পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এহসান আব্দুল্লাহ : আজ মহান একুশে ফেব্রæয়ারি। ১৯৫২ সালের এইদিনে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জারিকৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে উত্তেজিত ছাত্রজনতা একটি মিছিল বের করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের তৎকালীন কলা ভবন সংলগ্ন আমতলা (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ জরুরী সেবা ভবন সংলগ্ন) থেকে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনায়েম খানের নির্দেশে পুলিশ সেই মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর সহ আরো অনেকে।
তারপর থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছরই এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে ভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিলে ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারী সারাবিশে^ একযোগে এই দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
একুশের এই ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের চিরস্মরণ করে রাখার উদ্দ্যেশ্যে ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহা কর্তৃক প্রবর্তিত বইমেলার নাম করণ করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাই এই বইমেলার সাথে যেন একুশের এক উতপ্রেত স্মৃতি জড়িত। পুরো ফেব্রæয়ারী মাস বইমেলার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদদের।
এই একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখকরাও সচেষ্ট হয়ে উঠেন বাংলা ভাষার উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অবদান রাখতে। প্রকাশকরা সুযোগ করে দেন বাংলা সাহিত্যে নতুন নতুন মুখ প্রকাশিত হবার। গতকাল ২০ ফেব্রæয়ারী বইমেলা প্রাঙ্গন ঘুড়ে দেখা গেল এই ভাষা দিবস নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার খন্ডচিত্র। অনেকেই কাল বইমেলায় এসেছেন বাংলা হরফের ছাপ দেয়া পাঞ্জাবী অথবা ফতুয়া পড়ে। মেয়েরা এসেছেন সাদা কালে শাড়ির উপর শহীদ মিনার আর অ আ ক খ লেখা প্রিন্টের ডিজাইন। বইমেলার প্রবেশ পথেই অনেক তরুণ হাতে তুলি আর রং নিয়ে ছোট শিশুদের হাতে মুখে একে দিচ্ছেন শহীদ মিনার সহ নানা বাংলা হরফ। তাতে যেন তাদের চোখেই দেখা যাচ্ছিল একুশের প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষাটা আসলে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। বায়ান্নর এই আন্দোলন আমাদেরকে বিশে^র বুকে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে দাড় করিয়েছে। ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া এটি আমরাই বিশ^কে সর্বপ্রথম দেখিয়েছি। তবে বর্তমানে হিন্দী সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের এই প্রাণের ভাষাটি যেন হুমকির মুখে। পাকিস্তান সরকার আমাদের যে ভাষা গিলাতে পারেনি অতি সহজেই পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র তার স্যাটেলাইট সংস্কৃতির মাধ্যমে তা আমাদের প্রজন্মের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে।
মিরপুরের একটি বেসরকারী স্কুলের শিক্ষিকা ফাতেমা জাহান স্বর্ণা বলেন, এই বইমেলাতো আসলে আমাদের প্রাণের স্পন্দন। এর মাধ্যমে আমাদের বাংলা সাহিত্য দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যাতে এর মাঝে কোন অপসংস্কৃতির চর্চা না হয়। অপসংস্কৃতি বলতে কি বুঝাতে চাইলেন জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, যাচ্ছেতাই বই প্রকাশ করা, আমাদের সংস্কৃতির সাথে বেমানান বিদেশী সাহিত্যের প্রমোট করা।
মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ১২৪টি।
গতকাল বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস : বহুত্ববাদ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের চার রাষ্ট্রনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আকসাদুল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মাহবুবুল হক। সভাপতিত্ব করেন শামসুজ্জামান খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের চার রাষ্ট্রনীতি নানা সময়ে রাজনৈতিক দুর্বিপাকের শিকার হয়েছে কিন্তু নানান সংশোধনীর পর এখনও তার জনমুখী বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে। অন্যতম রাষ্ট্রনীতি সমাজতন্ত্রের অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তি যদি ধরা হয় উদার সাম্য-ভাবনা, তাহলে সে লক্ষ্য পূরণে কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দৃঢ়তা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈষম-বঞ্চনার সঙ্গেও আপোষের প্রবণতা। স্বাধীন বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের আসন আগের মতো অটুট থাকার যৌক্তিকতা এখন আর রয়েছে বলে বলা চলে না। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার যে-অংশ বাঙালি নয় তাদের মর্যাদা এবং অধিকারও এখন সংরক্ষিত।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ভাষাভিত্তিক-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। স্বাধীন বাংলাদেশের চার রাষ্ট্রনীতি-জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁরা বলেন, আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির চেতনা¯্রােতে বহুত্ববোধের যে মানবিক ধারণা প্রবাহিত তা সামরিক শাসক ও ছদ্মগণতন্ত্রীরা সংবিধান সংশোধনীর নামে নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এদেশের মানুষ তাদের মর্মে মর্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা¯œাত সংবিধানের আদি মৌলনীতিগুলো লালন করে।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার ঘোষণা :
গতকাল বাংলা একাডেমি পরিচালিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৭ ঘোষণা করা হয়েছে। পুরস্কার পেয়েছেন কানাডা-প্রবাসী কবি মাসুদ খান এবং যুক্তরাজ্য-প্রবাসী কবি মুজিব ইরম। আগামী ২২ ফেব্রæয়ারি ২০১৮ বাংলা একাডেমি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
আজ মহান ২১ ফেব্রæয়ারি উপলক্ষ্যে মেলা চলবে সকাল ৮:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। সকাল ৭:৩০টায় একুশে বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী।
বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে- অমর একুশে বক্তৃতা। একুশে ফেব্রæয়ারির লক্ষ্য কী, অর্জনের পথ কোন দিকে শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ রাত ১২:৩০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।