই; মানসিকতার পরিবর্তন না করি তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে অব্যবস্থাপনা-নোংরা বিমানবন্দরের তকমা পাবে।
রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় বায়ুদুষণ আর জঞ্জালের শহর। বিশ্বের বায়ুদূষণ ও বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর অন্যমত হলো এই ঢাকা। শহরের এই পরিণতি কী এক মাস বা এক বছরে হয়েছে? এই দায় কী নাগরিকরা এড়াতে পারি? হাতিরঝিলে যে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে তা কী সুস্থ চিন্তায় হয়েছে? রাস্তার পাশে বিল্ডিং এবং বাড়িঘর নির্মাণের সময় রাস্তার কিছু অংশ দখল করা আমাদের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ, রাস্তার এখানে সেখানে ও কোনা-কাঞ্চিতে ময়লা আবর্জনা-রাবিশ ফেলা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। উল্টো পথে চলাচল বেআইনী অথচ দু’দশ মিনিট সময় বাঁচানোর জন্য ইচ্ছে করেই বেআইনী পথে চলাচল করি। উল্টোপথে একটি যানের চলাচলের জন্য ১০ যানবাহনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই মশা! মশা মারতে ব্যর্থ সিটি কর্পোরেশন গাপ্পি মাছের গল্প নিয়ে থাকুক। আসুন না আমরা সবাই নিজেদের ঘরবাড়ি ফুলের টব, পানির পাত্র ও আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। সবাই নিজেদের পাড়া মহল্লার পানিবদ্ধতা দূর করে নর্দমা পরিস্কার রাখলে মশার ‘প্রজননক্ষেত্র’ থাকবে না। কমবে মশার উপদ্রব।
এই যে আমাদের শিক্ষিত নাগরিক সমাজ। যাদের সুশীল সমাজ বলা হয়। সমাজের পরিচিত এবং উচ্চশিক্ষিত এই মানুষগুলো কী নিজ শহরকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে কোনো ভূমিকা রাখার চেস্টা করেছেন? প্রাণের শহর ঢাকাকে বাঁচাতে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন? ব্যাক্তিস্বার্থে দলাদলি, দলবাজি, এনজিওবাজী, প্রগতিশীলতার নামে প্রতিবেশি দেশের অপসংস্কৃতির চর্চা ছাড়া এই সুশীলরা কী বিপন্ন নাগরিকদের কোনো উপকারে আসছেন? ইচ্ছে করলে আমরাও নিয়ম মানতে পারি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গুলিস্তান ফ্লাইওভার ও মসজিদের মাঝামাঝি রাস্তায় নারায়ণগঞ্জের বাসের জন্য টিকেট কেটে শত শত যাত্রীকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শৃংখলাবদ্ধভাবে যাত্রীদের এই দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য বলে দেয় কে বলে আমরা পারি না! আমরাও পারি নিয়ম শৃংখলা মানতে। অন্যের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আসুন আমরা সবাই বদলে যাই। নিজেদের শহর নিজেরাই গড়ি। আমি নিজে বদলালে বদলে যাবে প্রতিবেশি, বদলে যাবে শহরের পরিবেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।