পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘খুনিরা এই শহরেই ঘুরছে। আমাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়। অথচ পুলিশ বলছে আসামীরা কোথায় জানান, আমরা ধরে আনব। পুলিশের ভূমিকায় আমরা হতাশ। তাদের কর্মকান্ডে মনে হয় তারা মামলা তদন্তে আগ্রহী নয়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলেন নাছিম আহমেদ সোহেলের পিতা মোঃ আবু তাহের। সন্তানের খুনিদের দ্রæত গ্রেফতারে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার আকুতি-‘আমার ছেলের দ্বিতীয় মৃত্যুবাষির্কীর আগেই খুনিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিন।’ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র নাছিম আহমেদ সোহেল খুনের তদন্ত শেষ হয়নি দুই বছরেও। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যে সন্তান সংসারের হাল ধরার কথা এখন সেই সন্তানের ঘাতকদের বিচারের দাবিতেই রাস্তায় নামতে হচ্ছে পুত্রশোকে কাতর আবু তাহেরকে।
চট্টগ্রামে সোহেল হত্যা মামলার মতো চাঞ্চল্যকর সুদীপ্ত বিশ্বাস ও দিয়াজ ইরফান চৌধুরী খুনের মামলা তদন্তেও গতি নেই। খুনিরা ধরা পড়ছে না, থামছে না স্বজনদের আহাজারী। সন্তানের খুনিদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামছেন হতভাগ্য পিতা-মাতা। দেশজুড়ে তোলাপাড় সৃষ্টিকারী এই তিন খুনের মামলার তদন্ত কবে শেষ হবে তা খোদ তদন্তকারী কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। সোহেলের মতো সুদীপ্ত বিশ্বাস এবং দিয়াজ ইরফানও ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তারা খুন হয়েছেন নিজ দলের নেতাকর্মীদের হাতে। এই তিন মেধাবী ছাত্রের পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। নিজ দলের সরকারের সময়ে প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে এখন বিচারের দাবিতে তাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে।
২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে খুন হন নাছিম আহমেদ সোহেল। এ ঘটনার পর সোহেলের পিতা আবু তাহের বাদী হয়ে ৩৩ জনকে আসামী করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। খুনের ভিডিও ফুটেজ দেখে এজাহারনামীয় আসামী করা হয় ১৩ জনকে। এখনও প্রধান আসামীসহ খুনিরা ধরা পড়েনি। ৫ মার্চ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও খুনিদের গ্রেফতারে নির্দেশ দেন। তাদের নির্দেশনার পরও আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে সোহেলের বাবা বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকাÐ দেখে মনে হয় তাদের চেয়েও শক্তিধর কেউ পুলিশকে থামিয়ে রেখেছে। সোহেলের বাবার অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় ১১ জনসহ মোট ১৪ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের নাম পরবর্তী তদন্তে এসেছে। এখনো হত্যাকাÐের মূল আসামী যে সোহেলকে ছুরিকাঘাত করেছে, ইব্রাহীম ওরফে সোহান তাকে ধরা যায়নি। সে কারণে এখনো অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না।
সোহেলের পিতা আবু তাহেরের মতো সন্তানের খুনিদের বিচারের অপেক্ষায় আছেন সুদীপ্ত বিশ্বাসের পিতা সাবেক স্কুল শিক্ষক বাবুল বিশ্বাস। সুদীপ্ত খুনের পর ত্রিশ বছরের বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান তিনি। পুত্রের খুনিদের বিচারের অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে তা এখনও অনিশ্চিত। গত বছরের ৬ অক্টোবর নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় সুদীপ্তকে। নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস সিটি কলেজ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। এ ঘটনায় তার বাবা বাবুল বিশ্বাস বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত হত্যাকাÐে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে সুদীপ্তর ওপর হামলার কথা জানালেও ‘বড় ভাইয়ের’ নাম জানায়নি।
সর্বশেষ এ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী রুবেল দে ওরফে চশমা রুবেলকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমাÐের অনুমতি দেয় আদালত। সুদীপ্ত হত্যা মামলার আইও সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমীন বলেন, রিমান্ডের অনুমতি পাওয়া গেলেও তাকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। যে কোন সময় জেলখানা থেকে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। মামলা তদন্তে অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুনের কারণ জানা গেছে তবে খুনের সাথে জড়িত সবাইকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজ বাসায় খুন হন দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। মৃত্যুর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দুইটি সরকারি চাকরিও হয় তার। চাকরিতে যোগ দেয়ার আগেই খুন হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজির জের ধরে প্রতিপক্ষ তাকে খুন করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। সন্তানের খুনিদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। টানা কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনশনও করেন তিনি। তবে এখনও মামলা তদন্তে গতি আসেনি। দিয়াজের মা বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
দিয়াজের বড় বোন এডভোকেট জোবায়দা চৌধুরী নিপা বলেন, আদালত থেকে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তা তামিল করছে না, আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশের ভূমিকায় হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, খুনীদের সাজা না হওয়া পর্যন্ত আমি এবং আমার মা লড়াই চালিয়ে যাব। মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।