পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চানক্যনীতি ও ক‚টনৈতিক ব্যর্থতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ভারত। আমাদের কিছু মানুষের নতজানু মানসিকতা ও সেবাদাস মনোবৃত্তির জন্য একমাত্র বাংলাদেশের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে দেশটি। ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোতে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার বদলে সুবিধাবাদী ব্যক্তি, কিছু রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিসেবীকে সেবাদাস হিসেবে গড়ে তোলে। তাদেরকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে।
গেøাবালাইজেশনের এই যুগে ভারত আদিম যুগের পররাষ্ট্রনীতি ধরে রাখার কারণেই প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না গড়ে, তিস্তার পানিসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না দিয়ে কিছু দল, কিছু ব্যক্তির পেছনে খরচাপাতি করছে দেশটি। ভারত নিজেদের স্বার্থে যাকে যেভাবে সম্ভব বাংলাদেশের রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী বিভিন্ন গ্রæপকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দিল্লির কাছে কিছু পেয়ে ‘প্রতিদান’ দিতে আমাদের দেশের ওইসব লোক নিজ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বাদ দিয়ে দিল্লির স্বার্থকে সবসময় প্রাধান্য দিচ্ছেন; প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি কিছু মিডিয়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণের চিন্তা চেতনা-প্রত্যাশা প্রাপ্তির বদলে দিল্লির তাঁবেদারিতে হয়ে পড়েছে বেশি মনোযোগী।
দিল্লির সাউথ ব্লক অখুশি হতে পারে সে আশঙ্কায় এখন আর তিস্তার পানি, সীমান্ত হত্যা, টিপাইমূখে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ট্রানজিটের বিরোধিতা, বাণিজ্য বৈষম্য কমানোর দাবিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় না। ভারত অভিন্ন নদীগুলোতে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশের কৃষকদের পানির জন্য হাহাকার। নদীগুলোতে নাব্যতার অভাবে জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। সেদিকে কারো ভ্রæক্ষেপ নেই। গোলামি আর কারে কয়! অথচ নেপালের মতো দেশের জনগণ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক দলগুলো ভারতকে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে দেশপ্রেম দেখাতে হয়।
’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা-সহযোগিতা করেছিল, প্রায় এক কোটি লোককে ৯ মাস আশ্রয় দিয়েছিল; এ জন্য দেশটির প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ভারতের অখন্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশের ভ‚মিকা কী কম? বাংলাদেশ দিল্লির শাসকদের সহায়তা করছে বলেই তো দেশটির সেভেন সিস্টারর্স খ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য এখনো ভারতের সঙ্গে রয়েছে। ওই রাজ্যগুলোতে স্বাধীনতার দাবিতে যেভাবে আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, বাংলাদেশ যদি দিল্লির প্রতি সহানুভ‚তিশীল না হতো, তাহলে ভারত এতদিনে ভেঙে খান খান হয়ে যেত। আমরা ভারতকে সহায়তা করেছি বলেই আসামের স্বাধীনতাকর্মী নেতা অনুপ চেটিয়াসহ কয়েকজনকে বাংলাদেশে এক দশকের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এই মহতি অবদানকে কি ভারত কৃতজ্ঞতা চিত্রে মনে করছে? মনে করে থাকলে তা প্রকাশ করছে না কেন?
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অপরিহার্য। প্রশ্ন হলো, ভারত কী প্রতিবেশী কোনো দেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হতে পেরেছে! প্রতিবেশী কোন দেশের সঙ্গে ভারত সুসম্পর্ক রেখেছে? পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ কার সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী দেশটির সম্পর্ক ভালো? বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে বাংলাদেশ শুধু ভারতকে দিয়েই যাচ্ছে; বিনিময়ে কি পেয়েছে? ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ এবং এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন আমাদের অহঙ্কার। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করে আমাদের মতো নতুন দেশের অভ্যুদয় পৃথিবীতে খুব কম নজির আছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো জাতি আমরা। মুক্তিযুদ্ধে যে বিদেশিরা অবদান রেখেছেন, তাদের ডেকে এনে সম্মান জানাচ্ছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের এতদিন পর ভারতের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ‘ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে’ কি প্রমাণ দেয়? এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করতে না পারার রহস্য কি? মনোহর পারিকরের এ বক্তব্যের পরও দেশের রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীরা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন কেন?
ক্ষমতায় থাকার জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ব্যক্তিগতভাবে কিছু অর্থকড়ির জন্য আমরা যতই ভারতকে নিয়ে লাফালাফি করি না কেন, দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটির অবস্থান কোন পর্যায়ে? বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান কোথায় ভারতের কী সম্মানজনক অবস্থান আছে? এসব দেশে ইতোমধ্যেই চীন অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করে ফেলেছে। শি জিনপিংয়ের জাদুকরি নেতৃত্বের জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছে।
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের দিকে তাকালে কী দেখি? মোহাম্মদ নাশিদকে ক্ষমতায় বসিয়ে আধিপত্যবাদের বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিল ভারত। দিল্লির পুতুল হিসেবে গণতন্ত্রের লেবাসে নাশিদ জনগণের বদলে দিল্লির মনোরঞ্জনে বেশি ব্যস্ত ছিল। মালদ্বীপের সাধারণ জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। পরিণতিতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। নাশিদ ক্ষমতা হারিয়ে দেশছাড়া; প্রেসিডেন্ট হয়েছেন আবদুল্লাহ ইয়ামিন। তিনি ক্ষমতায় এসেই জনগণের প্রত্যাশার কথা বিবেচনায় নিয়ে মালদ্বীপের বন্ধু দেশের সংজ্ঞা বদলে ফেলেছেন। ভারতের বদলে এখন চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে এখন চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ব্যাপকভাবে প্রসারিতই হচ্ছে। মালদ্বীপ ও চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কয়েক বছর ধরে মালদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ গাদহতে চীনের সহায়তায় একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৪ সালে মালদ্বীপ সফর করেন। তখন জাদুকরি নেতৃত্বের কারণেই তিনি মালদ্বীপের জনগণের মনে রেখাপাত করেন। ওই সময় দু’দেশের মধ্যে বিমানবন্দর উন্নয়নের চুক্তি করা হয়। অথচ মালদ্বীপের বিমানবন্দর উন্নয়ন চুক্তি হয়েছিল ভারতের সঙ্গে। চীনের সঙ্গে চুক্তির আগে ভারতের সঙ্গে বিমানবন্দর উন্নয়নের সেই চুক্তি বাতিল করে দেয়া হয়। ওই সময় ৬০০ মিলিয়ন আরএমবির (চায়নিজ মুদ্রা) অবকাঠামো উন্নয়ন, ২০ মিলিয়ন আরএমবির সামরিক সহযোগিতা ও অন্যান্য সহযোগিতার আওতায় বিভিন্ন সেবা খাতে বিনিয়োগের জন্য আরো ২০ মিলিয়ন আরএমবির চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। মালদ্বীপের রাজধানী মালের কাছে একটি দ্বীপ অবকাশ যাপন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ বছরের লিজ নেয় চীন। এসব অর্থনৈতিক উদ্যোগ বহুল আলোচিত চীনের ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড’ ডকট্রিনের অংশ। দু’দেশের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে গেছে যে, ২০১৭ সালে তিন লাখ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন।
আর ভুটান! ভুটানে ছিল ভারতের মিনি ক্যান্টনমেন্ট। অর্থনৈতিক, সামরিক দিক দিয়ে ভুটান চীনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারপরও ভুটানকে কাছে টানতে চাইছে চীন। ভৌগলিকভাবেই সাত লাখ মানুষের দেশ ভুটানের তিন দিকেই ভারত। আগ্রাসী নীতির কারণেই দেশটির জনগণ ভারতকে পছন্দ করছে না। রাজতন্ত্র থেকে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকারে আসা দেশটিতে ভারতের বিনিয়োগ থাকলেও জনগণ ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে। ভুটান-ভারতের সিকিমের কাছে চিনের সীমান্তের দোকলাম মালভ‚মিতে চীন রাস্তা তৈরির ইস্যুতে যখন ভারত-চীন মুখোমুখি; তখন দেশটির জনগণ চীনের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। ষেখানে চীন ইতোমধ্যেই সড়ক নির্মাণ ও তিনটি হ্যালিপ্যাড নির্মাণ করেছে।
আফগানিস্তানে ভারতের বিনিয়োগ ও প্রভাব দুই-ই ছিল। মার্কিন-ইসরাইল-রাশিয়ার সহযোগিতায় আফগানিস্তানে জায়গা করে নেয় ভারত। এখন ভারতের সেই অবস্থান আগের পর্যায়ে নেই। কারণ আফগানিস্তানে যখন যে ক্ষমতায়, তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক করে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে দিল্লি। আফগান জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার কোনো চেষ্টা করেনি। পাহাড়-পর্বতের ওই দেশের জনগণ ভারতের এই নীতি পছন্দ করেনি। এখন আফগানিস্তান থেকে ভারতের পালায়নপর অবস্থা। অন্যদিকে সেখানে চীনের বাণিজ্য হু হু করে বাড়ছে। আফগানিস্তানে চীনের কেবল বিনিয়োগই বাড়ছে তা নয়; পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সমঝোতা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সেই উদ্যোগ আফগানিস্তানে চীনের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চিত্রেই বোঝা যায়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের ভ‚মিকা ন্যক্কারজনক। বাংলাদেশ সবসময় ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে; সহায়তা করেছে। দিল্লি যখন যা চেয়েছে, ঢাকা অকাতরে দিয়ে দিয়েছে। অথচ যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে; তখন মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে ভারত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে ভারত ভোট দেয়নি বাংলাদেশের পক্ষে। যখন রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়িঘর আগুন দেয়া হয়; হাজার হাজার রোহিঙ্গা আত্মরক্ষায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়; তখন নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে খুশি করতে নেপোদি সফরে যান। তিনি মিয়ানমারের শাসক ও নোবেল জয়ী সু চি’র পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন। সারাবিশ্বের কাছে মিয়ানমার যখন ঘৃণিত দেশ, মিয়ানমারের মিলিটারিরা যখন ধিকৃত হচ্ছেন; জাতিসংঘ তাদের নিষিদ্ধ করে বিচারের চিন্তাভাবনা করছে; বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে; তখন গেরুয়া পোশাকের নরেন্দ্র মোদি তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন; পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। বিনিময়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। মিয়ানমারেও চীনের আধিপত্য এখন ব্যাপক। মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর পরিচালনা করছে চীন। ওই দেশে চীনের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। রাখাইনের তেল, গ্যাস ও বন্দর উন্নয়ন কর্মকান্ডে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে চীনের। শুধু তাই নয় চীনের অস্ত্র কিনছে মিয়ানমার।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে যুগের পর যুগ ধরে নেপাল নির্ভরশীল ছিল ভারতের ওপর। সেই নেপাল হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র থেকে সংবিধান সংশোধন করে ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ রাষ্ট্রে রুপান্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার পর দিল্লিকে থোড়াই কেয়ার করছে। নেপালের রাজা বিরেন্দ্র পরিবারকে হত্যার পেছনে এখনো ভারতকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়াও নেপালি কংগ্রেস এবং কিছু নেতাকে আর্থিক সহায়তা, উলঙ্গভাবে সমর্থন করায় ওই সব ব্যক্তি দেশের জনগণের বদলে দিল্লির স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। এ জন্য নেপালিরা ওই নেতাদের চিহ্নিত করেছেন; ভারতকে অপছন্দ করছেন। তার প্রমাণ মিলেছে ভারত সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পরও নেপালের জনগণের দিল্লির কাছে মাথা নত না করার ঘটনা। হিমালয়ের পাদদেশের দেশটি পর্যটনের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে দাবিয়ে রেখেছিল ভারত। সেই নেপাল এখন ঝুঁকে পড়ছে চীনের দিকে। দেশটি নতুন অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে পেয়েছে চীনকে। ইতোমধ্যেই নেপাল ও চীন একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। নেপালের সর্বত্রই ক্রমবর্ধমান চীনা উপস্থিতি এখন দৃশ্যমান। ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কাঠমান্ডুর নতুন পুলিশ একাডেমি নির্মাণ হয়েছে; যার পুরোটাই চীন উপহার হিসেবে দিয়েছে। নেপালে এখন চীন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজের জীবন কাহিনী তুলে ধরে বলেছিলেন, আমি কৃষকের সন্তান। আমজনতা থেকে উঠে এসেছি। নেপালের সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই কৃষকের সন্তান। তারা শি জিন-এর ওই ভাষণ নেপালিরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। চীনা প্রেসিডেন্টের ইমেজ অন্যরকম ইমেজ তৈরি হয় নেপালে। তা ছাড়া বাণিজ্যের আড়ালে চীনারা কখনোই কোনো দেশের রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করায় চীনকে আরো নেপালের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। গত নির্বাচনে নেপালে কমিউনিস্টদের বিজয়ের বড় কারণ দেশটির জনগণের ভারত বিরোধী অবস্থান। নেপালের সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে ভারতের সীমান্তের আরোপিত অবরোধে নেপাল ওধুষ, জ্বালানি সঙ্কটে পড়ে। তখন চীন নেপালের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। এখন বলা যায়, প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের ওপর নেপালের নির্ভরশীলতা কমে গেছে।
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় ভারত তামিল নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে গোপনে সহায়তা করত। তামিলরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এটা করে শ্রীলঙ্কাকে অস্থিতিশীল করে রাখার চেষ্টা করে চানক্য নীতির দেশ ভারত। এখন যে শ্রীলঙ্কায় দাঙ্গা চলছে তার নেপথ্যে রয়েছে ভারতেই হাত। শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের চীনের সহায়তা নিয়েই তামিলদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন দমন করেছেন। সেই শ্রীলঙ্কায় বিমানবন্দরের অধিকার পাওয়ার লড়াইয়ে দক্ষিণ জমে উঠেছিল ভারত-চীনের ক‚টনৈতিক লড়াই। শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর ৯৯ বছরের ইজারায় চীনের কাছে হস্তান্তর করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ভাষায়, হাম্বানটোটা ভারত মহাসাগরের প্রধান একটি বন্দরে পরিণত হচ্ছে।
চীনের প্রভাবে ইতোমধ্যেই নেপালে ভারতীয় পণ্য ধাক্কা খেয়েছে; এখন শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে একই অবস্থা। মালদ্বীপ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত এবং চীনের সঙ্গে ‘অবাধ বাণিজ্য চুক্তি’ করেছে। মালদ্বীপের বাজারের প্রতি এতদিন চীন মনোযোগী ছিল না; এখন চীন মালদ্বীপে পণ্য পাঠাতে শুরু করেছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ চীন দীর্ঘদিন থেকে ভারত মহাসাগরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এসেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চীন একের পর এক বিনিয়োগ করছে। তার উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর। এই বন্দরে চীনের বিনিয়োগ দেশটির বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। চীনের এই বিনিয়োগ ভৌগলিক-রাজনৈতিক কারণে তাৎপর্যপূণ বটে। চীন বারবার বলে আসছে সমুদ্র বন্দরগুলোকে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে কলম্বোতে চীন তার শক্তি প্রদর্শনের যে চেষ্টা করবে না সেটা উড়িয়ে দেয়া যায়? ভারতকে বাদ দিয়েই চীন যে মেরিটাইম সিল্ক রোড নির্মাণ করছে; এই রোডের উদ্দেশ্যই হলো- বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সামরিক উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাণিজ্যিক স্বার্থের আড়ালে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে ঘিরে ফেলা। এ জন্যই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে।
পাকিস্তান শুরু থেকেই চীনের মিত্র। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল এখন অনেকটা ভারতের প্রভাবের বাইরে চলে গেছে। আফগানিস্তানে, মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। এখন যদি মালদ্বীপেও বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে আড়ালে চীনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, তবে ভারতকে আরো শক্তভাবে ঘিরে ফেলা চীনের জন্য কঠিন হবে না।
দিল্লি মুখাপেক্ষী রাজনৈতিক দল, কিছু নেতা, বুদ্ধিজীবী ও সুশীলের নতজানু মানসিকতার কারণে ভারতের আধিপত্য বাংলাদেশে এখনো বিদ্যমান। বন্ধু দেশের জনগণ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ কী চায় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দিল্লির শাসকরা সেটা বোঝার চেষ্টা করেনি। বরং যখন যে দল বাংলাদেশের সরকারে এসেছে, সে দলকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বা বর্তমান সরকারের অবস্থা নিয়ে ভারতের ভ‚মিকা সবার জানা। বিএনপির শাসনামলেও জাতীয়তাবাদী পুরো দলটিকে ব্যবহার করতে না পারলেও বিএনপির কিছু নেতাকে পকেটস্থ করতে পেরেছিল দিল্লির সাউথ বøক। জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করা দিল্লির ভুল ক‚টনীতির কারণেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের নাম শুনলেই মানুষ খিস্তিখেউড় করেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় ভারতের অবস্থান গৌণ হয়ে গেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জনগণের মধ্যে মার্কিন হটাও, ভারত হটাও আওয়াজ উঠেছে। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বলা যায়, আগ্রাসী নীতি ও ভুল ক‚টনীতির কারণে ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ায় বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে ভারত। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও তারা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। যদিও বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি এবং দেশের অবকাঠামোগত খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় করেছে বাংলাদেশ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আড়ালে ভারতীয় বলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আর বাংলাদেশের জনগণ? দিল্লির আগ্রাসী নীতির কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ ভারতকে পছন্দ করে না। ব্যবসা ও সংস্কৃতির নামে ভারত এ দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা এ দেশে এজেন্ট তৈরি করেছে। অথচ চীন হলো বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ। দীর্ঘদিন থেকে চীন বাংলাদেশে বাণিজ্য করছে এবং বড় বড় প্রকল্প নির্মাণ করছে। অথচ বাণিজ্যের আড়ালে কখনো বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেনি। এ জন্য দেশের সাধারণ মানুষ চীনের প্রতি সহানুভ‚তিশীল। অবশ্য বিষয়টি দেশের রাজনীতিকরা বোঝেন না, সেটা মনে করার কারণ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।