বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ও তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন মিলনের লাশ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপির কর্মসূচির পর টগবগে এক তরুণকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে লাশ করে ফিরিয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে দু’জনই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। গতকাল (মঙ্গলবার) বাদ জোহর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের নামাজে জানাযায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে শহীদ হওয়া মিলনের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদের নামের তালিকায় আরেকটা নাম যোগ হলো। যারা এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়নে আওয়াজ তুলে তাদের মধ্যে সে ছিল অন্যতম। এরপরই মির্জা ফখরুলে কণ্ঠ ভারী ওঠে। নিজেকে সামলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। সারাদেশ আজকে নির্যাতন, গুম খুনের শিকার হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাই এই দু:শাসন থেকে আমাদের মুক্তি দিন। মুক্তি দিন আমাদের সন্তানদের। মুক্তি দিন ভব্যিষৎ প্রজন্মের জন্য। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য যারা জীবন দিচ্ছেন, প্রাণ দিচ্ছেন তাদের প্রতি আমাদের স্যালুট। তাদেরকে অভিবাদন। মিলনকে আমরা সকলেই স্যালুট করছি। তার এই শাহাদাৎ আমাদেরকে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা সহানুভূতি প্রকাশ করছি। যদিও এটা দিয়ে তার ও পরিবারের কোন লাভ হবে না। এরপরই আব্বাসের কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে। খানিকটা চুপ হয়ে যান তিনি। তারপর নিজেকে সামলে আবারও বক্তব্য শুরু করেন। আবেগতাড়িত কণ্ঠে মির্জা আব্বাস বলেন, তাজা একটি ছেলে। তরতাজা একজন তরুণ। সামনে নতুন পৃথিবী এমন একটি ছেলেকে এমনটিভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলল। কী অপরাধ ছিল তার? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদে করছিলাম প্রেসক্লাবের সামনে। সেখান থেকে শকুনের মতো ছোঁ মেরে একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে গেলে। তাকে আর পাওয়া গেল না। লাশ পাওয়া গেল হাসপাতালে। ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা কোন দেশে বসবাস করছি? ছোটবেলা বইয়ে পড়তাম আফ্রিকার অসভ্য কতগুলো দেশের কাহিনী। আমরা তো এখন সেই পর্যায়েও নেই। তিনি বলেন, যখন যাকে খুশি তাকে ধরে নিয়ে যাবে, যখন যাকে খুশি তাকে মেরে ফেলবে! হাইকোর্টের নির্দেশ আছে সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। যাদের কাছে আমি আশ্রয় নেবো তারাই যদি আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে, তাদের কাছে যদি বিচার না পাই আমরা কোথায় যাব? এসময় আরও বক্তব্য দেন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামনুর রমিদ মামুন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
জানাযায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমেদ আযম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, এমরান সালের প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম, আব্দুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, রফিক সিকদার, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, বিল্লাল হোসেন তারেক, ছাত্রদলের মামুনুর রশিদ মামুন, আসাদুজ্জামান আসাদ, এজমল হোসেন পাইলট, আলমগীর হাসান সোহান, ওমর ফারুক মুন্না, মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, ইখতিয়ার রহমান কবির, সাখাওয়াত প্রমুখ। গত ৬ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে জাকির হোসেন মিলনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে গত ১০ মার্চ তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১২ মার্চ মিলন মৃত্যুবরণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।