Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুল লা-মাযহাবী

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার, দিরাই উপজেলা থেকে : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যলয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুল হাসান দেশের বহুল আলোচিত ধর্মীয় আদর্শবাদী আহলে হাদিসের অনুসারী লা-মাযহাবী মতাদর্শী। রহস্যে ঘেরা তার পুরো পরিবার। সে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কলিয়ারকাপন গ্রামের হাফিজ আতিকুর রহমানের ছেলে। গতকাল (রোববার) হামলাকারীর গ্রামবাসীর সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীর বাড়িতে কেউ নেই, তাদের ঘরে তালা ঝুলছে। তার দুই চাচার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে চলে গেছেন। স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ফয়জুল হাসান ও তার পরিবারে অনেক তথ্য। তার বাবা হাফিজ আতিকুর রহমান কওমী মাদরাসার শিক্ষক ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী একজন আলেম, এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে সিলেটে বসবাস ও সেখানে একটি মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন। আতিকুর রহমানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তিন নম্বর হচ্ছে ফয়জুল হাসান। তার বড় দুই ভাই ও ছোট দুই বোন রয়েছে।
হামলাকারী ফয়জুল হাসান (১৯) উপজেলার ধল দাখিল মাদরাসা থেকে ২০১৪ সালে দাখিল পাস করে। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৯ সালের ৫ জুলাই। বড় ভাই এনামুল হাসান ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকুরী করছে। মেঝ ভাই আবুল হাসান ৬ মাস হয় কুয়েত প্রবাসী। এলাকাবাসী জানান, হামলাকারীর দুই চাচা আবদুল জাহার ও আবদুস সাদিক দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত প্রবাসী। তারা সেখানে থেকে আহলে হাদিস (লাÑমাযহাবি) এর দীক্ষায় দীক্ষিত হন। আব্দুল জাহারের ঢাকায়ও বাসা-বাড়ি রয়েছে, নিয়মিত তিনি ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। দেশে আহলে হাদিসের মতবাদ প্রচার-প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এলাকায় এসেও সেই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সাথে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও তাদের এক ভাই আব্দুল কাহার লুলাই ও হামলাকারী ভাতিজা ফয়জুল হাসান তাদের টাকা-পয়সার লোভে পরে আহলে হাদিসের অনুসারী হয়ে যায়।
চাচাদের মতাদর্শে আহলে হাদিসের অনুসারী হয়েই হামলাকারী ফয়জুল হাসান বাবার মতাদর্শের কওমী মাদরাসা ছেড়ে ২০১১ সালে ধল সরকারি দাখিল মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ধল গ্রামের এক বাড়িতে লজিং থেকে সেখান থেকে ২০১৪ সালে দাখিল পাশ করে। এরপর থেকে সিলেট থাকতো বলেই জানতো এলাকাবাসী। মাঝে-মধ্যে তার চাচা আহলে হাদিসের অনুসারী আব্দুল কাহার লুলাই মিয়ার বাড়িতে এসে দুয়েকদিন থেকে আবার কোথায় চলে যেত। সর্বশেষ গত ৩-৪ মাস পূর্বে ফেরিওয়ালা হয়ে এলাকায় এসে লুঙ্গি-গামছা বিক্রি করে গেছে। প্রবাসী ভাইদের অনুসারী না হওয়ার কারণে ২০১৫ সালে আরেক ভাই কারী আব্দুল বাতিনকে টাকার বিনিময়ে নাশকতার একটি মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে বলে জানান গ্রামের মুরুব্বিরা।
কলিয়ারকাপন গ্রামের দিল আমিন বলেন, হামলাকারীর বাবা একজন স্বনামধন্য আলেম ও কোরআনে হাফেজ। উনি দীর্ঘদিন যাবৎ সিলেটে থাকেন। তার দুই চাচা বিদেশ থাকে, দেশে এলে মসজিদে ভিন্নভাবে নামাজ পড়ত, সে সময় আমরা গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ করি। তিন-চার বছর হয় তার চাচারা দেশে আসলেও এলাকায় আসেনি। শুনেছি তারা ঢাকায় আসে আবার সেখান থেকে চলে যায়। ফয়জুল কিছুদিন পরপর বাড়িতে আসে।
গ্রামের সেবু মিয়া বলেন, তার বাপ একজন আলিম মানুষ কোরআনে হাফিজ। ফয়জুল ও তার গ্রামবাসী এ রকম ঘটনার প্রতিবাদ করলেও তারা মানে নি। তারা তাদের মতো করে ধর্ম-কর্ম করে আসছে।
সাবেক ইউপি সদস্য ও গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আব্দুস শীষ বলেন, তাদের পরিবারটি ভাল ছিল। ফয়জুল হাসানের দাদা তার সন্তানদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতাদর্শে লেখাপড়া করিয়ে ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রবাসী দুই ছেলে এখানে এসে এ মতবেদ সৃষ্টি করেন।
লুৎফুর রহমান চৌধুরী বলেন, ফয়জুল মসজিদে লা-মাযহাবি তরিকায় নামাজ আদায় করত। আমরা সুন্নি বিধান মত নামাজ আদায় করি। এ বিষয় নিয়ে গ্রামের মুরুব্বিরা তাকে সঠিক পন্থায় নামাজ আদায় করার পরামর্শ প্রদান করলেও তারা তা মানে নি। তারা তাদের মত করে ধর্ম করে যেত। গ্রামে সে ও তার পরিবার স্থায়ীভাবে থাকে না। ঘটনার তিন চারদিন আগে সে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। প্রায় চার মাস আগে সে ফেরিওয়ালার বেশে এসে গ্রামে লুঙ্গি-গামছা বিক্রি করে।
কলিয়ারকাপন গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি এ মসজিদে তিন বছর যাবৎ ইমামতি করছেন। তিনি আসার দুই-তিন বৎসর আগে মসজিদে নামাজ আদায়কালে ফয়জুল ও তার চাচা আব্দুল কাহার ও প্রবাসী দুই চাচার সঙ্গে মুসল্লিদের বিরোধ দেখা দিলে গ্রামবাসীর বিরোধিতার কারণে তারা আর মসজিদে মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি। তিনি আরও বলেন, তারা আহলে হাদিসের অনুসারী হয়ে এখানে লা-মাযহাবি মতবাদ প্রচারণা থেকে বিরত থাকে। ভাতিজা ফয়জুল হাসান ও ভাই আব্দুল কাহারকে ওই মতবাদের অনুসারী হয়ে ধর্ম-কর্ম পালন করেন।
ধল দাখিল মাদরাসার সুপার ফারুক আহমেদ জানান, ধল দাখিল মাদরাসায় ফয়জুল হাসানের জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে। ৫ জুলাই ১৯৯৯, সে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০১৪ সালে সে মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে। পরে কোথায় লেখাপড়া করেছে তা তিনি জানেন না।
দিরাই থানার ওসি তদন্ত এবিএম দেলোয়ার বলেন, প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পেরেছি, তারা ১০/১৫ বছর যাবৎ এলাকায় বসবাস করে না। ফয়জুলের বাবা সিলেটে থাকে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে তাদের স্থায়ী বাড়ি রয়েছে, ওইখানে তারা স্বপরিবারে থাকত। সে মাঝে-মধ্যে এলাকায় এসে ফেরিওয়ালার বেশে গামছা-লুঙ্গি বিক্রি করত। এর চেয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি। ফয়জুল মাদরাসায় লেখাপড়া করত। এ ঘটনায় র‌্যাব-৯ সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা তার চাচা আবুল কাহার লুলইকে আটক করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ