পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্রিকেটে অহমিকা আর অতিউচ্ছ্বাসের কালো ছায়া!
ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে থ্যাংসলেস জব হচ্ছে কোচিং। এটা পৃথিবীব্যাপী সব ক্রীড়াঙ্গনেই অত্যন্ত জোরালোভাবে স্বীকৃত। তারপরেও যুগ যুগ ধরে এই কোচিংয়ের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারেই বিবেচিত হয়ে আসছে সব ধরনের খেলাধুলাতেই। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও এই বাস্তবতা সমানভাবে প্রযোজ্য। আর এই ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ হিসেবে নাম লিখিয়েছেন আমাদের ক্রিকেট দলের সাবেক শ্রীলঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
নিঃসন্দেহে এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের অকাল মৃত্যুর পর সারা বাংলাদেশের মানুষই এখন ক্রিকেটের পিছু নিয়েছে। ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইতোমধ্যেই অনেক সাফল্য এসেছে এবং এই সাফল্যের কারণে আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের এখন অন্যতম প্রধান পরিচিতি একটি ক্রিকেটিং নেশন হিসেবে। নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের এক প্রাপ্তি। বাংলাদেশে ক্রিকেটের শুধু ব্যাপক জনপ্রিয়তা আর প্রসারই বাড়েনি এর সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের আর্থিক সম্পৃক্ততাও বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলাংশে এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ অর্থ ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও এখন বিশ্বের অন্যতম স্বচ্ছল ও ধনী ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে নানাবিধ আর্থিক সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন আর্থিক সমস্যা নেই এবং যখন যত টাকা চায় তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়ে যায়। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে প্রাপ্ত অতিমাত্রার পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক বড় প্রাপ্তি যা এখনো বিশ্বের অনেক সেরা সেরা দলগুলোরও নেই।
অথচ এত বিশাল পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতার সাগরে ভেসে বেড়ানোর পরেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোন ধারাবাহিকতা নেই, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ বিসিবি যথাযতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে কি না সেই ব্যাপারেও নানা ধরনের প্রশ্ন উঠা শুরু হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে।
সর্বশেষ দেশের মাটিতে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল দল শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের লজ্জাজনক পরাজয়ের বিষয়টি দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে ক্রীড়ামোদিদেরকে। খেলাধুলায় হার-জিত থাকবেই এবং যে কোন দলের সঙ্গেই বাংলাদেশ হারতেই পারে যেটি খেলাধুলায় একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তাই বলে দেশের মাটিতে অপেক্ষাকৃত অনেক শক্তিশালী দল হয়েও বাংলাদেশ যেভাবে পৃথিবীর এই মুহূর্তের সবচেয়ে দুর্বল দল শ্রীলঙ্কার কাছে লজ্জাজনকভাবে নাস্তানুবুদ হয়েছে সেটা কোনভাবেই মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল মাঠে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাঝে সর্বাত্মক চেষ্টা ও লড়াই করার মানসিকতার প্রকট অভাব। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই লজ্জাজনক পরাজয়ের দায়ভার অবশ্যই সর্বাগ্রে নিতে হবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরকে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারাও কোনভাবেই এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে হাথুরুসিংহে পদত্যাগ করার পর এতদিনেও তারা দলের জন্য একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কোচ নিয়োগ দিতে না পারা। এইক্ষেত্রে বিসিবির আরেকটি চরম ব্যর্থতা হচ্ছে বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে ব্যাপক সফলতা দেখানোর পরেও হাথুরুসিংহকে দলে ধরে রাখতে না পারাটা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ দলের কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় হাথুরুকে মেনে নিতে পারছিলেন না এবং ঐ কয়জন খেলোয়াড়ের প্রচÐ বিরোধিতা আর অসহযোগিতার কারণেই তিনি বাংলাদেশ দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। সূত্রমতে জানা গেছে, পদত্যাগের আগে হাথুরুসিংহে বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে জানালেও তারা এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ এইক্ষেত্রে বিসিবির কর্মকর্তাদের অবশ্যই উচিৎ ছিল বাংলাদেশ দলে হাথুরুসিংহের আবদান ও গুরুত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করে তার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়া এবং অভিযুক্ত খেলোয়াড়দেরকে কঠোরভাবে সকর্ত করা। বরং সব জেনেও ক্রিকেট বোর্ড ব্যাপারটি নীরব থেকে প্রকারন্তরে কোচ থাথুরুসিংহকে পদত্যাগ করার সুযোগটিই করে দিয়েছে। হাথুরুসিংহের এই অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের বিষয়টি ভিশনভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। যার প্রমাণ, পরবর্তীতে নানাভাবে চেষ্টা করেও বিসিবি এখনো পর্যন্ত কোচ নিয়োগ দিতে পারেনি। যে কারণে বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনকে দিয়ে আনঅফিসিয়ালি দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে যা ইতোমধ্যেই সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট বর্তমানে যে অবস্থানে এসেছে এবং রয়েছে তাতে কোনভাবেই এক মুহূর্ত এই দল কোচবিহীন থাকার কথা নয়। এবং হাথুরুরসিংহের বিকল্প কোনভাবেই সুজন হতে পারেন না। এই ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় অহমিকা আর আত্মতুষ্ঠিতে উৎফুল্ল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা কোচ হাথুরুসিংহের পদত্যাগের বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দেয়নি এবং অহঙ্কারে গা ভাসিয়ে নিশ্চিতভাবেই ধরে নিয়েছিলেন যে হাথুরুসিংহের দুর্বল শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করার জন্য কোচবিহীন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাই যথেষ্ঠ। বরং বিসিবির কর্মকর্তারা খেলোয়াড়দের একটি অংশ এবং মিডিয়ার একটি অংশ ওৎপেতে বসে ছিলেন হাথুরুসিংহেকে চরমভাবে অপমান করার অপেক্ষায়। সে কারণে শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ জয়ের পর কোন কোন মিডিয়ার শিরোনাম করা হলোÑ “টাইগারদের হাথুরু বধ”!!
এই ঘটনায় অনেক বেশি পুলকিত ছিলেন বিসিবির কর্মকর্তারাও। অথচ তার পরের ম্যাচ থেকেই যখন হাথুরুসিংহের দুর্বল শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ দলকে তুলোধোনো করে একেবারে লজ্জায় ভাসিয়ে দিলো তখন আর কেউ হাথুরুর এই বাংলাদেশ বধকে নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করছেন না!! এক শ্রেণীর ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারও তাদের পক্ষপাতমূলক ধারাভাস্য দিয়ে বাংলাদেশ দলকে ওভাররেটেড করে দর্শকদেরকে বিভ্রান্ত করার অব্যাহত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সার্বিক অবস্থার পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি সবার আগে চলে আসে তা হলো বিসিবি এবং সকলের অতিমাত্রার অহমিকা, অহংকার বোধ, আত্মবিশ্বাস আর কাউকে গুরুত্ব ও পাত্তা না দেয়ার নেতিবাচক মানসিকতা। বাংলাদেশ ক্রিকেট ক্রিকেট বোডের কর্মকর্তারা এবং খেলোয়াড়রা সকলেই এই একই ভূমিকায় রয়েছেন। সকলেই মনে করছেন তাদের কারোরই কোন বিকল্প নেই এবং তারা সকলেই সবসময়ের জন্যই অপরিহার্য।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কাছে নাস্তানুবুদ হওয়ার পর সময় এসেছে নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনার। এই ক্ষেত্রে সবার আগে নিজেদেরকে সঠিক ভূমিকায় আনতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদেরকে। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়েই বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিয়োগ উঠেছে। সর্বশেষ বিপিএল পরিচালনায় নজিরবিহীন পক্ষপাতমূলক আচরণের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন বিসিবির পদস্থ কর্মকর্তারা। দল নির্বাচন নিয়েও নির্বাচকদের সাথে বিসিবির সন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠছে নিয়মিতভাবেই।
বিসিবির আরো একটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামকে যথাযতভাবে পরিচর্যা করতে না পারা। প্রচুর অর্থ খরচ করার পরেও মিরপুর সোটডিয়ামের উইকেট এবং আউটফিল্ড নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি। নিম্নমানের উইকেটের কারণে ইতোমধ্যেই মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ৩টি ডিম্যারিট পয়েন্ট দিয়েছে আইসিসি। আইন মোতাবেক আর যদি ২টি ডিম্যারিট পয়েন্ট চলে আসে তাহলে ১ বছরের জন্য ভেন্যু হিসেবে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে মিরপুর স্টেডিয়াম। অথচ গত বিপিএল চলাকালে এই মিরপুর স্টেডিয়ামের নিম্নমানের উইকেট সম্পর্কে সঠিক অভিযোগ করার কারণে উল্টো তামিম ইকবালকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়েছিল বিসিবি! যদিও একই সময় ব্রেন্ডন ম্যাককুলামও আরো কঠোর এবং বাজেভাবে মিরপুরের নিম্নমানের উইকেটের তীব্র সমালোচনা করলেও সেটা আবার নীরবেই হজম করেছে বিসিবি!! এই সকল ক্ষেত্রে কোনভাবেই বিসিবি তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারছে না।
সব কথার শেষ কথা, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের যে লজ্জাজনক পারফর্ম্যান্স তা চরমভাবে হতাশ করেছে বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদিদেরকে। কারণ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক অবস্থায় ক্রিকেটের কাছেই সকলের প্রত্যাশা অনেক অনেক বেশি। তাই সময় এসেছে দলকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কার্যকর ভূমিকা পালনে উদ্যোগী হওয়া এবং সেই সঙ্গে নিজেদের কার্যক্রমকেও পুরোপুরি জবাবদিহীতার মধ্যে আনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।