Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বোরো আবাদের ধুম : ছাড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রা

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বোরো আবাদের ধুম পড়েছে। ইতোমধ্যে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাজারে ধান ও চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে এবার আগ্রহী হয়ে উঠে কৃষক। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সার ও বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। গেল বর্ষায় বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় খাল-নালা-পুকুর-দীঘিতে পানির কমতি নেই। এ কারণে সেচ নিয়ে এবার দুশ্চিন্তা নেই চাষীদের। বিদ্যুৎ সরবরাহও গতবারের তুলনায় বেড়েছে।
সবকিছু অনুকূলে থাকায় দ্বিগুণ উৎসাহে মাঠে প্রান্তিক চাষীরা। কৃষি বিভাগের হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চার শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ২৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর। গতকাল পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪২২ হেক্টরে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বোরো আবাদ হয়। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ আরও অনেক বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এবার এ অঞ্চলের ৯ লাখ ৯২ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন (চাল) ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আবাদের মত ফলনেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার আশা করছেন তারা।
দেশে চালের দাম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আমন ফসল ঘরে উঠার পরও চালের দাম তেমন একটা কমেনি। দুই সপ্তাহ আগে চালের দাম আরও এক দফা বেড়ে গেছে। আগামী দিনে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান আবাদে মনোযোগী হচ্ছে কৃষক। চট্টগ্রাম অঞ্চলে অন্যবার ২ লাখ হেক্টরের মত জমিতে বোরো চাষ হতো। শতভাগ সেচনির্ভর হওয়ায় ফসলের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোরো আবাদ। এ কারণে চাষীরা বোরো আবাদে আগ্রহ দেখাতেন না। আবার সরকারি তরফেও ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ রক্ষায় বোরো চাষের বদলে আউশ চাষে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হয়। এবারও আউশ আবাদে প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বোরো আবাদে এ ধরনের কোন ভর্তুকি বা প্রণোদনা নেই। তবে এবার চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকহারে বোরো আবাদের ঝুঁকছে প্রান্তিক চাষীরা। কৃষকরা বলছেন, আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। এ কারণে আবাদ খরচও বাড়ছে। তবে বাজারে ধান চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ওই খরচ পুষিয়ে নেয়ার আশায় আবাদ করে যাচ্ছেন তারা। কৃষি বিভাগের তরফ থেকে উচ্চ ফলনশীল বীজও সরবরাহ করা হয়েছে। এ কারণে ফলন বাড়বে এমন প্রত্যাশা চাষীদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাশ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আবুল হোসেন তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়া সার ও বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং সেচ সঙ্কট না থাকায় এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। আবাদ বেড়ে যাওয়ায় ফলন বাড়বে আর তাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত বোরো আবাদে কোন সমস্যা বা সঙ্কট আমাদের নজরে আসেনি। প্রান্তিক চাষীরা এবার প্রচÐ উৎসাহ নিয়ে আবাদ করে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও যাবতীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের হিসেবে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৫৫ হাজার ৬৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯১ শতাংশ। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৩২৩ হেক্টর। চট্টগ্রাম জেলায় মধ্য মার্চ পর্যন্ত বোরো আবাদ হয়। কয়েক বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় উজানে সমুদ্রের লোনা পানি উঠে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর উপকূলে কয়েকটি উপজেলায় বোরো আবাদ ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু গেল বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার লবণাক্তার সমস্যা নেই। ফলে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপকহারে বোরো আবাদ হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলায় ৫৫ হাজার ৪১৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ। ওই জেলায় এবার ৫৬ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নোয়াখালীতে ৫৯ হাজার ২২৬ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গতকাল পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৭৩ হাজার ২শ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১২৪ শতাংশ। ফেনী জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ১৪৪ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ২৪৯ হেক্টরে। ল²ীপুর জেলায় ২৫ হাজার ৩৪৬ হেক্টরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গতকাল পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯৫ হেক্টর। এ জেলাতেও আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসেবে বোরো আবাদের জন্য সুষম সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। গতকাল সারের মজুদ ছিল স্বাভাবিক। এরমধ্যে ইউরিয়া ছিল ৯ হাজার ১৯৭ মেট্রিক টন, টিএসসি ২ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৫২ মেট্রিক টন এবং ডিএপির মজুদ ছিল ১ হাজার ১৮৭ মেট্রিক টন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ