Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্রিপুরায় রাম-রাজত্বের যাত্রা শুরু ২৫ বছর বাম শাসনের অবসান

মানিক সরকারকে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ অথবা কেরালায় চলে যাওয়ার আহবান

প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:১৬ পিএম, ৩ মার্চ, ২০১৮

ইনকিলাব ডেস্ক
উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি ও আদিবাসীদের সংগঠন আইপিএফটির জোট। ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের ৫৯টিতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি ৩৫টিতে, আইপিএফটি ৮টিতে এবং সিপিআইএম ১৩টিতে জয়ী হয়েছে। তিনটি আসনের ফল এখনো পাওয়া যায়নি, কিন্তু বিজেপি-আইিএফটি জোট মোট ৪৩টি আসনে জেতায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়ে গেছে। রাজ্যে ২৫ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। তারা বলছে, ‘এই ফল অপ্রত্যাশিত’।
কিন্তু যে বিজেপি আজ এত বিপুল ভোট পেয়ে জয়ী হলো, সেই দলই ৫ বছর আগে ওই রাজ্যে প্রায় অস্তিত্বহীন ছিল। তাহলে কীভাবে এল এই জয়? বিশ্লেষকরা যেসব কারণগুলি দিচ্ছেন, তা হল, প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বা অ্যান্টি-ইনকামব্যান্সি ফ্যাক্টর: দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বামপন্থীরা। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজেই ২০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী। তাই ক্ষমতাসীন সরকার-বিরোধী হাওয়া এবার ছিলই, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বিজেপি নিজেদের মূল সেøাগানও দিয়েছিল ‘চলো পাল্টাই’ - অর্থাৎ পরিবর্তন চাই।
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা রাম মাধব গতকাল আগরতলায় মন্তব্য করেছেন, ‘চলো পাল্টাই সেøাগানটাই যে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন পেয়েছে, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে’। ‘বহু মানুষ যে বিজেপিকে ভালবেসে ভোট দিয়েছে, তা মনে হয় না। তারা বামফ্রন্ট সরকারকে পাল্টাতে চেয়েছে বলেই তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে,’ বলছিলেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গৌতম চাকমা।
সি পি আই এমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ত্রিপুরার অন্যতম শীর্ষ নেতা গৌতম দাস অবশ্য বলছিলেন, ‘অ্যান্টি-ইনকামব্যান্সি ফ্যাক্টর কতটা কাজ করেছে, সেটা ফলের বিস্তারিত বিশ্লেষণ না করলে তো বোঝা সম্ভব নয়’।
দ্বিতীয় কারণ বেকারত্ব, দুর্নীতির অভিযোগ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের ভোট পেয়েছে এবার - যাদের শিক্ষাদীক্ষা রয়েছে, কিন্তু হাতে কোনও কাজ নেই। অধ্যাপক গৌতম চাকমার কথায়, ‘শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা এ রাজ্যে প্রায় পাঁচ লাখ। তাদের ক্ষোভ তো থাকবেই’।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরায় প্রচারে গিয়ে বারে বারে এই বিষয়টার ওপরে জোর দিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তরুণদের হাতে কাজ দেওয়ার। সেটা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি-র পক্ষে এবং বামফ্রন্টের বিপক্ষে।
‘তবে ত্রিপুরাতে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, এটা কোনওমতেই মেনে নেওয়া যায় না। তা সত্তে¡ও যেভাবে অনুন্নয়নের কথা বলে বিজেপি জিতল, এটা সত্যিই অভাবনীয়,’ - মন্তব্য সাংবাদিক আশিষ গুপ্তর।
তৃতীয়তঃ আদিবাসী ভোট পড়েছে এবার বিজেপি-র বাক্সে। ত্রিপুরার এক-তৃতীয়াংশ আসন আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। সিপিআই এম নেতা গৌতম দাসের কথায়, ‘ওটাই ছিল আমাদের অন্যতম শক্ত জনভিত্তি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেখানে আমরা প্রায় কিছুই জিততে পারিনি। ওটাই আমাদের সবথেকে বড় ক্ষতি’।
আদিবাসী ভোট নিজেদের দিকে টানতে আঞ্চলিক দল আইপিএফটির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল বিজেপি। নয়টি আসনে আইপিএফটি লড়েছিল, যার মধ্যে আটটিতে তারা জিতেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক চাকমা অবশ্য বলছেন, ‘আইপিএফটি-র ঘোষিত নীতি হল পৃথক তুইপ্রাল্যান্ডের দাবি। তা থেকে তারা সরবে না। কিন্তু বিজেপির পক্ষে সেই দাবি মেনে নেওয়া কঠিন। তাই এই দুই জোট সঙ্গীর মধ্যে সংঘাত বাঁধবেই অদূর ভবিষ্যতে’।
চতুর্থতঃ তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়তে পেরেছে বিজেপি। বিগত নির্বাচনে যে দল কোনও শক্তি হিসাবেই পরিগণিত হত না, সেই দলই এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হতে পারল - কারণ তারা গত প্রায় দু’বছর ধরে জোর দিয়েছিল তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়ে তুলতে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতা সুনীল দেওধর ওখানেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন, সঙ্গে ছিলেন আরেক আর এস এস নেতা ও বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব।
খুব কাছ থেকে এবারের ত্রিপুরা নির্বাচন দেখেছেন, এমন একজন সাংবাদিক দিল্লিতে অসমীয় প্রতিদিন কাগজের প্রতিনিধি আশিস গুপ্ত বলছিলেন, ‘একটা সময়ে বামপন্থীরা যেভাবে ভোট করাত তৃণমূল স্তরে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে এবার বিজেপি সেটাই করেছে। ভোটার লিস্ট ধরে বুথভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিল তারা অনেকদিন আগেই। বামপন্থীরা সংগঠনের গর্ব করে - কিন্তু সেই আগের মতো করে ভোট করানোর দিকে তাদের নজর ছিল না’।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াও ত্রিপুরায় বিজেপির সংগঠন গড়ে তুলেছেন উত্তরপূর্বাঞ্চলে বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কংগ্রেস আমলে আসামের মন্ত্রী ছিলেন, তারপরে বিজেপির উত্তরপূর্ব জয়ের মূল কারিগর হয়ে উঠেছেন যিনি।
পঞ্চমতঃ কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস হয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতারা। বহু দিন ধরে কংগ্রেসই ছিল ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের প্রধান বিরোধী শক্তি। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে কংগ্রেসের একটা বড় অংশ যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসে - আর বছর কয়েক আগে সেই গোটা অংশটাই চলে আসে বিজেপিতে। ‘তারপরেই বিজেপির চিত্রটা পাল্টে যায় আমূল,’ মন্তব্য অধ্যাপক গৌতম চাকমার। নিজের অঞ্চলে তাদের সংগঠন আগে থেকেই মজবুত ছিল। সেটারই লাভ উঠিয়েছে বিজেপি।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম পিটিআই জানিয়েছে, ত্রিপুরাতে মোট ভোটার ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৩ জন। এর মধ্যে ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ৩৭৫ জন পুরুষ ও ১২ লাখ ৬৮ হাজার ২০ জন নারী ভোটার। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ১১ জন ভোটার রয়েছেন। এবার নতুন ভোটারের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮০৩ জন। এবার ভোট পড়েছে ৯১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
মানিক সরকারকে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ অথবা কেরালায় চলে যাওয়ার আহবান
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ অথবা কেরালায় ঠাঁই নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আসামের বিজেপি দলীয় এমপি হিমান্ত বিশ্ববর্মা। মানিক সরকারের সিপিআইএমকে ২৫ বছরের দুর্গ ত্রিপুরা থেকে বিদায় জানাচ্ছে বিজেপি। তারাই দৃশ্যত ওই রাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার এ মন্তব্য করেছে হিমান্ত বিশ্ববর্মা। তিনি এদিন আগরতলায় এক র‌্যালি করছিলেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানিক সরকারের সামনে এখন তিনটি অপশন আছে। তিনি চলে যেতে পারেন পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে এখনও সিপিআইএমের কিছুটা অস্তিত্ব আছে। না হয় তিনি চলে যেতে পারেন কেরালায়। সেখানে তার দল ক্ষমতায় আছে। তারা কেরালায় আরো তিন বচরের মতো ক্ষমতায় থাকবে। অথবা তিনি প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে যেতে পারেন। সূত্র : বিবিসি, এনডিটিভি, পিটিআই।



 

Show all comments
  • মানিক ৪ মার্চ, ২০১৮, ৪:৫৬ এএম says : 0
    সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশ্চিমবঙ্গ

১ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ