Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাহান্নামের শাস্তি শেষ হবেনা কখনো

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

\ শেষ \
এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। পৃথিবীতে জীবনভর বড় বড় নিয়ামত ভোগকারী যখন জাহান্নামের আযাবসমূহকে এক পলক দেখবে তখন সে পৃথিবীর সমস্ত নিয়ামতের কথা ভুলে যাবে। আনাস ইবনে মালেক (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, পরকালে জাহান্নামের এমন একজন অধিবাসীকে উপস্থিত করা হবে যাকে দুনিয়াতে সর্বাপেক্ষা বেশি নেয়ামত দান করা হয়েছিল। অতঃপর তাকে এক মূহুর্তের জন্য জাহান্নামে রাখা হবে। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো কল্যাণ দেখেছো ? তুমি কি কখনো নিয়ামত ভোগ করেছো ? জাহান্নামের একমূহুর্তের শাস্তি ভোগ এবং এর ভয়াবহতার কারণে সে সব ভুলে গিয়ে বলবে, আল্লাহর শপথ ! কখনোই আমি কল্যাণ দেখিনি এবং নিয়ামত ভোগ করিনি ! এরপর দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট অনুভব করা জান্নাতের অধিবাসী একজনকে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাকে একমূহুর্তের জন্য জান্নাতে রাখা হবে। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি কি কখনো কষ্ট ভোগ করেছো ? তোমার উপর কখনো কি বিপদ এসেছিলো ? সে বলবে, আল্লাহর শপথ! হে আমার রব ! আমি কখনো কষ্টে ছিলাম না আর আমার উপর কখনো কোন বিপদ আপতিত হয়নি। (মুসলিম) জাহান্নামের আগুনের প্রথম স্ফুলিংগই জাহান্নামীদের শরীর থেকে মাংসকে হাড্ডি থেকে আলাদা করে দিবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জাহান্নাম তাদের চেহারাগুলোকে দগ্ধ করে দিবে। তারা সেখানে বীভৎস আকার ধারন করবে। (সূরা আলমুমিনুন, আয়াত ১০৪) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, কখনোই নয়, নিশ্চয়ই এটা হলো লেলিহান অগ্নি, যা চামড়াকে তুলে নিবে। (সূরা মায়ারিজ, আয়াত ১৫,১৬) জাহান্নামের আগুনের একটি সাধারণ স্ফুলিংগ অট্টালিকা সমান হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই এটা প্রাসাদ সমান অগ্নিস্ফুলিংগ নিক্ষেপ করবে। (সূরা মুরসালাত, আয়াত ৩৩) জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ঊনসত্তর গুণ বেশি গরম হবে আর তার প্রতি অংশেই গরমের প্রচন্ডতা রয়েছে যেমন দুনিয়ার আগুনে রয়েছে। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নবি (সঃ) বলেছেন, তোমাদের এই আগুন যা আদম সন্তান প্রজ্জলিত করে তা জাহান্নামের গরমের চেয়ে সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর শপথ ! হে আল্লাহর রাসূল ! যদি তা দুনিয়ার সমানও হতো তা হলেও তা যথেষ্ট হতো। নিশ্চয়ই তা দুনিয়ার চেয়ে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেক গুণই দুনিয়ার সমান। (মুসলিম) জাহান্নামের আগুনের হাওয়া সহ্য করাও মানুষের সাধ্যাতীত হবে। জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন, সূর্যগ্রহণের নামাযের সময় জাহান্নামকে আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আর এটা তখন যখন তোমরা আমাকে দেখেছো পিছনে সরে এসেছি এই ভয়ে যে এর ভয়াবহ উত্তাপ আমাকে পেয়ে বসে। (মুসলিম) জাহান্নামের আগুনের কল্পনা যে ব্যক্তি মাথায় রাখে এমন ব্যক্তি আরামের ঘুম ঘুমাতে পারে না। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, আমি জাহান্নামের মতো এমন কিছু দেখিনি যে, এ থেকে পলায়নকারী ঘুমাতে পারে। আর জান্নাতের মতো এমন কিছু দেখিনি যে, এর প্রত্যাশি ঘুমিয়ে থাকতে পারে। (তিরমিযি) জাহান্নামের সবচেয়ে হালকা আযাব হবে, জাহান্নামীর পায়ে আগুনের জুতা পরানো হবে, যার ফলে তার মস্তিষ্ক বিগলিত হতে থাকবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রাসূল (সঃ) বলেছেন, জাহান্নামের সবচেয়ে হালকা শাস্তি দেয়া হবে আবু তালিবকে। তাকে পরানো হবে এক জোড়া জুতা যার কারণে তার মস্তক ফুটতে থাকবে। (মুসলিম) জাহান্নামে কাফেরের চামড়া বিয়াল্লিশ হাত মোটা হবে, একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে, তার বসার স্থান মক্কা ও মদীনার দূরুত্বের সমান তথা ৪১০ কিলোমিটার হবে। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবি (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই কাফিরের চামড়ার পুরুত্ব হবে বিয়াল্লিশ হাত। তার দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান। আর নিশ্চয়ই জাহান্নামে তার বসার স্থান হবে মক্কা ও মদীনার মাঝখানের দূরুত্বের সমান। (তিরমিযি) এই বিশাল আকৃতি দেয়া হবে বেশি করে শাস্তি আস্বাদনের জন্য। জাহান্নামীদের জন্য চার প্রকার খাবার পরিবেশন করা হবে। এগুলো হলো যাক্কুম নামে দুর্গন্ধময় তিক্ত ও কাটাযুক্ত খাবার, দ্বরি নামে কাটা বিশিষ্ট বৃক্ষ, গিসলিন নামে শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় পদার্থ এবং যাগুচ্ছা নামে বিষাক্ত কাটা বিশিষ্ট দুর্গন্ধময় খাবার। এছাড়া জাহান্নামীদের পাঁচ প্রকারের পানীয় দান করা হবে। এগুলো হলো, মাউন হামিম বা মারাত্মক গরম পানি, মাউন চদিদ বা ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত, মাউন কালমুহল বা তৈলাক্ত গরম পানীয়, গাচ্ছাক বা কাল দুর্গন্ধময় পানীয় এবং তিনাতুল খাবাল বা ঘাম। পরিশেষে জাহান্নামের ব্যাপারে নবি (সঃ) ও সাহাবাদের (রাঃ) ভয়ার্ত কিছু অবস্থার কথা উপস্থাপন করছি, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবি রাসূলদের সর্দার, যার পূর্বাপর সবকিছু আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে রেখেছেন, যিনি ছিলেন শতভাগ নিষ্পাপ একজন মানুষ, আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সঃ) জাহান্নামে আল্লাহর আযাবের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন। আল কুরআনুল কারিমে এসেছে, আপনি বলুন, যদি আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্য হই তাহলে নিশ্চয়ই আমি পরকালের মহা শাস্তিকে ভয় করি। (সূরা আনআম, আয়াত ১৫) উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে প্রচুর কান্নাকাটি করতেন। কায়েস ইবনে হাজেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা তাঁর স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি কান্না করতে লাগলেন । তাঁর স্ত্রীও কান্না করতে লাগলেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তুমি কান্না করছো কেন ? তাঁর স্ত্রী বললেন, আমি আপনাকে কান্না করতে দেখে কান্না করছি। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কথা স্মরণ করে কাঁদছি। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রত্যেককেই জাহান্নাম অতিক্রম করে যেতে হবে। আমি জানিনা আমরা তা থেকে মুক্তি পাবো কিনা ? (হাকিম) আমিরুল মুমিনিন ওমর (রাঃ) সব সময় জাহান্নামের ভয়ে অস্থির থাকতেন। তিনি প্রায়শই বলতেন, যদি আকাশ থেকে কোন ঘোষক ঘোষণা করে, হে মানব মÐলী ! তোমাদের মধ্যে একজন লোক ছাড়া তোমরা সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাহলে আমি ভয় পাই যে ঐ একজন আমি হয়ে যাই। আর যদি কোন ঘোষক আকশ থেকে ঘোষণা করে, হে মানব মÐলী ! তোমাদের মধ্যে একজন লোক ছাড়া তোমরা সকলেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তাহলেও আমি ভয় পাই যে ঐ একজন আমি হয়ে যাই। (আবু নুয়াইম) একবার ওমরা (রাঃ) আযাবের আয়াত তেলাওয়াত করে এত কাঁদলেন যে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন। একদা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কামারের দোকানে আগুন দেখে কাঁদতে লাগলেন। মোয়াজ ইবনে জাবালও (রাঃ) জাহান্নামের ভয়ে অনেক বেশি কান্নাকাটি করতেন। একদা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) জাহান্নামীদের পানি চাওয়ার কথা স্মরণ করে উচ্চ স্বরে কাঁদতে লাগলেন। সাঈদ ইবনে যোবাইর (রাঃ) জাহান্নামের স্মরণ করে কখনো হাসতেন। একবার হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ সাঈদ ইবনে যোবায়ের (রাঃ) কে ্িবস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলেন, আমার কাছে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, আপনি কখনো হাসেন না ! কেন ? তিনি তাকে বললেন, আমি কি করে হাসতে পারি অথচ জাহান্নামকে উদ্দিপিত করা হয়েছে, বেড়িগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আর আযাবের ফেরেশতারাও পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আছেন। (সাফওয়াতুস সাফওয়াহ)
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া হবে কোন বান্দার জন্য সবচেয়ে সেরা সফলতা। তাই আমাদেরকে সর্বদা পাপের কাজ ত্যাগ করা প্রয়োজন। পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস, রাসূল (সঃ) এর দেখানো পদ্ধতিতে এবং ইখলাছের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদাত করে যেতে হবে। প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালার কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতে হবে। তাঁর কাছে মহা সুখের স্থান জান্নাত চাইতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন! আমিন!



 

Show all comments
  • Rubel Ahamed ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:৩৭ এএম says : 0
    Allah tumi amader maf koro sokol kharapi theke dore rakho hefajot karo amader ke amin
    Total Reply(0) Reply
  • Arif ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৩০ পিএম says : 0
    allah is the great .
    Total Reply(0) Reply
  • Asraf ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:২৭ পিএম says : 0
    ALLAH amader dike rohomot o khomar dristyte tanan. Amin
    Total Reply(0) Reply
  • এ,এস,এম,ফজলুর রহমান ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:২৩ পিএম says : 0
    আল্লাহর বিধান এবং রাসুলের বানি ;যদি কেঊ আল্লাহর ও রাসুলের নির্দেশিত পথের ঊল্টে পথে চলবে তার শাস্তির ব্যপারে কোন সন্দেহ নাই।দুনিয়ার কোন শক্তির কাজ সেখানে নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ