Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হঠাৎ দিকভ্রান্ত বাংলাদেশ

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিদায়ের পর এখনো স্থায়ী কোনো কোচের দেখা পায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট। ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজ শুরুর আগে প্রধান কোচ নিয়েগে বিসিবিতে তোড়জোড় দেখা গেলেও বস্তুত তা ছিল নিষ্ফল প্রচেষ্টা। ফলে দেশের মাটিতে গুরুত্বপূর্ণ ত্রিদেশীয় সিরিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজ খেলতে হয়েছে প্রধান কোচ ছাড়াই। সিরিজ তিনটির ফলাফলও হয়েছে অপ্রত্যাশিত। ভাগ্যক্রমে ফল অনুকূলে আসলে তার রেশ কতদিন থাকত তা অবশ্য বলা মুশকিল। তবে তা না হওয়ায় জোর প্রশ্নÑ প্রধান কোচ না থাকাই কি দলের হঠাৎ এমন ছন্দপতনের প্রধাণ কারণ?
এ নিয়ে বর্তমান ও সাবেকদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলে যারা বর্তমান আছেন তারা বোর্ডের চাপে গা বাঁচিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন এটাই স্কাভাবীক। যেমনটা বলেছেন জাতীয় দলের টেস্ট স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। স¤প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় এক অনলাইন দৈনিককে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না যে কোচ না থাকাতেই আমাদের এই অবস্থা। হাথুরু যখন কোচ ছিল এই প্লেয়াররাই খেলেছিল। আর সুজন ভাই তো সবসময়ই ছিল। ওরকম নেতিবাচক কিছু মনে হয় না। সমস্যা হলো আমরা যে দলের বিপক্ষে খেলেছি তারা আমাদের অনেক কিছুই জানে। এটা একটা বড় ফ্যাক্টর।’
বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে হাথুরুসিংহের বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতাকেই দায়ী করছেন মুমিনুল, ‘হাথুরু আমাদের সম্পর্কে সব কিছু জানে বলেই ফায়দা নিতে পেরেছে। আমরা মূলত এখানেই পিছিয়ে ছিলাম। তবে আমাদের উচিত ছিল ওর ফায়দাটা নেয়া। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি।’ এছাড়া ইনজুরির কারণে সাকিবের অনুপস্থিতিও বাংলাদেশের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাই না থাকাটা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। টেস্টে উনি না থাকাটা অনেক বড় ধাক্কা। টি-২০’তে না থাকাটাও অনেক বড় ক্ষতি। আপনি দেখেন ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে ওনার ব্যাটিংটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উনি থাকলে ম্যাচের চেহারাই বদলে যেত।’
তবে দলের এমন দৃষ্টিকটু ও অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতাকে ভিন্নভাবে দেখছেন দলের সাবেক ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদের মতে, দল নির্বাচনে অদক্ষতাই এই ব্যর্থতার প্রধান কারণ। তিনি বলেন, ‘দলে অনেক চেঞ্জ হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি কিছু খেলোয়াড়ের অভিষেক ঘটানো হয়েছে। একটু বেশিই তাড়াহুড়া হয়ে গেছে। হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর শূন্যতাটা সম্ভবত আমাদের মধ্যে ছিল। আমরা ম্যাচও যখন হেরে গেছি তখন এই জিনিসটা আরও বেশি চোখে পড়েছে।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের মনে করেন, এমন খারাপ সময়ে দলকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া এবং সম্মিলিতভাবে সেটাকে মোকাবেলা করা। তিনি বলেন, ‘এরকম সিচুয়েশনে যদি আমরা একে অপরের দিকে পয়েন্ট আউট করার চেষ্টা করি, তাহলে এটি আমাদের জন্য ক্ষতি হবে। প্রথম পয়েন্ট যেটা- আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ক্রিকেটের জন্য যে সমর্থনটা দরকার সেটা জুগিয়ে যেতে হবে।’
দল খারাপ করলেও ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে সমালোচনার ঝড়। সেদিকে দলের কাউকে দৃষ্টিপাত না করার পরামর্শ নাফীসের
তবে জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজার অভিজ্ঞ ও তীক্ষ চোখ বলছে ভিন্ন কথা। দলের এমন ক্রান্তিলগ্নে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান ম্যাশ। দেশের ক্রিকেট সময়ের সাথে উন্নতি ঘটালেও দৃশ্যত উন্নতি নেই তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সে। শুধু মাঠের বিচারেই নয়, মাঠের বাইরেও নানা বিতর্কে জড়িয়ে উঠতি ক্রিকেটাররা নিজেদের নামের পাশে যুক্ত করছেন কালিমা। তাদের উদ্দেশ্যে কিংবদন্তী এই ক্রিকেটার বলেন, তরুণ ক্রিকেটারদের উচিত সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ্ রিয়াদের মতো ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবন অনুসরণ করা। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে মাশরাফি বলেন, ‘চারজন প্লেয়ারের নাম আমি বলবো। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ্ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল- ওদের পারসোনাল লাইফটা একবার দেখবেন। ওদের পারসোনাল লাইফের প্রভাব কিন্তু ওরা মাঠে এসে পেয়েছে।’
মাশরাফির মতে, একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত জীবনই নির্ধারণ করে দেয় তার ক্যারিয়ার কিংবা পারফরমেন্স কেমন হবে।
অতিরিক্ত মূল্যায়নের কারণে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা অল্প বয়সেই পেয়ে যান তারকাখ্যাতি। এতে কম দিনেই তারকা বনে যাওয়া ক্রিকেটাররা চলে যান বিপথে। মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়- একটা প্লেয়ার এসেই যখন ভালো খেলে, আমরা ধরেই নেই এখনই সে সেরা। আপনি যদি মহেন্দ্র সিং ধোনির দিকে তাকান, মানসিকভাবে এতো স্ট্রং খেলাটাকে লাস্ট ২-৩ ওভার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, টেল এন্ডারদের সাথে ব্যাট করে এগিয়ে যাওয়া, এই যে মেন্টালিটি এটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রভাব রাখে।’
মাশরাফি আরও বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের ফ্লেভার কতটা কঠিন, এটা হয়ত ওরা জানেই না। ওরা এই লেভেলের ক্রিকেট খেলেনি, হঠাৎ করে এসে খেলতে গিয়ে ওদের উপর চাপ পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদের মানসিক শক্তি বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণের শক্তিটা ঐখানে থাকে না।

হাথুরু আমাদের সম্পর্কে সব কিছু জানে বলেই ফায়দা নিতে পেরেছে। তবে আমাদের উচিত ছিল ওর ফায়দাটা নেয়া। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি Ñমুমিনুল হক

‘দলে অনেক চেঞ্জ হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি কিছু খেলোয়াড়ের অভিষেক ঘটানো হয়েছে। একটু বেশিই তাড়াহুড়া হয়ে গেছে’
Ñআফতাব আহমেদ, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার

তরুণ ক্রিকেটারদের উচিত সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ্ রিয়াদের মতো ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবন অনুসরণ করা’Ñ মাশরাফি বিন মর্তুজা

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ