পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দুনিয়াব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষিতে যেখানে বিদ্যুতের মূল্য কমার কথা বাংলাদেশে তার উল্টোটি ঘটতে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। গত মঙ্গলবার নিজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ভর্তুকি ও লোকসান কমিয়ে আয়-ব্যয়ে সমতা আনতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ফার্নেস ওয়েলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফার্নেস ওয়েলের দাম কমলে বিদ্যুতের দাম কমবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন সমন্বয় করাটা বৃদ্ধিও হতে পারে। দেখতে হবে আমরা কিসের সাথে সমন্বয় করছি। ডেভেলপমেন্টের সাথে সমন্বয় করলে দাম বাড়বে। যদি ডেভেলপমেন্টের সাথে সমন্বয় না করি তাহলে দাম কমবে। তিনি মনে করেন সরকার এখনো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, সরকার ধীরে ধীরে সে জায়গা থেকে সরে আসতে চায়। প্রকাশিত অন্য খবরে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে মতামত দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে চার সচিবকে চিঠি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তেলের দাম এখন কমানোর দরকার হয়ে পড়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চার সচিবকে দেয়া চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তেলের দাম কমালে সারা দেশে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- চাঙ্গা হয়ে যাবে এবং সার্বিক প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়বে। তিনি তার চিঠিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যহ্রাসের কথাও উল্লেখ করেছেন।
ফার্নেস তেলের দামের সাথে সাধারণ গ্রাহকদের সরাসরি সম্পর্ক নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই তেল ব্যবহৃত হওয়ায় এর দামের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম কমবেশি হওয়ার বিষয়টি জড়িত। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ফার্নেস তেলের দাম ১৫ থেকে ১৬ টাকা কমতে পারে। অথচ বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে বলা হচ্ছে। একথা সকলেই স্বীকার করেন যে, উৎপাদন-উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের কোন বিকল্প নেই। বিদ্যুতের মূল্য যদি সাশ্রয়ী না হয় তাহলে সে বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত হবে না। দেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে এখন নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে। উন্নয়নের সূত্র ধরেই বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সিপিডি মনে করছে, তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ০.৩ শতাংশ বাড়বে। দেশের ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন, তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করা হলে অর্থনীতিতে তার বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রকৃতপক্ষে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ এসবকিছু উন্নয়নের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনে ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আবার ভারত থেকেও বেশি দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা অনেক আগ থেকেই রয়েছে। দীর্ঘদিন পর যখন দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে, তখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও এক ধরনের স্ববিরোধী হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। যে হারে তেলের দাম কমার কথা বলা হচ্ছে আর যে মাত্রায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে তাতে তেলের মূল্য কমানোর কোন প্রভাবই অর্থনীতি বা জনসাধারণের উপর পড়বে না।
বর্তমান বিশ্বে উন্নয়ন ধারণাকে কোন একক দেশের মনে করার কারণ নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন-বাণিজ্যের সাথে প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়লে উন্নয়ন ও উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমারে এখন অনেক জ্বালানি মজুদ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে যেসব পরামর্শ দিয়েছে সেগুলোতে কার্যত সংশ্লিষ্টরা নজর দেননি। এমনিতেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। বিনিয়োগের বন্ধ্যাত্ব কাটছে না। দিন দিন দেশ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতায় যেখানে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য কমানো জরুরি সেখানে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কার্যত আত্মঘাতী হতে পারে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় তেল-গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয়ের পাশাপাশি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি না করাই হবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।