বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে নভোমÐল বা মহাকাশ সম্পর্কে আলোচনার বিষয় অনেক, যা এ ক্ষুদ্র নিবন্ধে সম্ভব নয়। তবে স্রষ্টার অস্তিত্ব ও তাঁর এককত্বের প্রতি একজন মার্কিন নভোচারীর স্বীকারোক্তির কাহিনীটি উল্লেখ করার পর আমরা খনন বিজ্ঞানীদের নিকট চলে যাব। এখন থেকে পাঁচ-ছয় দশক আগে ছয় মাইল ভূমÐল খনন করার পর একটি প্রাচীর ভাঙার ব্যর্থ চেষ্টা করে অভিযান পরিত্যাগ করেছিলেন খননকারীরা। এ প্রসঙ্গে হযরত মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন, বর্তমানকালের বিজ্ঞানের সব শত্রæ-মিত্র মানবের চন্দ্র অবতরণের সত্যতা স্বীকার করেন। এখন পর্যন্ত বারবার চন্দ্রপৃষ্ঠে গমন, সেখানকার মাটি-শিলা ইত্যাদি আনয়ন এবং বিভিন্ন চিত্র গ্রহণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অন্যান্য গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা হচ্ছে এবং মহাশূন্য পরিক্রমার ও পরিমাপের অনুসন্ধান চালু রয়েছে। এ সম্পর্কে মুফতি সাহেবের বর্ণনাটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘তন্মধ্যে সাফল্যের সাথে মহাশূন্য ভ্রমণ শেষে প্রত্যাবর্তনকারী মার্কিন নভোচারী জন গেøন স্বীয় সাফল্যের প্রতি শত্রæ-মিত্র সবারই আস্থা অর্জন করেছিলেন। তার এক বিবৃতি আমেরিকার খ্যাতনামা মাসিক ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’-এ এবং তার উর্দু অনুবাদÑ আমেরিকা থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘সায়রবীন’-এ বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। এখানে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ উদ্ধৃত করা হলো। এ থেকে আমাদের আলোচ্য বিষয়ের প্রতি যথেষ্ট আলোকপাত হয়। জন গেøন তার দাবি প্রবন্ধে মহাশূন্যের অভিনব বিষয়াদি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন :
এটাই একমাত্র বস্তু যা মহাশূন্যে আল্লাহর অস্তিত্ব নির্দেশ করে এবং একথা বোঝায় যে, এমন কোনো শক্তি আছে, যে এগুলোকে কেন্দ্রের সাথে জড়িয়ে রাখে। অতঃপর লিখেছেন : এতদসত্তে¡ও মহাশূন্যে পূর্ব থেকেই যে ক্রিয়াকর্ম অব্যাহত রয়েছে, তৎদৃষ্টে আমাদের প্রচেষ্টা খুবই নগণ্য। বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ও পরিমাপে মহাশূন্যের পরিমাপ অসম্ভব ব্যাপার। (মা‘আরেফুল কোরআন, সূরা আল-ফুরকান)।
এবার আসা যাক জাহান্নাম প্রসঙ্গে, অর্থাৎ দোজখের আলোচনায়। কোরআনে দোজখের যে ক’টি নামের উল্লেখ আছে, জাহান্নাম তার মধ্যে অন্যতম। তবে কোরআনে জাহান্নামের অবস্থান কোথায় তা স্পষ্ট নয়। সূরা ত‚র-এর ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে : সমুদ্রের কসম, যাকে অগ্নিতে পরিণত করা হবে। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ চতুর্দিকের সমুদ্র অগ্নি হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত মানুষকে ঘিরে রাখবে। অনেকে আয়াতের এ অর্থ করেছেন।
হযরত আলী (রা.)-কে জনৈক ইহুদি প্রশ্ন করেছিল, জাহান্নাম কোথায়? তিনি বললেন : সমুদ্রই জাহান্নাম। সূরা ত‚র-এর উদ্ধৃত আয়াত থেকে কোনো কোনো তাফসিরবিদ তার ব্যাখ্যা করেছেন যে, জাহান্নাম সমুদ্রের নিম্ন পৃথিবীর অতল গভীরে অবস্থিত। বর্তমানে তার ওপর কোনো ভারী ও শক্ত আচ্ছাদন রেখে দেয়া হয়েছে। কেয়ামতের দিন ওই আচ্ছাদন বিদীর্ণ হয়ে যাবে এবং জাহান্নামের অগ্নি বিস্তৃত হয়ে সমুদ্রকে অগ্নিতে রূপান্তরিত করে দেবে।
জাহান্নামের অবস্থান সম্পর্কে হাদিসের একটি ভাষ্য রয়েছে, তাতে চার দেয়ালের কথা আছে। তিরমিজি শরিফে আবু সাঈদ বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, চার ফসিল অর্থাৎ চার প্রাচীর জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখবে। প্রতিটি প্রাচীরের পুরুত্ব অর্থাৎ ব্যাস এত ব্যাপক ও বিশাল যে, তা অতিক্রম করতে চল্লিশ বছর সময় লাগবে।
অর্থাৎ জাহান্নামের চারটি প্রাচীর আছে এবং প্রত্যেক প্রাচীরের দূরত্ব একটি হতে অপরটি চল্লিশ বছরের ব্যবধান। জাহান্নাম চার প্রাচীর দ্বারা ঘেরা। কোরআনের বহু আয়াতে সপ্ত আকাশের কথা বলা হয়েছে, ‘এবং প্রত্যেক আকাশ স্তরে স্তরে সাজানো’। তবে সপ্ত পৃথিবীর কথা স্পষ্ট করে বলা না হলেও একটি আয়াতে তার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। সূরা তালাকে আল্লাহ্ বলেন : আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাপে। (আয়াত : ১২) ‘ওয়ামিস্লাহুন্না’ বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সপ্ত আকাশের পরিমাপ অথবা অনুরূপ। এ ‘মিসলাহুনান’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাফসিরবিদগণ নানা মত ব্যক্ত করেছেন। অনেকে বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় বলে নীরবতা পালন করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।