পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের বায়ুদূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। ইউএস এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে। বায়ুদূষণের মাত্রার দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ১৯৫। বায়ুদূষিত শহরের সূচকে একেবারে শীর্ষে রয়েছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। তার স্কোর ২০৮। ক্লিন এয়ার এ্যাক্ট অনুযায়ী, পাঁচটি বায়ুদূষণকারী পদার্থের উপস্থিতিকে মানদন্ড হিসাবে ধরে এ ইনডেক্স তৈরি হয়। পদার্থগুলো হলো: গ্রাউন্ড লেভেল ওজন, পার্টিকুলেট, কার্বন মনোঅক্সসাইড সালফার ডাইঅক্সসাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সসাইড। সাধারণত দূষণসূচকে কোনো এলাকার স্কোর যদি ৩০০’র বেশী হয় তবে সেখানকার বাতাস মারাত্মক দূষিত বলে বিবেচিত হয়। ১৫০-২০০ স্কোরকে অস্বাস্থ্যকর বলে গণ্য হয়। আর স্কোর ৫০’র নিচে হলে সেখানকার বাতাসকে ভালো মানের বলে বিবেচনা করা হয়। এই হিসাবে ঢাকার বাতাস অসাস্থ্যকর। ঢাকার বাতাস যে অস্বাস্থ্যকর, ঝূঁকিপূর্ণ তা এই প্রথম চিহ্নিত হলো না, ইতোপূর্বে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা-সমীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে এটা ধরা পড়েছে। ঢাকার বায়ুদূষণের কারণগুলো অচিহ্নিত নয়। যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের ফলে সৃষ্ট ধুলা এবং ঢাকার আশপাশের ইটভাটা থেকে উদগত ধোঁয়া বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী। পথেঘাটে পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনাও বায়ুদূষণের জন্য কম দায়ী নয়। এই শহরে প্রয়োজনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশী। এসব যানবাহনের একটা বড় অংশ আনফিট। যানবাহন থেকে উদগত ধোঁয়া প্রতিনিয়ত বাতাসে মিশছে। সব সময় যানজট লেগে থাকার কারণে কালো ধোঁয়া অধিক পরিমাণে মিশছে বাতাসে। অন্যদিকে আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় রয়েছে অসংখ্য বৈধ-অবৈধ শিল্পকারখানা। শিল্প কারখানা থেকে কালো ধোঁয়াও বাতাসে মিশছে। অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজের ফলে ঢাকা বছরের একটা সময় ধুলিময় শহরে পরিণত হয়। এই ধুলার সঙ্গে ক্ষুদ্র বস্তুকণা বাতাসে মিশে বাতাসকে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার অনুপযুক্ত করে ফেলে। দক্ষিণ এশিয়ায় ধুলাবালির শহর হিসাবে ঢাকার অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। ২০১৬ সালে নরওয়ের ইন্সটিটিউট অব এয়ার রিসার্চের মাধ্যমে করা এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার চারপাশে এক হাজার ইটভাটা ব্যাপক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ করছে। এসব ইটভাটা বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী। এই সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লা-আবর্জনা থেকেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বায়ুদূষিত হচ্ছে। বায়ুদূষণের চিহ্নিত সকল উপাদানই ঢাকায় বাতাসে উচ্চমাত্রায় বিদ্যমান। এর অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হিসাবে শ্বাসকষ্টজনিত রোগব্যাধি, বিশেষ করে অ্যাজমার প্রকোপ অত্যন্ত বেশী। এতে আক্রান্তের মধ্যে শিশুদের সংখ্যায়ই সবচেয়ে বেশি। ফুসফুসের রোগব্যাধির পাশাপাশি হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যাও বাড়াছে।
শুধু বায়ুদূষণই নয়, শব্দদূষণ, মাটি ও পানি দূষণ, বর্জ্যদূষণসহ সব ধরনের দূষণেরই ভয়াবহ শিকার ঢাকা। বস্তুত এই শহর দূষিত ও বসবাসের অনুপযুক্ত শহর হয়ে উঠেছে। একে বলা হয়, বস্তির শহর, বর্জ্য-আবর্জনার শহর, যানজটের শহর, অতিরিক্ত জনসংখ্যার শহর, অনিরাপদ শহর ইত্যাদি। অপরিকল্পিতভাবে এই শহর গড়ে উঠেছে এবং উঠছে। শহরের পরিধি ও লোকসংখ্যানুপাতে নাগরিক সুবিধা বাড়েনি বা বাড়ছে না। এজন্য নাগরিকদের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার কোনো শেষ নেই। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রেটিংয়ে ঢাকার অবস্থান যেরকম নির্ণীত হয়েছে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহর, এ অভিধা এ শহরের লালাটে লেপটে আছে বছরের পর ধরে। দেশ যেমনই হোক, তার রাজধানী থাকে সাজানো-গোছানো, আকর্ষনীয়। চলাচল, বসবাস, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সেখানে একটা উচ্চমান পরিদৃষ্ট হয়। অথচ শত শত বছরের প্রাচীন এই রাজধানী শহর এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নেতিবাচক যা কিছু আছে, সবই রয়েছে এ শহরে। রাজধানীকে দেশের মুখমন্ডলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। মুখের সৌন্দর্য দেখেই বিচার হয় অন্যান্য অঙ্গের, দেহের। ঢাকাকে দেখে মনে হয় না, এটা কোনো রাজধানী শহর। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষনায় ঢাকাকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এত ব্যয়বহুল শহর হলেও এখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত সীমিত। কীভাবে এটা সম্ভব হতে পারে? নাগরিকদের সেবা ও সুবিধা পাওয়ার জন্য যে বিপুল অর্থ গুণতে হয়, তা তাহলে যায় কোথায়?
ঢাকার মশা এবার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মশার উপস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে, একথা তারা জানতে পেরেছে মিডিয়ার মাধ্যমে। দুই সিটি কর্পোরেশন মশা দমন ও নিধনের জন্য মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দ করে প্রতি বছর। এই অর্থের একটা বড় অংশই নয়-ছয় হয়ে যায়। মশা দমনে নামকাওয়াস্তে কিছু কর্মসূচী নেয়া হয়। তা কোনো কাজে আসে না। এবার মশার উৎপাত-উপদ্রব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মশা দমনে দুই সিটি কর্পোরেশনের নেয়া কর্মসূচী অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। উড়ন্ত মশা দমন ও নিধনের কর্মসূচী যে সুফল দিতে পারে না, তা বলাই বাহুল্য। মশা প্রজননের যাবতীয় সুযোগ বহাল রেখে মশা দমন বা নিধন আদৌ সম্ভব নয়। হাজামজা খাল, জলাশায়, খোলা ড্রেন এবং রাস্তাঘাটকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হিসাবে বহাল রেখে কীভাবে মশা দমনে সাফল্য আসতে পারে, আমাদের বুঝে আসে না। মশা প্রজননের এসব উৎসস্থল কর্মসূচীর আওতায় আনতে হবে। এগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে, ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এবং তাহলেই মশা নিবারণ সম্ভব হতে পারে। ঢাকা শহরকে বসবাস উপযোগী, নাগরিকবন্ধব এবং সকল প্রকার আবিলতা থেকে মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সুচিন্তিত, পরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত কর্মসূচী নিতে হবে। এই সঙ্গে নাগরিকদের সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। ওয়াসা একটি ড্রেন পরিষ্কার করে দিতে পারে; কিন্তু ড্রেনটি যাতে পুনরায় আবর্জনা-স্তুপের কারণে অচল হয়ে পড়তে না পারে, সেটা নাগরিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। শহরে ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ও চিহ্নিত স্থান আছে। নাগরিকেরা যদি সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে রাস্তায় বা যততত্র ফেলে দেয়, তাহলে কিভাবে শহর আবর্জনামুক্ত হবে? মোট কথা, আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে যেমন উচ্চ দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করতে হবে তেমনি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারেরও যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। সকল পক্ষের মিলিত চেষ্টার ফলেই ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করা সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।