Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেরে উঠুন মাওলানা বখতিয়ার

কোরআন-সুন্নাহর আওয়াজ জারি রাখতে আসুন পাশে দাঁড়াই

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : মুফতি মাওলানা বখতিয়ার উদ্দিন আল কাদেরী (৪০)। মাহফিলে মাহফিলে যিনি আল কোরআন-সুন্নাহর আওয়াজ বুলন্দ করে তুলতেন। হাজারো শ্রোতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার ওয়াজ শুনে বিমোহিত হতেন। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা তাফসির শুনতেন মুগ্ধ হয়ে। মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ-পরিবার-ব্যক্তি গঠনে সুন্দর দিক-নির্দেশনা দিতেন ইসলামী আদর্শের আলোকে। সভা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনারে ছিলেন প্রাণবন্ত আলোচক। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, অনেক দিন সেই প্রতিভাবান ওলামার সুমধুর কণ্ঠে নেই কোরআনের তিলাওয়াত, রাসূলের (সাঃ) শানে হাজারো কথামালা, কোরআন-হাদিসের যুক্তিনির্ভর প্রাঞ্জল বিশ্লেষণ। অ্যাপোলো হাসপাতালের শয্যায় তিনি প্রায় অচেতন। তার পুরো পরিবারে এখন চাপা কান্না হাহাকার। স্ত্রী আরিফা বিল্লাহ এবং ১২ বছর বয়সী পুত্র জাওয়াদ বিন বখতিয়ার ও আট বছর বয়সী কন্যা আইমান এখন পিতার দিকে নির্বাক তাকিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও গেছে শুকিয়ে। বখতিয়ারের অশীতিপর বাবা-মা এখন শয্যাশায়ী। প্রিয় পুত্রের দুর্ঘটনার খবর তাদের জানানো না হলেও পুত্রকে না দেখে কাঁদছেন তারা।
রাজধানী ঢাকা, বারো আউলিয়ার পবিত্র স্মৃতিধন্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের লাখ লাখ সুন্নি জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠ, এশিয়াখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার তাফসির বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (মোফাচ্ছির) মুফতি বখতিয়ার উদ্দিন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৮ জানুয়ারি কুমিল্লায় ওয়াজ মাহফিল শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে সীতাকুÐে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন দেশের প্রখ্যাত এ আলেমেদ্বীন। রাজধানী ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তিনি হাত পা নাড়তে পারছেন। তবে মস্তিষ্ক এখনও কাজ করছেনা। তবুও আশাবাদী চিকিৎসকরা। তারা বলছেন মাওলানা বখতিয়ার আরও উন্নততর চিকিৎসা লাভের সুযোগ পেলে ক্রমেই সেরে উঠবেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। তবে এ জন্য দরকার অনেক অনেক টাকা।
তার দ্রæত সুস্থতা কামনায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত হচ্ছে। সারা দেশে তার ওয়াজ মাহফিলের লাখো শ্রোতা-ভক্তসহ সুন্নি জনতা মহান আল্লাহর দরবারে তার শিফা কামনায় আহাজারি করছেন। তার হাজারো ছাত্র নামাজে দাঁড়িয়ে সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছেন। দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, খানকায় অগণিত মানুষ, আলেম-মাশায়েখগণ তার জন্য দোয়া করছেন, কাঁদছেন। তার শিফা কামনা করে সবার একটাই ফরিয়াদ ‘হে পরোয়ারদিগার সুন্নিয়াতের মুখপাত্র এই বলিষ্ঠ কন্ঠকে সুস্থ করে দিন!’ দেশ জাতি তথা ইসলামের জন্য তিনি যে খেদমত করে যাচ্ছিলেন তা যেন জারি থাকে এ কামনা করছেন সবাই।
মাওলানা বখতিয়ারের এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় অসহায় পরিবারের চাপা কান্না আর হাহাকার চলছে। চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। টানা ১৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাওলানা বখতিয়ারের শয্যাপাশে তার স্বজনেরা। অ্যাপোলো হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, মাওলানা বখতিয়ারের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়া প্রয়োজন। এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের মত আর্থিক সংগতি নেই বখতিয়ারের পরিবারের। তাকে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এমনকি ভারতের মাদ্রাজে নিতে হলে প্রয়োজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের। এ অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়াও ৩০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে। পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় ব্যয় হতে পারে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
দৈনিক ইনকিলাবে গত ১১ ফেব্রæয়ারি ‘উন্নত চিকিৎসায় সরকারের সহযোগিতার আবেদন : চট্টগ্রামে দুর্ঘটনায় আহত মাওলানা বখতিয়ার সঙ্কটাপন্ন : অসহায় পরিবারটি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুফতি মাওলানা বখতিয়ার উদ্দিনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারেন অনেকে। অনেকেই তার চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইনকিলাবের ওই প্রতিবেদনটি দিয়ে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সাহায্যে এগিয়ে আসার আদেন করা হয়েছে। তাতে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়াও পড়েছে। দেশ-বিদেশে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে বখতিয়ার উদ্দিনের চিকিৎসায় সরকারসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বখতিয়ারের স্বজনরা জানান, এ পর্যন্ত যে সাড়া পাওয়া গেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ অবস্থায় তার স্বজনেরা সরকার এবং সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সদয় সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আবেদন করছেন। তাদের প্রত্যাশা দেশের সুন্নি জনতার প্রাণপ্রিয় এ আলেমেদ্বীনের সাহায্যে ধনাঢ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উদারতায় দু’হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসবেন। বখতিয়ার উদ্দিনের কর্মস্থল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতি অছিয়র রহমান মাওলানা বখতিয়ার উদ্দিনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে প্রতিবেদন প্রকাশে শোকরিয়া প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দৈনিক ইনকিলাব এবং সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে দেশ, জাতি ও ইসলাম তথা সুন্নিয়তের যে খেদমত করে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বখতিয়ার আমার ছাত্র। কিন্তু তার মেধা তাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে। তিনি এখন দেশে জনপ্রিয় এক ইসলামী ব্যক্তিত্ব। সুন্নিয়তের তরক্কির জন্য তার খেদমত জারি রাখা জাতীয় স্বার্থেই জরুরী। তার চিকিৎসায় সবাই এগিয়ে আসবেন এ আবেদন করছি। মাওলানা বখতিয়ার ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাল ওয়ায়েজীন হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিলাদুন্নবী, কনফারেন্স, মাহফিল, সেমিনারসহ বিভিন্ন ফোরামে তিনি জ্ঞানগর্ব আলোচনা পেশ করতেন।
বখতিয়ারের বড়ভাই জসিম উদ্দিন গতকাল (বৃহস্পতিবার) বখতিয়ার উদ্দিনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ইনকিলাবকে বলেন, এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। এরমধ্যে গত দুইদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ তাকে যেন দ্রæত বিদেশে নেয়া হয়। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার তারা পারিবারিকভাবে একটি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বখতিয়ার তৃতীয়। আমি সবার বড়। বড় ভাই হিসেবে এখন সব দায়িত্ব আমার কাঁধে। তিনি তার ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। একইসাথে নিজের জন্যও দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আমি যেন এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারি। জসিম উদ্দিন জানান, বখতিয়ারের সাহায্যে ইতোমধ্যে অনেকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও তারা আশাবাদী। তিনি বলেন, যেভাবেই হোক আমরা তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা চালিয়ে যাব।
এদিকে বখতিয়ারের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা এখনও চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তাদের সবার স্বাভাবিক জীবনযাপন বলতে এখন কিছুই নেই। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বখতিয়ারের পুত্র জাওয়াদ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। কন্যা আইমানও একই মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। পিতাকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় তাদের পড়ালেখাও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পিতা বদিউল ইসলাম চৌধুরী (৮৫) দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। তাকে পুত্রের দুর্ঘটনার খবর জানানো হয়নি। এরপরও অনেকদিন পুত্রকে কাছে না পেয়ে কাঁদছেন তিনি। পুত্রের জন্য পাগলপ্রায় মাও। তাকেও এ খবর দেয়া হয়নি এখনও। পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মুফতি মাওলানা বখতিয়ার উদ্দিন চিকিৎসা সহায়তা তহবিল’ খোলা হয়েছে। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা ঃ হিসাব নং- ২০৫০৩৭২০২০০৫৪৫০১৪, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, অক্সিজেন মোড় শাখা, চট্টগ্রাম।

 



 

Show all comments
  • M S Alam ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:১৫ এএম says : 0
    PLEASE let's response unitedly and hands together helping for the better treatment Mawlana Bakhtiar. Thanks the daily INQILAB and the Editor Mr A M M Bahauddin.
    Total Reply(0) Reply
  • Nurul Amin ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:০৪ এএম says : 0
    একজন আলেমে দীনকে বাচাতে এগিয়ে আসুন।।কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ইনকিলাবের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরআন

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ