Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহাসড়কে থ্রি-হুইলার

যানজট ও দুর্ঘটনার অন্যতম নিয়ামক : নিষিদ্ধের কথা কেউ মনে রাখেনি: নেপথ্যে পুলিশ ও সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে এ নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। শুরুতে এ নিয়ে খানিকটা তোড়জোড় চললেও এখন সেই নিষেধাজ্ঞার কথা কেউ মনে রাখেনি। না পুলিশ, না থ্রি হুইলারের মালিক-চালক-যাত্রী। এখন আবার আগের মতোই মহাসড়কে চলছে সব ধরনের থ্রি-হুইলার। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য বহুবার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারনে এগুলো চলাচল বন্ধ করা যায়নি। আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এসবের কারণে মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। ভুক্তভোগিদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা অংশে মাঝে মধ্যে থ্রি-হুইলার চললেও অন্যান্য স্থানে এখন আর চলতে দেয়া হয় না। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। তবে অনেক সময় জনবলের অভাবে পারা যায় না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার অন্যতম কারন থ্রি-হুইলার চলাচল। এগুলো বন্ধ করার জন্য জেলা পুািলশ প্রশাসনকে এগিয়ে আসাসহ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপণ জারি করে সরকার। সে সময় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে কি না তা দেখার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিজে সিএনজি অটোরিকশা আটক করেছেন। মন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত অনেকটা ঘটা করেই মহাসড়কগুলোতে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের জন্য আলাদা লেন চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রথম দিকে পুলিশি তৎপরতার কারণে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল কমে যায়। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রত্যাশিতভাবে অনেকটাই কমতে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের তদারকির অভাবে সেই নিষেধাজ্ঞা খুব বেশিদিন টেকসই হয়নি। এখনও সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন চাকার যানগুলো। ভুক্তভোগিদের মতে, মহাসড়কে দ্রæতগতির যানবাহনের সাথে থ্রি-হুইলার চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নিষিদ্ধ হলেও দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে এগুলো চলতে দেখা যায়। দিন দিন এগুলোর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে এগুলো দেখে মনেই হয় না যে, মহাসড়কে এগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে বা কখনও নিষিদ্ধ ছিল। জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে সারাদেশের মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক) ও মোটরচালিত রিকশাগুলো। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ এ যানগুলো।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন কোম্পানীর বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা-গোমতি সেতুৃ পাড় হলেই মহাসড়কের উপর শত শত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার, মোটরচালিত রিকশার ভিড়। এসবের ভিড়ে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন দ্রুতগতির যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এক পর্যায়ে সৃষ্টি হয় যানজট। আর সাইড দিতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। ঢাকা-ফেনী রুটের স্টারলাইন বাসের চালক সেকেন্দার আলী বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা ও মোটরচালিক রিকশার কারনে গাড়ি চালানোই কষ্টকর। প্রত্যন্ত এলাকার সরু সড়ক থেকে হুট করে এগুলো মহাসড়কে উঠে পড়ে। এ কারনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। হানিফ পরিবহনের চালক সোলায়মান আলী বলেন, অটোরিকশাগুলো মহাসড়কের মাঝখান দিয়া চলে। হর্ণ দিলেও সাইড দিতে চায় না। এসব যানবাহনের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। শ্যামলী পরিবহনের চালক সোহরাব হোসেন বলেন, ইদানিং মহাসড়কে মোটরচালিত রিকশার ভিড় বেশি দেখা যায়। রিকশাগুলো আবার উল্টোপথে চলে। হঠাৎ করেই এগুলো মহাসড়কে উঠে উল্টো পথে চল বলে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো যারা চালায় তারা খুবই আনাড়ি এবং অদক্ষ। সে কারনে দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু এভাবে এক তরফা সতর্কতায় দুর্ঘটনা কমানো যায়, এড়ানো যায় না। প্রতিদিনই এসব নিষিদ্ধ যানবাহনের কারনে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার পোস্তগোলা প্রথম বুড়ীগঙ্গা সেতু থেকেই মহাসড়কের যাত্রী তোলা হয় সিএনজি অটোরিকশাতে। সেতুর উপরেই সারিবদ্ধ করা সিএনজি অটোরিকশায় উঠছেন যাত্রীরা। পোস্তগোলা থেকে মহাসড়ক ধরে কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়ী, নিমতলী মুন্সীগঞ্জ সদর এমনকি মাওয়া পর্যন্ত যাত্রী আনা নেয়া করা হয়। শ্যামপুর থানা থেকে মাত্র কয়েকশ’ গজ দুরেই নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলারে যাত্রী আনা নেয়া করা নিয়ে পুলিশ রহস্যজনকভাবে নীরব। একই অবস্থা ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে।
জানা গেছে, সরকারদলীয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দিয়ে এসব নিষিদ্ধ যান মহাসড়কে চলাচল করে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট থানা ও হাইওয়ে পুলিশও জড়িত। এ কারনে পুলিশের চোখের সামনে থ্রি-হুইলারগুলো মহাসড়কে চলাচল করলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে। আলাপকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের বেশ দুজন অটোরিকশা চালক নাম প্রকাশ করা করে বলেন, মহাসড়কে উঠলেই পুলিশকে টাকা দিতে হয়। এলাকাভেদে মাসিকভিত্তিতে পুলিশের চাঁদা নির্ধারণ করা আছে। চাঁদা না দিয়ে মহাসড়কে উঠলে পুলিশ সেই অটোরিকশা আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তখন মালিকের টাকাও বেশি যায়, সাথে হয়রানিতো আছেই। ওই দুই চালক জানান, পোস্তগোলা সেতুর উপর দিয়ে মহাসড়কে চলাচলের জন্য এখানকার ট্রাফিক পুলিশসহ থানা পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় পুলিশ ঝামেলা করে। এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনবল কম। তাই সব সময় সবদিকে নজর দেয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করলেই সব সময় এগুলো আটক করতে পারে না। আটক করলে উল্টো ঝামেলা হয়। সে কারনে কখনও কখনও দেখেও না দেখার ভান করতে হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ