পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের আহবান মির্জা ফখরুলের : খালেদা জিয়াকে মাদার অব ডেমোক্র্যাসি উপাধি
সকাল থেকেই খুলনার কেডি ঘোষ রোডে বিএনপির জনসভাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি। দুপুর পর্যন্ত মঞ্চ তৈরি এবং মাইক লাগানোতে পুলিশের বাধা। বাধার কারণে জনসভা হবে কিনা তা নিয়েও তৈরি হয়েছিল সংশয়। কিন্তু দুপুর ১টায় অনুমতি পাওয়ার পর মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় জনসভায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অবাক হয়েছে খুলনাসহ সারাদেশের মানুষ। হাতে হাতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পোস্টার, একই দাবিতে লেখা কাফনের কাপড়, মুখে মুখে শ্লোগান ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দিব না/ পারে না’। দলে দলে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সমাবেশ মুখি মিছিলের মাধ্যমে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অংশ হিসেবে খুলনা বিএনপির জনসভায় ব্যাপক শোডাউন দিয়েছে দলটি। গতকাল (শনিবার) বিকেল ৩টা থেকে কেডি ঘোষ রোডে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এই জনসভা শুরু হয়। জনসভায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করতে দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে নির্দলীয় সরকারের কথা পুনঃব্যক্ত করেন তিনি। এসময় বিএনপি মহাসচিব দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদার অব ডেমোক্রেসি উপাধি দেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সরোয়ার, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, কেন্দ্রীয় মাসুদ অরুণ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, অমলেন্দু দাস, কবির মুরাদ ও ড. ফরিদুল ইসলাম। বিভাগীয় নেতাদের মধ্যে খুলনা জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, বাগেরহাট জেলা সভাপতি আব্দুস সালাম, নড়াইল জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সভাপতি অহেদুল ইসলাম বিশ্বাস, সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান, যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল ইসলাম সাবু, ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর বিজেপি সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু ও নগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি প্রফেসর মাহফুজুর রহমান। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম ও প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল হাসান বাপ্পি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় পরিকল্পিত রায় দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য তিনি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এবং ভোট চুরি করে আওয়ামী লীগ পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করা। বেগম জিয়ার কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ এক মাস একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারপরও তিনি মনোবল হারায়নি। তিনি স্বৈরাচারকে বিদায় দিতে সব রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের জন্য কারাগার থেকে আহবান জানিয়েছেন। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবির আন্দোলনে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৫ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হাজার হাজার নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে প্রস্তুতের প্রতিশ্রুতি এ আন্দোলনের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতিপক্ষ হওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের পথে বাধা না হতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহবান জানান তিনি। আইন-শৃংখলার বর্ণনা দিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, গত ৯ বছরে বিএনপির অনেক কর্মীকে গুম ও খুনের শিকার হতে হয়েছে। গুলি করে অনেককে পঙ্গু বানানো হয়েছে। জনসমর্থনহীন সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের জামানত থাকবে না।
খুলনা-যশোর রোডের দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী মিডিয়ার সামনে উন্নয়নের জোয়ার এবং দিনকে রাত, রাতকে দিন বানান। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, যশোর রোডের দুর্ভোগ এড়াতে নড়াইল সড়ক দিয়ে খুলনায় এসে পৌঁছেছি। চালের দামের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ১০ টাকা কেজি চালের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসলেও এখন সেই চাল ৬০-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য আটবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপির সময়ে সারের মূল্য যা ছিল তার থেকে তিনগুণ ও গ্যাসের মূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শেয়ার বাজার লুট ও ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ লুট করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বিদেশে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের বিনাভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে সংসদকে কলুষিত করেছে। এ সংসদ জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি, সংসদে জবাবদিহিতা নেই, মন্ত্রীরা টাকা চুরি করলেও জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ নেই, জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দলে বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করা হচ্ছে।
৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার পর থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি। কয়েকদফা মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, গণস্বাক্ষর কর্মসূচির পর এবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশ শুরু করেছে দলটি। সবকটি বিভাগে শান্তিপূর্ণ জনসভার অংশ হিসেবে প্রথমেই খুলনা বিভাগে খুলনার হাদিস পার্কে জনসভার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল খুলনা বিএনপি। কিন্তু সেখানে আওয়ামী মহিলা লীগ পাল্টা সমাবেশের ডাক দিলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ফলে বিএনপি সার্কিট হাউজে জনসভা করতে চাইলেও অনুমতি মেলেনি। সর্বশেষ দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে চাইলেও বাধা দেয়া হয়। শনিবার সকালেও দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ অবস্থান নেন। তবে শনিবার দুপুরে পুলিশের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে জনসভা শুরু হলে মহানগর, জেলা, উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এই জনসভায় অংশ নেয়। বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষও এই সভায় সমবেত হন। নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। তাদের হাতে হাতে ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং ধানের শীষ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড এবং পোস্টার। তারা বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে সভাস্থলে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। এসময় বিএনপি অফিসের দুই পাশের সড়ক, খুলনা হাদিস পার্ক, পুরাতন যশোর রোড, পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশ। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন করা হয়। বিএনপি নেতারা জানান, পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনের কেডি ঘোষ রোডের পশ্চিম পাশে সমাবেশের অনুমতি দিলেও সকাল থেকে সেখানে মঞ্চ তৈরি ও মাইক টানাতে বাধা দেয়। তবে দুপুর ১টার পর থেকে মঞ্চ তৈরি ও মাইক টানানো শুরু হয়। তারা অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার রাত ও গতকাল শনিবার সকালে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।