Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানিবদ্ধতা থাকবে সহনীয়

চট্টগ্রামে মনিটরিং কমিটির প্রথম সভা

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দ্রুত শুরু খালগুলোর পুনঃখনন ও সংস্কার
চট্টগ্রাম ব্যুরো : আগামী বর্ষা মওসুমের আগেই চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। এরজন্য নগরীর খাল-ছরাগুলোর পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে সিডিএর গৃহীত এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। গতকাল (রোববার) ‘চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মনিটরিং কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সম্মেলন কক্ষে নগরীর সেবা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, বিভাগসমূহের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে। আগামী বর্ষা মওসুমে যাতে পানিবদ্ধতা কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যে নগরীর ১৬টি খালের পুনঃখনন ও দ্রæত সংস্কার করা হবে। যাতে বর্ষা মওসুমে মানুষকে আর রাস্তায় নৌকা দিয়ে চলতে না হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, বর্ষা মওসুম আসতে আরও দুই-তিন মাস সময় আছে। এ সময়ের মধ্যেই নগরীর ১৬টি খালের পুনঃখনন কাজ শুরু করতে হবে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। আশা করছি তারা এ কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবেন। পানিবদ্ধতা নিরসনের তাগিদ দিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, নগরীর ৩৬টি খালের মধ্যে এ মওসুমে ১৬টি খালের ডিজাইন দেখে কনসালটেন্ট প্রকল্পের কাজে হাত দেবেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে একনেক কর্তৃক চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসন প্রকল্পের জন্য ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়েছি। চট্টগ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
মনিটরিং কমিটির সভায় সিডিএর পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবে বলা হয়, আরএস জরিপ অনুযায়ী নগরীর ৩৬ খাল চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তবে উচ্ছেদের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর নেয়া এ বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), বন্দর কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সহযোগিতা প্রয়োজন। চট্টগ্রামের মানুষের দুঃখ লাঘবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন একান্ত জরুরী।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েরর সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, চট্টগ্রাম শুধু বাণিজ্যিক রাজধানী নয়, বন্দরনগরীও। পানিবদ্ধতার জন্য নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ব্যবসা কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পানিবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর বর্ষায় মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর পক্ষ থেকে এ মেগাপ্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জনগণ সুফল পাবেন।
সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ বলেন, সভায় মতামতের ভিত্তিতে নয়, কনসালটেন্টের পরামর্শে খাল খনন ও সংস্কার করলে সুফল মিলবে। পানিবদ্ধতা নিরসনে তিনি সকল সেবা সংস্থার সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামের খালগুলোর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তসহ প্রকৃত চিত্র সিডিএর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে খালগুলো পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও খনন করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মোঃ জাফর আলম বলেন, নৌবাহিনীর মাধ্যমে এ মাসেই কর্ণফুলীর তলদেশে সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত ৪৩ লাখ ঘনমিটার পলি-বালির ড্রেজিং কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২শ’ ৪২ কোটি টাকা। খাল খননের পাশাপাশি ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা অনেকাংশে কমে আসবে।
সভায় সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহম্মেদ, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী একেএম সামশুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ উল হাসান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোঃ আল মামুন, চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান, সিডিএ বোর্ড সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব, মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, চউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান, প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মনিটরিং কমিটির প্রথম সভায় মন্ত্রী, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ আলোচকগণ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা সমস্যা আগামী বর্ষা মওসুমে ‘সহনীয় পর্যায়ে’ থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করলেও নগরী পানিবদ্ধতামুক্ত কবে হবে তা এখনও অনিশ্চয়তায় ঘোরপাক খাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ