Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে নির্মমভাবে মা খুন

মাদকাসক্তের নির্মমতা বাড়ছে

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 মাদক সেবনে বাধা কিংবা মাদকের টাকা না দেয়ায় মাদকাসক্তের হাতে খুন হচ্ছেন আপনজন। সন্তানের হাতে মা-বাবা কিংবা বাবার হাতে খুন হচ্ছে সন্তান। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে মা-বাবাকে হত্যার মতো নির্মম ও নিষ্টুর ঘটনা ঘটাতেও পিছপা হচ্ছে না মাদকাসক্তরা। সর্বশেষ গত সোমবার রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে সালমা বেগম (৬৫)। মাদকের মামলায় দু’বছর জেল খেটে বেরিয়ে এসে ৭দিনের মাথায় মাদকের টাকা না পেয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাকে হত্যা করে সে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে মাদকাসক্ত ছেলে শিপন (৩৫)। গতকাল পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এর আগে গত ৩ ফের্রুয়ারী রাজধানীর গেন্ডারিয়া নারিন্দা তৃতীয় লেন এলাকার একটি বাসায় আনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে এক মহিলাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে মাকে গুরুতর জখম মাদকাসক্ত ছেলে জুনায়েদ হোসেন আবির (১৯)। পুলিশ গতকাল পর্যন্ত আবিরকেও গ্রেফতার করতে পারেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
জুনায়েদের বাবা আমির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তাদের একমাত্র ছেলে কয়েক বছর ধরে ইয়াবাসহ নানারকম মাদকে আসক্ত। গত বছর জুন মাসে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে তিন মাস থাকার পরে পালিয়ে এসে আবারও মাদক সেবন শুরু করেছে আবির। মাদকের টাকা না পেলে প্রায়ই সে বাসার মালামাল ভাঙচুর করে। ঘটনার দিন ৩ ফের্রুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে জুনায়েদ তার মায়ের কাছে মাদক সেবনের জন্য টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জুনায়েদ ক্ষিপ্ত হয়ে বটি নিয়ে তার মাকে কুপিয়ে আহত করে। এতে আনোয়ারার কপাল, হাত-পা কেটে যায়। আনোয়ারার চিৎকার শুনে তার ফুফাতো বোন লাবনী এগিয়ে আসে। তাকেও বটি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় জুনায়েদ।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন পিপিএম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদক এখন সমাজের একটি বড় সমস্যা। এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মাদক নিমূল করা কঠিন হলেও এর নিয়ন্ত্রন করা কঠিন নয়। এ জন্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের কোন সদস্য বা কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায় জড়িত বা সহযোগিতার তথ্য পাওয়া গেলে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় নিহত সালমা বেগমের ছোট ছেলে আলামিন বলেন, ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। বিকেলে বাসায় এসে দেখি আমার মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে পুলিশকে খবর দেই। এরই মধ্যে আমার ভাই পালিয়ে গেছে। আমার ভাই বহু আগে থেকেই মাদকসেবন করতো। এটা নিয়ে আমাদের সবার সঙ্গে ঝগড়া হতো। এ কারণে সে দু’বছর জেলও খেটেছে। গত ৫মার্চ সে মুক্তি পেয়ে বাসায় এসে আবারও মাদকসেবন শুরু করে। এজন্য মায়ের কাছে সবসময় টাকা চাইতো। এতেই ঝগড়া হয়।। নিহতের স্বামীর নাম মৃত শফিউদ্দিন মিয়া, বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার ভোলানাথপুর গ্রামে।
ভাটারা থানার এসআই আলী হাসান জানান, গত সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ছেলে শিপন নিজের মাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিপনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক নেয়ার ফলে বিবেক ও মনুষ্যত্ব লোপ পায়। স্নেহ-ভালোবাসা ও পারিবারিক বন্ধন বিনষ্ট হওয়ায় নেশাগ্রস্তদের হাতে বাবা-মা এবং সন্তানের মতো ঘনিষ্ঠজন খুন হচ্ছে। রাজধানীতেই মাদকসেবী মেয়ের হাতে পুলিশ অফিসার বাবা ও মা খুনের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মাদক ব্যবসায় কয়েকগুণ লাভ এবং দ্রæত বিপুল টাকার মালিক হওয়ার সুযোগ থাকায় কেনাবেচা ও পাচার ঘিরে প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ, বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদাবাজি, ঘুষ লেনদেনের মতো অসংখ্য অপরাধ ঘটছে। মাদক কেনাবেচা ও আধিপত্য বজায় রাখার সংঘাতে এক বছরে শতাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মাদকাসক্তির কারণেই চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, ডাকাতি ও খুনখারাবির ঘটনা বেশি ঘটছে। সম্প্রতি নবনিযুক্ত আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, মাদকের বিস্তার আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে যতদিন পর্যন্ত মাদকের চাহিদা থাকবে ততদিন জোগান থাকবে। নতুন করে যাতে চাহিদা তৈরি না হয় সেজন্য যারা এরই মধ্যে মাদকে আসক্ত তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেজন্য কাজ করতে হবে। কিন্তু এটা পুলিশের একার কাজ নয়। এ জন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ