নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
তিন বলে দরকার এক রান। জয় নিশ্চিত জেনে সিমানা প্রাচীরে ম্যাচের নায়ককে অভিবাদনের অপেক্ষায় পুরো দল। থিসারা পেরেরার লো ফুলটস বলটা ঠান্ডা মাথায় মিডউইকেটে ফ্লিকের মাধ্যমে এক রান নিশ্চিত করেই পাগলা উদযাপন শুরু করে দিলেন মুশফিকুর রহিম। আকাশে ছুড়লেন ব্যাটের ঘুশি। আলতো ডানে ঘুরে ভেংচি কেটে পেরেরাকে জানিয়ে দিলেন ‘আমরাও পারি’। এরপর মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজের নাজমুলের সেই নাগিন ড্যান্স।
মুশফিকের এমন উদযাপনকে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু জয়ের তৃষ্ণায় ব্যাকুল বাংলাদেশের সামনে যখন রেকর্ড তাড়া করে জয়ের লক্ষ্য তখন তা পূরণের পর এমন উদযাপনও মনে হতে পারে মামুলি। শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২১৫ রানের এভারেস্ট ২ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৩৫ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৭২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা মুশফিক।
নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে দৃষ্টিকটভাবেু হারের পর দলকে উজ্জীবিত করতে এমন একটি জয়ই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। গেল মাসেই মিরপুরে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৯৩ রান করেও এই লঙ্কানদের কাছেই হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার রেকর্ড তাড়া করে শ্রীলঙ্কাকে তাদেরই মাঠে হারালো টাইগাররা।
৬৩ বলে যখন জয়ের জন্য ১১৫ রান দরকার তখন মাঠে নামেন মুশফিক। এরপর একে একে তার পাশ থেকে বিদায় নেন সৌম্য, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির। কিন্তু অপর প্রান্তে ¯œায়ু ধরে রেখে প্রয়োজনীয় রান তুলে যান মুশফিক। ৮ বলে যখন দরকার ১৬ রান তখন নুয়ান প্রদীপের ¯েøায়ার মিডউইকেট দিয়ে আচড়ে ফেলেন গ্যালারিতে।
মুশফিকের কাজটা সহজ করে যান লিটন দাস ও তামিম ইকবালের ৫.৫ ওভারে ৭৪ রানের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটি। সৌম্য সরকারের পরিবর্তে লিটনকে ওপেনে নামিয়ে বাজিটা ভালোমতই জিতে যান মাহমুদউল্লাহ। দুজনের কেউই অবশ্য ফিফটি করতে পারেননি। লিটনের (১৯ বলে ৪৩) পর দলীয় ১০০ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তামিম।
তবে সৌম্য-মুশফিকের ২৭ বলে ফিফটি রানের জুটিতে জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। রানের জন্য যুদ্ধ করতে থাকা সৌম্য শেষ পর্যন্ত ফার্নান্ডোর বাইন্সার পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। শুরু থেকে মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহও। অধিনায়ক দ্রæত আউট হলেও রানের চাকা সচল রেখে যান। বাংলাদেশের সামনে তখন ১৫ বলে ২২ রানের সহজ সমীকরণ। যে সমীকরণের সমাপ্তি হতে পারত সাব্বিরের হাত ধরে। কিন্তু ব্যর্থতার ধারা এদিনও বজায় রেখে ২ বলে কোন রান না করেই দৃষ্টিকটু রান আউট হয়ে নতবদনে সাজঘরে ফেনের সাব্বির। তবে অপর প্রান্তে মুফফিক ছিলেন অবিচল। যার চোখে-মুখে ছিল জয়ের আকুন্ঠ তৃষ্ণা। জয়সূচক রানের পর পাগলাটে উদযাপন কিন্তু সেই কথাই বলে।
‘জয়টা আসলেই অনেক দরকার ছিল।’ সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ম্যাচ পরবর্তি অনুষ্ঠানে বলেন মুশফিক। এমন বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদের ¯œায়ু ধরে রাখার কৃতিত্ব দিয়ে ৩৫ বলের ইনিংসটি ৩৫ দিন বয়সী নিজের পুত্রকে উৎসর্গ করেন মুশফিক। তবে ‘দিন শেষে জয়টাই আসল।’ বলে জানান তিনি।
সামনে বিশাল লক্ষ্য থাকলেও জয়ের ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বসী ছিলেন বলে জানান টাইগার দলপতি মাহমুদউল্লাহ, ‘বিশ্বাস করুন, শুরু থেকেই আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। তামিম-লিটন দুর্দান্ত শুরু এনে দেন। এরপর মুশফিক ছিল অসাধারণ।’
ব্যাটসম্যানদের প্রত্যবর্তনে বোলারদের ব্যর্থতা অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে। অবশ্য এমন ব্যাটিং উইকেটে তাদের কিছুই করার ছিল না।
বৃষ্টির বাধায় কলম্বোর আর. প্রেমাদাশ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হয় দেরিতে। দুই দলই মাঠে নামে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে। টস জিতে বল বেছে নিয়ে প্রথম ওভারেই ১৩ রান দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারেই ১ উইকেটে ৭০ রান তুলে ফেলে শ্রীলঙ্কা। ১৪১ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কুসল মেন্ডিস ফেরার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তুলে নেন টানা তৃতীয় ফিফটি। ৩০ বলে ৫ ছক্কায় ৫৭ রান করে মাহমুদুল্লার বলে সাব্বিরকে ক্যাচ দেন মেন্ডিস। এর আগে কুসল পেরেরার সঙ্গে গড়েন ৯ ওভারে ৮৫ রানের জুটি। পেরেরাও শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে থেমেছেন বটে কিন্তু তার আগে ৪৮ বলে ৮টি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৭৪ রান। পরে উপুল থারাঙ্গার ১৫ বলে অপরাজিত ৩২ রানের ঝড়ে মাত্র ৬ উইকেট হারিয়ে রানের চূড়ায় ওঠে স্বাগতিকরা। মুস্তাফিজ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিলেও গুনতে হয় ৪ ওভারে ৪৮ রান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।