Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ হচ্ছে না খোঁড়াখুঁড়ি

চরম ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

//উন্নয়ন কাজ চলা সময়ের ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র সাঈদ খোকন নগরবাসীর সহযোগীতা কামনা করেন//
রাজধানীজুড়ে চলছে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। নগরীর এমন কোনো সড়ক বা অলিগলি নেই, যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে না। এরমধ্যে দুয়েকটি সড়ক দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। নগরীরর বিভন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য সিটি কর্পোরেশন, মেট্টোরেল স্থাপনের কাজের জন্য, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খনন করছে রাস্তা। একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই শুরু হয় আরেকটি প্রকল্পের খনন কাজ। এভাবেই বছর পার হয়ে যায় কিন্তু খনন কাজ শেষ হয় না। চলে আসে আরেকটি বছর। এমন কোনো বছর নেই, যে বছর খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হয় না। তবুও সমস্যার সমাধান হয় না। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগ যেন মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। এ খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঢাকার বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই বাড়ছে। এই দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলার কারণে।
রাজধানীর প্রণকেন্দ্র খোদ মতিঝিলেই গত দুই মাসের অধিক সময় সড়ক ও ফুটপাত খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে মতিঝিলের মূল সড়ক দ্বীপে সৌন্দর্য বর্ধনের (বিউটিফিকেশন) কাজ চলছে। এছাড়াও মতিঝিলের আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলি-গলিগুলোতে কোন না কোন উন্নয়ন সংস্থা ড্রেন, স্যুয়ারেজ কিংবা অন্য কোন কাজের জন্য খুঁড়ে কিংবা বড় বড় পাইপ সড়কের উপর এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। এতে পুরা মতিঝিল এলাকা এখন কার্যত অচল হয়ে আছে। এ চিত্র শুধু মতিঝিলেরই নয়। সারা রাজধানীজুড়েই এখন এমন চিত্র।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেইস প্রজেক্টের আওতায় মতিঝিলের ফুটপাত খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে গত দুই মাসের অধিক সময় হলো। ব্যাংক পড়া খ্যাত ব্যস্ত মতিঝিল এলাকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দেখা দিয়েছে কাজের স্থবিরতা।
ডিএসসি’ির দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভাগের অবহেলার কারণে কাজের গতি এতোটাই শ্লথ যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টিকে গুরুত্বাই দিচ্ছে না। মধুমিতা সিনেমা হলের পাশের ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার শওকত হোসেন বলেন, এভাবে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা কেটে মাসের পর মাস রেখে দিলে ব্যবসাতো লাটে উঠবে। একই এলাকার অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, ফুটপাত কেটে ড্রেন বানানোর কাজ চলছে প্রায় দুই মাস হয়ে গেলো। প্রতিটি ভবনের সামনের অংশে বিশাল গর্ত করা হয়েছে। একটা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় এভাবে দিনের পর দিন উন্নয়ন কাজে জন্য কেটে রেখে দিলে ব্যবসায়ীরাতো মাঠে করবে। তিনি বলেন, দিনে যেখানে ২৫জন শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করাতে হয় সেখানে মাত্র ৫জন দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এতে করে তিন দিনে যে কাজ শেষ হওয়ার কথা তা ১০ দিনেও শেষ হচ্ছে না। এতে করে আমাদের ব্যবসার চরম ক্ষতি হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ‘কেইস প্রজেক্ট’ প্রকল্প পরিচাল শিহাবুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। আমি গত বৃহস্পতিবার নিজেই প্রকল্প এরিয়া ঘুরে দেখে এসেছি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে তাগাদা দিয়েছি, যত দ্রæত সম্ভব যেন কাজ শেষ করা হয়। তিনি বলেন, আগামী সাপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। এই সময়টুকু উন্নয়নের স্বার্থে সবাইক একটু ধর্যধারণ করার অনুরোধ করছি।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর, গাবতলী, ধানমন্ডি, পল্লবী, কাফরুল, বনানী, গুলশান, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, বাসাবো, মালিবাগ, মৌচাক, ফকিরেরপুল, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পুরানা পল্টন, আজিমপুর, নিউমার্কেট, নিউ পল্টন, লালবাগ, হাজারীবাগ, জিগাতলা, রায়েরবাজারসহ গোটা রাজধানীতে রাস্তা সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। কোনো কোনো এলাকায় এসব কাজের জন্য রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। ‘উন্নয়ন কাজ চলিতেছে, রাস্তা বন্ধ। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন’- এরকম একটা সাইনবোর্ড লাগিয়েই দায় সেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে সহসাই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। তাতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী।
এ সমস্ত খোঁড়াখুঁড়ির ব্যপারে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেই কোন সঠিক তদারকি। ঠিকাদাররেরা যে যেমন খেয়ালখুশি মত কাজ করছে। একটু বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে রাস্তায় চলাচলের উপায় থাকে না। রাস্তার মাঝখানে যখন তখন বিকল হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। প্রতিনিয়তই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অফিস আদালত মুখি মানুষ ও স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সকাল বেলায় ঘর থেকে বের হয়েই পড়ছে চরম ভোগান্তিতে। কোথায়ও অসহনিও যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে আবার কোথায় যানবাহনেরে সঙ্কটে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্ট। ইচ্ছা থাকলেও ময়লা, কাদা-পানি ও পিচ্ছিল রাস্তায় পায়ে হাটাও সম্ভব হয় না। অন্যদিকে আবার রোদ উঠলে বাতাসে ধুলা-বালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাসের সাথে ধুলা-বালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীর উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সেবদানকারী সংস্থাকে রাস্তা কাটার সীতিম পরিসরে অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও এ জন্য রয়েছে কঠোর নিয়ম নীতি। এ নিয়ম নীতি তদারকি করার মূল দায়ীত্বে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার চলমান উন্নয়ন কাজ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজের নেই কোন সুনির্দিষ্ট তদারকি। যে কারণে নগরবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
প্রতি বছর ৩১ মে’র মধ্যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে থাকলেও এ বছর তা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। কারণ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন গত বছর যে কাজ শুরু করেছিলেন সে কাজও এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেননি। তার উপর এ বছরও তারা আরও প্রায় ৪/৫ শতাধীক সড়ক মেরামতের কাজ একসাথে ধরেছে। দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ সব কাজ শেষ হতে আরও অন্তত ৫/৬ মাস সময় লেগে যেতে পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ইনকিলাবকে বলেন, নগরীর নাগরীক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেইতো সিটি কর্পোরেশনকে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। এধরণের কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যাতো হতেই পারে। এ জন্য নগরবাসীকেও কিছুটা ভোগান্তি সহ্য করতে হবে। উন্নয়ন কাজ চলা সময়ের ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র নগরবাসীর সহযোগীতা কামনা করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো যতদ্রæত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করছি। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিদের্শনা দেয়া আছে। যাতে নাগরিক দুর্ভোগ এড়ানো যায় সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা আছে।
রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার সড়কের দুপাশে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) রাস্তা খননের কাজ শুরু করা হচ্ছে গত প্রায় দেড় বছর ধরে। মেট্রোরেল প্রকল্পের শেওড়াপাড়া থেকে কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই গর্ত খোঁড়া। নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। কোথাও কোথাও একটা করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের এপার-ওপার হওয়ার জন্য বাঁশ-স্টিলের পাত ফেলা হয়েছে। গর্তের মাটি সড়কেই পড়ে আছে। যানবাহনের চাকার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ধুলা হয়ে চারদিকে উড়ছে। আশপাশের ভবন-দোকানগুলো ধুলার রঙে ধূসর। মিরপুর শ্যাড়ওয়া পাড়ার বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, সড়ক খোঁড়া হয়েছে ৫ ফুট কিন্তু যন্ত্রপাতি, মাটি, রাবিশ ফেলে সড়কের ১৫-২০ ফুট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। উন্নয়ন হবে ভালো কথা, জনগণের চলাচল বন্ধ করা তো ঠিক নয়। দুর্ভোগের তো একটা সীমা আছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরাতুল্লাহ বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে সড়ক খননের অনুমোদন দেয় ওয়ানস্টপ সেল থেকে। তবে সেল থেকে এই দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়, খননের কারণে যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়।



 

Show all comments
  • লাভলু ১৭ মার্চ, ২০১৮, ৩:৫৮ এএম says : 0
    এগুলোর জন্য সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোগান্তি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ