নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : লক্ষ্য ছিল বেশ কঠিন। লিটন কুমার দাসের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে সেই লক্ষ্য চলে এসেছিল একদমই নাগালে। কিন্তু প্রাইম দোলেশ্বরের মুঠো থেকে সেই ম্যাচ বের করে আনলেন মোহাম্মদ আজিম। শেষ পর্যন্ত যদিও জিততে পারেনি মোহামেডানও। তবে গতকাল এবারের লিগে প্রথম রোমাঞ্চকর টাই উপহার দিল ফতুল্লা।
৭ বলে প্রয়োজন ছিল ৬, বাকি ৪ উইকেট। প্রাইম দোলেশ্বর পরপর তিন বলে হারিয়ে ফেললো তিন উইকেট। এই ৭ বলে হলো ৫ রান- প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুম দেখলো প্রথম টাই-রোমাঞ্চ! ফতুল্লায় দোলেশ্বর বা মোহামেডান, কেউই কাউকে হারাতে পারেনি। তবে যে অবস্থা থেকে উঠে এসেছে মোহামেডান, তাতে তারা বোলার মোহাম্মদ আজিমকে ‘নায়ক’ তকমা দিতেই পারে। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুই উইকেটের সঙ্গে এই বোলার ৬ উইকেট নিয়েছেন ৬৭ রানে, লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে যা তার সেরা বোলিং ফিগার। এ মৌসুমে নিজের ৫ম ম্যাচে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেও দলকে না জেতানোর আক্ষেপেই পুড়েছেন লিটন।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডানের ইনিংসের হাইলাইটস তিন ফিফটি- অধিনায়ক শামসুর রহমানের ৭৫, রকিবুল হাসানের ৭২ ও বিপুল শর্মার ৫৩। ৫ম উইকেটে শামসুর ও রকিবুল যোগ করেছেন ১০৮ রান, পরের উইকেটে রকিবুলের সঙ্গে বিপুলের জুটি ৫০ রানের। ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে শেষ ওভারে গিয়ে আউট হওয়ার আগে বিপুল ঝড়ই তুলেছিলেন, ৫৩ রান করতে খেলেছেন মাত্র ৩১ বল, মেরেছেন ৩টি করে চার ও ছয়। ৬৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ফরহাদ রেজা- যার মাঝে আছে রকিবুল ও বিপুলের উইকেট। আর শামসুরের উইকেট নেওয়া মামুন নিয়েছেন ২টি।
রান তাড়ায় ১৪ রানে ওপেনিং সঙ্গী হারিয়ে ফেললেও অবিচল ছিলেন লিটন, করেছেন ১২২ বলে ১২৯ রান, ৮টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়। ফজলে মাহমুদ ও মার্শাল আইয়ুব লিটনকে সঙ্গ দিয়েছেন, তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। যেটা পেরেছেন ফরহাদ হোসেন। ৫২ বলে করেছেন ৫২, লিটনের সঙ্গে ৪র্থ উইকেটে তার জুটি ১২৪ রানের।
ফরহাদ-লিটন ফেরার পরে ৩০ বলে দরকার ছিল ৩৫, আজিমের এক ওভারে ১১ রান নিয়ে সেটা ২৪ বলে ২৪ রানে নামিয়ে এনেছিলেন জোহাইব খান। কাজী অনিকের করা ৪৯তম ওভারের শেষ বলে ক্যাচ দিয়ে দোলেশ্বরের উল্টো যাত্রাটা শুরু করেছিলেন শরীফুল্লাহ, যার শেষটা হয়েছিল আজিমের বলে জোহাইব ক্যাচ দেওয়ায়। মাঝে আজিমের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন মোহাম্মদ আরাফাত। আরাফাত সানি ও মামুন মিলে পরের ৪ বলে নিতে পেরেছেন ৪ রানই।
এই ম্যাচের প্রতীকি চিত্র ধরা যায় লিটনের উইকেটটিকে। ৪৩তম ওভারে গিয়ে তাইজুল ইসলামের হাতে মোহাম্মদ আজিমের বলে দিয়েছেন ক্যাচ, ৪২ বলে দোলেশ্বরের প্রয়োজন ছিল তখন ৫৬ রান। লিটনের সেঞ্চুরির ভিতে দাঁড়িয়ে দোলেশ্বর সেখান থেকে তুলতে পারল ৫৫, আর লিটনকে ছাপিয়ে ম্যাচসেরা হয়ে গেলেন আজিম।
টাই-ম্যাচের ব্যাপারটাই এমন। না হারলেও কেউ কেউ যে ভোগেন না জেতার আক্ষেপে! তাতে অবশ্য টাই-ম্যাচের রোমাঞ্চের কিছুই যায় আসে না!
এদিকে, সাভরে এবারের আসরে প্রথম হারের স্বাদ পেল আবাহনী লিমিটেড। রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে মাশরাফির দলকে ৯ রানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে জাকির হাসান ও আল-আমিনের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৯.২ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে প্রাইম ব্যাংক। জবাবে নাসির-সাইফের ১২৭ রানের জুটিতে ৯ উইকেটে ২৩৭ রানে থামে আবাহনী।
তবে এই ম্যাচেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন মাশরাফি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফেরাতে চেয়েছিল বিসিবি। তখন যে একটু আশা জাগেনি তা নয়। মাশরাফিকে আবারও এ সংস্করণে দেখার প্রহর গুনছে সবাই। কিন্তু মাশরাফি না ফেরায় আক্ষেপটা তাই বেড়েই চলছে। লিস্ট ‘এ’তে যে পেসার উইকেটের মালা গেঁথে চলছেন, তিনি আর যাই হোক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির মঞ্চে অন্তত খারাপ করতেন না!
লিগে এবার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকা দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার। দেশের ওয়ানডে অধিনায়কের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে জাতীয় দলে ব্যস্ততার কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটে সময় দিতে না পারার আক্ষেপটা এবার সুদে-আসলে তুলে নেবেন! তা নয় তো কী? ৭ ম্যাচে এ পর্যন্ত মাশরাফির শিকার ১৯ উইকেট! শুধু উইকেট শিকারেই নয় তালিকার শীর্ষ পাঁচ বোলারের মধ্যে স্ট্রাইক রেট এবং ইকোনমি রেটেও শীর্ষে মাশরাফি। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে গতকালও যেমন তার শিকার ৪১ রানে ৪ উইকেট।
আর মিরপুরে একতরফা ম্যাচে সৌকত আলীর ব্যাটে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সকে ৯৫ রানে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ওপেনার সৈকতের সেঞ্চুরিতে (১১৫) ভর করে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান তোলে শেখ জামাল। জবাবে গাজী গ্রæপ গুটিয়ে যায় মাত্র ১৭০ রানেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মোহামেডান-প্রাইম দোলেশ্বর, ফতুল্লা
মোহামেডান : ৪৯.৫ ওভারে ২৮৬ (শামসুর ৭৫, রকিবুল ৭২, বিপুল ৫৩; ফরহাদ ৩/৬৬, মামুন ২/৫৩)।
প্রাইম দোলেশ্বর : ৫০ ওভারে ২৮৬/৯ (লিটন ১২৯, ফরহাদ ৫২; আজিম ৬/৬৭, অনিক ৩/৫১)।
ফল : ম্যাচ ড্র।
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ আজিম (মোহামেডান)।
প্রাইম ব্যাংক-আবাহনী, বিকেএসপি
প্রাইম ব্যাংক : ৪৯.২ ওভারে ২৪৬ (আল-আমিন ৮৪, জাকির ৬২; মাশরাফি ৪/৪১, সাকলাইন ২/৪৭, গণি ২/৫৩)।
আবাহনী : ২৩৭/৯, ৫০ ওভার (সাইফ ৭৫, নাসির ৬৫; শরিফুল ৪/৫১, দেলোয়ার ২/৪৩)।
ফল : প্রাইম ব্যাংক ৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : শরিফুল ইসলাম (প্রাইম ব্যাংক)।
গাজী গ্রæপ-শেখ জামাল, মিরপুর
শেখ জামাল : ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (সৈকত ১১৫, হাসানুজ্জামান ৪৫, সোহাগ ৪২, ইলিয়াস ৩৩; রাব্বি ২/৬৪, নাঈম ২/৪৯)।
গাজী গ্রæপ : ৪২.২ ওভারে ১৭০ (মেহেদি ৩৬, মুমিনুল ১০, আসিফ ১৩. গুরকিরাত ৬৭, নাদিফ ২০; সাজেদুল ২/১৪, সোহাগ ২/৩০, কামরুল ২/২৯, ইলিয়াস ২/৩৮)।
ফল : শেখ জামাল ৯৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সৈকত আলী (শেখ জামাল)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।