নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আন্তর্জাতিক অভিষেক তো বটেই, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রীতিমতো বিশ্বকাপের ম্যাচও হয়েছে। তবে তারপরও কোন আমেজ লাগেনি এর গায়ে। কারণ এখনো যে এখানে খেলেনি বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলা হয়েছিল। খেলেছিল জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডের মতো পুচকে দল। তাতে কি আর খায়েস মেটে? ছয়টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হওয়ার পরও এবার তাই যেন প্রথম ম্যাচেরই আমেজ। গতকাল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সফরের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি তাই স্মরণীয় করে রাখার সবরকম চেষ্টাই করল স্থানীয় সংগঠকরা। টস হল বিশেষ কয়েনে, দু’দলকে দেয়া হল সংবর্ধনা। তাতেও ভাগ্য পরিবর্তন হলনা বাংলাদেশের। বাংলাদেশের গøানিতে নতুন করে যোগ হল এই শ্রীলঙ্কা দলের সফরটি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবারের সিরিজে কোন কিছুই ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। মাঠের বাইরের ইস্যু হয়ে যাচ্ছে বড়। মাঠের ক্রিকেটে মিলছে না তেতে উঠার বারুদ। হানা দিচ্ছে একের পর এক ইনজুরি। ওয়ানডে টুর্নামেন্ট, টেস্ট সিরিজ হারার পর মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও হার। সব হারিয়ে বাংলাদেশ যেন কিছু একটা পাওয়ার চেষ্টাই ছিল এই ম্যাচকে ঘিরে। সে হোক সান্ত¡না পুরষ্কার। সেটিও মিললনা মাহমুদউল্লাহর দলের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের উপর তাÐব চালিয়েছে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ২০ ওভারে ৪ উইকেটে তোলে ২১০ রান করেছে তারা। এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইশর বেশি রান করল শ্রীলঙ্কা। জবাবে ১৮.৪ ওভার শেষে মাত্র ১৩৫ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস। হার ৭৫ রানের।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবার খেলতে নামা বাংলাদেশ নেমেছে বেশ কয়েকটি বদল নিয়ে। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে পরিবর্তন এসেছে চারটি। চোট কাটিয়ে তামিম ইকবাল ফেরায় অনুমিতভাবেই বাদ পড়েনে জাকির হাসান। আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া আফিফ হোসেনের জায়গায় অভিষেক হয়েছে মেহেদী হাসানের। পেসার রুবেলের হোসের জায়গায় খেলছেন আবু জায়েদ রাহি। এছাড়া অফ ফর্মে থাকা সাব্বির রহমানকে বসিয়ে খেলানো হচ্ছে মোহাম্মদ মিঠুনকে। এই মাঠের রেকর্ড বলে এখানে পরে ব্যাট করা দলই বেশিরভাগ ম্যাচ জেতে। টস জিতে তাই বোলিংটাই বেছে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ভাগ্য বদল হল কই?
ঢাকার পর এই ম্যাচেও চলেছে বাজে বোলিংয়ের প্রতিযোগিতা। জম একজনই, সেই কুশল মেন্ডিস। সর্বোচ্চ ৭০ রান করেছেন তিনি। তবে ব্যাট করতে নামা সব লঙ্কান ব্যাটসম্যানই ছিলেন তেতে। রান পেয়েছেন সবাই। উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৯৮ রান। সব জুটিই জমেছে। থিসারা পেরেরা, দাসুন শঙ্কা, উপুল থারাঙ্গা সবাই তুলেছেন ছোটখাটো ঝড়।
ঢাকায় বাংলাদেশের গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড টপকে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। বড় রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারে ফিরে গেছেন সৌম্য সরকার। আকিলা ধনঞ্জয়ার অনেক বাইরের ফুল লেংথ বল তাড়া করতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন সৌম্য। পয়েন্টে ক্যাচ নেন জিবন মেন্ডিস। চার বলে শূন্য রানে ফিরেন সৌম্য।
প্রথম বলটি ডট। পরের বলটিতে ডিপ থার্ডম্যান দিয়ে হাঁকালেন ছক্কা। তৃতীয় বলে ফিরে গেলেন মুশফিকুর রহিম। শেহান মাদুশাঙ্কার অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করে উড়াতে চেয়েছিলেন মুশফিক। টাইমিং করতে পারেননি। মিড অনে সহজ ক্যাচ যায় থিসারা পেরেরার হাতে। ৩ বলে ৬ রান করে ফিরেন এই উইকেটরক্ষক বাটসম্যান।
দ্রæত ২ উইকেট হারিয়ে চাপ থেকে ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রানরেট ৭.৯। খারাপ বলা যাবে না কোনোভাবেই। ২১১ লক্ষ্য জানার পর হয়তো অস্বস্তি জাগবে কিন্তু অসম্ভব কোনো পরিস্থিতি নয়। সমস্যাটা দাঁড়াল অন্য এক বিষয়ে রানের পাশে উইকেটের ঘরটা যে বেশ পরিপূর্ণ আকার নিয়েছে এরই মাঝে। ৯ ওভার পেরোনোর আগেই অর্ধেক ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে। ৫ উইকেট নিয়ে শেষ ১০ ওভারে ১৩২ রান করা হয়তো অসম্ভব নয়, তবে এই বাংলাদেশ সেটা করতে পারবে তা পাড়ভক্তও মনে হয় না তখন বিশ্বাস করছিল। ২১১ তারা করতে নেমে ১৪ রানেই দুই উইকেট পড়ার পর সুযোগ এসেছিল মিঠুনের কাছে। ১৬৬.৬৭ স্ট্রাইকরেট টি-টোয়েন্টি সক্ষমতার কথাই বলছে। তবে এই স্ট্রাইক রেট মাত্র ৩ বলের (৫ রান)। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ২২ রান!
তামিম ও মাহমুদউল্লাহকে রান তাড়া নয়, ইনিংস মেরামতে নামতে হলো। কিন্তু মেরামত হওয়ার আশা শেষ হয়ে গেল তামিমের আরেকটি বাজে শটে। ২ ছক্কা ও ২ চার মারা তামিমের ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস অবশ্য এমনিতেও দলকে জয়ের পথে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
জাকির ও আফিফ দ্বিতীয় সুযোগ না পেলেও আরিফুলকে আজও নামানো হয়েছিল। জীবন মেন্ডিসের একটি সোজা বল বুঝতে না পারে দ্বিতীয় সুযোগে ২ রান করেই ফিরলেন বিপিএলে নজর কাড়া এই ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহ (৪১) আর সাইফউদ্দিন (২০) শেষ একটা চেষ্টা চালালেন, ম্যাচ জেতানোর জন্য নয় ২০ ওভার কাটানোর জন্য। একটু আগেই ব্যাটিং স্বর্গ মনে হওয়া উইকেটটা তখন যেন মাইন পোতা কোনো যুদ্ধক্ষেত্র! ১৫তম ওভারে ৪ বলের মধ্যে এ দুজনও চলে গেলেন। ১১৩ রানে ৭ উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে অন্তত একটা স্বস্তি দিয়ে ফিরেছেন সাইফউদ্দিন। যাক, বাংলাদেশ অন্তত ১০০ হারে হারছে না!
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হেরেছে ৭৫ রানে। রানের হিসাবে যৌথভাবে যা তৃতীয় বৃহত্তম হার। এমন পারফরম্যান্সের সঙ্গে তথ্যটা মানাচ্ছে ভালো!
টি-২০ সিরিজের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান
ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০
কুসল মেন্ডিস ২ ১২৩ ৭০ ৬১.৫০ ০/২
মাহমুদউল্লাহ ২ ৮৪ ৪৩ ৪২.০০ ০/০
গুনাথিলাকা ২ ৭২ ৪২ ৩৬.০০ ০/০
মুশফিক ২ ৭২ ৬৬* ৭২.০০ ০/১
শনাকা ২ ৭২ ৪২* - ০/০
বোলার
ইনি. ওভার উইকেট সেরা গড়
গুনাথিলাকা ২ ২.৪ ৩ ২/৩ ৬.৩৩
জীবন মেন্ডিস ২ ৪.০ ৩ ২/২১ ৯.৬৬
নাজমুল ২ ৮.০ ২ ২/২৫ ২৬.৫০
উদানা ২ ৬.০ ২ ১/১২ ২৮.৫০
মদুশনাকা ২ ৫.১ ২ ২/২৩ ৩১.০০
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ২য় টি-২০
টস : বাংলাদেশ, সিলেট
শ্রীলঙ্কা ইনিংস রান বল ৪ ৬
গুনাথিলাকা ক তামিম ব সৌম্য ৪২ ৩৭ ৩ ২
মেন্ডিস ক মেহেদী ব মুস্তাফিজ ৭০ ৪২ ৬ ৩
পেরেরা ক সৌম্য ব আবু জায়েদ ৩১ ১৭ ৩ ১
থারাঙ্গা ক সৌম্য ব সাইফউদ্দিন ২৫ ১৩ ৪ ১
শনাকা অপরাজিত ৩০ ১১ ৫ ১
চান্দিমাল অপরাজিত ২ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (লে বা ২, নো ১, ও ৭) ১০
মোট (২০ ওভার, ৪ উইকেট) ২১০
উইকেট পতন : ১-৯৮ (গুনাথিলাকা), ২-১৪৯ (পেরেরা), ৩-১৬০ (মেন্ডিস), ৪-২০৫ (থারাঙ্গা)।
বোলিং : আবু জায়েদ ৪-০-৪৫-১, নাজমুল ৪-০-২৮-০, মেহেদী ২-০-২৫-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৯-১, সাইফউদ্দিন ৪-০-৪৬-১, সৌম্য ২-০-২৫-১।
বাংলাদেশ ইনিংস (লক্ষ্য ২১১) রান বল ৪ ৬
তামিম ক দনাঞ্জয়া ব আপোনসো ২৯ ২৩ ২ ২
সৌম্য ক মেন্ডিস ব দনাঞ্জয়া ০ ৪ ০ ০
মুশফিক ক পেরেরা ব মদুশনাকা ৬ ৩ ০ ১
মিথুন ক মেন্ডিস ব মদুশনাকা ৫ ৩ ১ ০
মাহমুদউল্লাহ রান আউট (মেন্ডিস/উদানা) ৪১ ৩১ ৪ ১
আরিফুল এলবিডবিøউ ব মেন্ডিস ২ ৩ ০ ০
সাইফউদ্দিন ক বদলি (ভেন্ডারসে) ব উদানা ২০ ২১ ১ ১
মেহেদী ক উদানা ব শনাকা ১১ ১১ ১ ০
মুস্তাফিজ ব গুনাথিলাকা ৮ ৯ ১ ০
আবু জায়েদ স্টা. চান্দিমাল ব গুনাথিলাকা ২ ৩ ০ ০
নাজমুল অপরাজিত ১ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (ও ১০) ১০
মোট (১৮.৪ ওভারে অল আউট) ১৩৫
উইকেট পতন : ১-৮ (সৌম্য), ২-১৪ (মুশফিক), ৩-২২ (মিথুন), ৪-৫৯ (তামিম), ৫-৬৮ (আরিফুল), ৬-১১০ (মাহমুদউল্লাহ), ৭-১১৩ (সাউফউদ্দিন), ৮-১৩২ (মেহেদী), ৯-১৩২ (মুস্তাফিজ), ১০-১৩৫ (আবু জায়েদ)।
বোলিং : মদুশনাকা ২.১-০-২৩-২, দনাঞ্জয়া ৪-১-২০-১, শনাকা ১.৫-০-৫-১, পেরেরা ৩-০-৩৩-০, আপোনসো ৪-০-৩১-১, মেন্ডিস ১-০-৮-১, উদানা ২-০-১২-১, গুনাখিলাকা ০.৪-০-৩-২।
ফল : শ্রীলঙ্কা ৭৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : কুসল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)।
সিরিজ : ২ ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ২-০তে জয়ী।
সিরিজ সেরা : কুসল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।