গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলে সিট চেয়ে দেয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে মারাত্মক আহত করেছে শাখা ছাত্রলীগ। মারধরের কারণে তার বেগতিক অবস্থা দেখে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এ সময় তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাবির ফজজুল হক মুসলিম হলে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী কাওসার মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর মারধরকারীরা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক অভি (মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ), দপ্তর সম্পাদক এনায়েত (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ) সহ বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে মূলহোতা অভি ও এনায়েত উভয়েই চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। মারধরকারীরা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দিক শিশিমের অনুসারী। এর মধ্যে এনায়েতের বিরুদ্ধে চানখারপুল এলাকার বনফুলের ম্যানেজারকে সিগারেটের আগুন দিয়ে ছ্যাকা দেয়ার অভিযোগ আছে।
জানা যায়, ওই হলে দীর্ঘদিনের সিট সংকটের কারণে হলের বিভিন্ন দেয়ালে সিট চেয়ে বিভিন্ন বক্তব্য লেখেন গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় শিশিমের অনুসারীরা কাউসারকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গেস্টরুমে (ছাত্রলীগের আদালত) নিয়ে আসে। কিন্তু কাউসার ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। এসময় ছাত্রলীগ নেতারা তার কথা আমলে না নিয়ে তাকে নির্মমভাবে মারধর করে। একপর্যায়ে কাউসারের নাক দিয়ে রক্তক্ষরণও হয়। একইসাথে তিনি কয়েক দফায় বমি করেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে হলে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হলে আনার পর আবার বমি করলে তাকে আবারো হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্বশেষ খবরে, তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে গিয়ে কাওসারকে ১০০ নাম্বার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে। তার শরীরে স্যালাইন চলছিল। মারধরের কারণে কাওসার এতটাই দুর্বল হয়েছে যে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাসপাতালে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের অবস্থানের কারণে ও ফের মার খাওয়ার আশঙ্কায় ভয়ে মুখ খোলেনি কাওসার।
কর্তব্যরত ডাক্তার জানায়, কাওসারকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন আছে কিনা তা জানার জন্য সিটিস্ক্যান করাতে হবে। কিন্তু তা কেন করা হয়নি বা কেন করানো হচ্ছে না তা বলতে পারব না। কেন কাওসারের সিটিস্ক্যান করাচ্ছেন না জানতে চাইলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শিশিম। তিনি বলেন, তাকে (কাওসার) মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এর কিছুক্ষণ পরে কাওসারকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যান শিশিম। এসময় তিনি বলেন, তাকে (কাওসার) জোর করে কয়েকজন মিলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। এজন্য সে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছে।
এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ সব ঘটনায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ। সম্প্রতি আহত হওয়া এহসান রফিকের চোখের মারাত্মক আঘাতের পরপরই ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হলেন কাওসার। এর আগে বিজয় একাত্তর হলের আশরাফুল ইসলাম আশু। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মারধরে বের করেছে ছাত্রলীগ। নিজেদের কথার বাইরে কাজ করলে শিক্ষার্থীদেরে ওপর চালানো হয় নির্যাতন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হল প্রশাসন থাকে নির্বিকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।