পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘আইনশৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রু ত বিচার) (সংশোধন) আইন-২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সংশোধিত আইনে সর্বোচ্চ কারাদন্ড পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে। অর্থদন্ডের বিধানও রয়েছে। এছাড়া ‘বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট’ নিয়োগের ক্ষমতা সরকারকে প্রদান করা হয়েছে। জানা গেছে, আইনটি পাসের আগে যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবাদি নাকচ হয়ে যায়। এবং কোনোরকম বিরোধিতা ছাড়াই তা পাস হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, চাঁদাবাজি, যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যান বাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও সন্ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র কেনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য এই আইনটি করা হয়। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০২ সালে এই দ্রুত বিচার আইনটি করে দুই বছরের জন্য কার্যকর করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে আইনটি সংশোধন করে পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। এটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
দ্রæত বিচার আইনে যে সব বিষয় আওতাভুক্ত করা হয়েছে, প্রচলিত আইনেও সেগুলোর বিচার হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে বিচারের প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হতে পারে। এই বিবেচনা সামনে রেখে দ্রæত বিচার সম্পন্ন করার জন্য আইনটি করা হয়। এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে অভিযোগ রয়েছে, আইনটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। অতীতে এর নজিরের অভাব নেই। রাজনৈতিক বিরোধিদের দমন-পীড়নে আইনটি একটা বড় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। হঠাৎ করে বহুল আলোচিত-সমালোচিত আইনটি সংশোধন করে সাজা বাড়ানোও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। নির্বাচনের বছরে আইনটি সংশোধন করে সাজা বাড়ানোর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হতে পারে, রাজনৈতিক বিরোধিদের দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখা। সরকারের জন্য হতে পারে সেটা স্বস্তিদায়ক। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এ সম্পর্কে পত্রিকান্তরে বলেছেন, দ্রæত বিচার আইনে সাজা বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক অশুভ ইঙ্গিত রয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা হচ্ছে। এটি তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে সাজা দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন একতরফা করার প্রচেষ্টা। তার মতে, এই সাজা বাড়ানো জনগণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এই আইনে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা হচ্ছে। এটি ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। এ বিষয়ে ভিন্ন মতামত দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। তিনি বলেছেন, অনেকদিন আগে থেকেই আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। সংসদের স্থায়ী কমিটি হয়ে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিরোধীদল বা অন্য কাউকে হয়রানি, অপদস্থ করতে নয়, ভবিষ্যতে আইনশৃংখলা রক্ষার্থে আইন সংশোধন করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, আইনশৃংখলা রক্ষার্থে আইনের কোনো অভাব বা ঘাটতি নেই। আইনশৃংখলার নামে পুলিশ হক- না হক অনেক কিছুই করছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগে ও পরে পুলিশ যে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তা পুলিশের মতে, আইনশৃংখলা রক্ষার্থেই করছে। বাস্তবতা তো এই যে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল এমন কি মানববন্ধন কর্মসূচীতেও পুলিশ বাধাদান করছে, শক্তি প্রয়োগ করছে এবং গ্রেফতার করছে। এই উপলক্ষে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরাই শুধু নয়, সাধারণ মানুষও রয়েছে। দ্রæত বিচার আইনে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি, হেনস্থা ও গ্রেফতার করা হবে না কিংবা এতে সাধারণ নিরিহ মানুষ অনুরূপ পরিস্থিতির শিকার হবে না, এটা বিশ্বাস করা যায় না।
আইনের লক্ষ্য জনকল্যাণ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের কারণে উল্টো ফল ফলতে বা হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ মুহূর্তে দ্রæত বিচার আইনে সাজা বৃদ্ধি করে সংশোধন কি খুব জরুরি ছিল? ছিল বলে মনে হয় না। আইনটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর আছে। সে পর্যন্ত এই আইনে মামলা ও বিচারে কোনো বাধা নেই। পাঁচ বছর সাজাও কিন্তু কম নয়। দু’বছর সাজা বাড়ালেই যে এই আইনের আওতাধীন অপরাধের সংখ্যা কমবে, সেটাও মনে করা যায় না। সম্ভবত সাজা বাড়িয়ে সরকারবিরোধীদের একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। এই আইনের খড়গটি তাদের ওপর আরো অধিকহারে ব্যবহার করা হবে তেমন ইঙ্গিতই যেন দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের কতটা লাভ হয়েছে, আমরা বলতে পারবো না। তবে জনগণ একে ভালোভাবে নেবে না। বরং সরকারের প্রতি একটা বিরূপ ধারণাই তাদের মনে জন্ম হবে। যে কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্দেশ্যমূলকতা যদি পরিদৃষ্ট হয়, জনগণ পর্যায়ে তার বৈরি প্রক্রিয়া হতে বাধ্য। যাহোক, এই আইনের কোনো অপপ্রয়োগ ও অব্যবহার হবে না, বিশেষত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা প্রয়োগ বা ব্যবহার করা হবে না, এটাই আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।