পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : দেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়েছে বিএনপি। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে প্রতিবাদ মানেই হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুরই মনে করা হতো। আর দলের প্রধান ও জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাদন্ড দেয়া হলে তা কী ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বিগত দিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতেই তার ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু ভাঙচুরের রাজনীতির বিপরীতে বদলে যাওয়া বিএনপি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে। কিছুদিন ধরেই পরিচ্ছন্ন ও পরিপক্ক রাজনীতির করে আসা বিএনপি প্রতিবাদের ক্ষেত্রে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদÐ দেওয়ার পরও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। কারাদÐ হওয়ার আগের দিন দলকে বেগম জিয়া যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খু অনুসরণ করছেন তারা। পাচ্ছেন সাধারণ মানুষের সাধুবাদও। হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়াকে পৌছে দিয়েছেন আদালতে। শান্তিপূর্ণ সেই মিছিল দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। কারাদÐের রায় ঘোষণার পরও নেই কোন সহিংস প্রতিবাদ। রায় পরবর্তী কর্মসূচিতেও দলের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সকল কর্মসূচিই হবে অহিংস। প্রতিবাদ হবে শান্তিপূর্ণ। এতো বড় একটি সঙ্কটের মধ্যেও মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও অনশনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাবে তা হয়তো অনেকে ভুলেই গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে বিএনপির এমন প্রতিবাদে অবাক হয়েছেন তাদের অনেক নেতাই।
খালেদা জিয়ার রায়ের প্রতিবাদে প্রতিদিনই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই তা পালন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে নতুন করে দিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসব কর্মসূচির মধ্যে আজ সারাদেশে মানববন্ধন, আগামীকাল অবস্থান কর্মসূচি এবং বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অনশন করবে দলের নেতারা। এসব কর্মসূচির মাধ্যমেই তারা খালেদা জিয়াকে কারাদÐ দেওয়ার প্রতিবাদ করছেন এবং আইনি পন্থায় তাকে মুক্ত করে আনবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে দেয়া কারাদÐের রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, কপি পাওয়া যায়নি। তবে আশা করি, সোমবার (আজ) পাওয়া যাবে। আদালত প্রশাসন থেকেও তেমন আশ্বাস পেয়েছি। তিনি বলেন, সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নথিপত্র ঠিক করে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করা হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর বিএনপির মূল লক্ষ্য এখন তার মুক্তি ও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। এজন্য রাজপথের সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে দলটি। যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কারাগারে যাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন তার আইনজীবীদের কাছেও এই বার্তা দিয়েছেন। এজন্য রায়ের পর কঠোর কর্মসূচির দিকে যায়নি বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পরিবেশকে অত্যন্ত বৈরী মনে করছেন তারা। এজন্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে দ্রæত মুক্ত করাই মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি দলীয় ঐক্য বজায় রেখে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনও চালিয়ে যাবেন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করা হবে। তাদের নেত্রী সুস্পষ্টভাবে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাকে (খালেদা জিয়া) জেলে নেওয়া হলেও যেন কোন রকম হঠকারি ও সহিংস কর্মসূচি দেওয়া না হয়। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে। তাই নেতারা মনে করেন বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে এমন কিছু তারা করবে না, যার মাধ্যমে সরকার লাভবান হতে পারে। সরকারের ফাঁদে পা দেবে না তারা। ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে আরো শক্তিশালী করা হবে আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে। রায় ঘোষণার একদিন আগে বুধবার গুলশান অফিসে সংবাদ সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের জিজ্ঞাসার জবাবে এমন নির্দেশনাই খালেদা জিয়া দিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অত্যন্ত বৈরী পরিবেশ মোকাবেলা করে বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে নেওয়ায় এই আন্দোলন থেমে যাবে না। চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন ও সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য। সেজন্য আইনি প্রক্রিয়ার দিকেই জোর দিচ্ছে বিএনপি। রায়ের আগে থেকেই আইনজীবীরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এখন রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর দ্রæত উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আবেদন করা হবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েও মাঠে থাকবে বিএনপি। তবে মাঠের কর্মসূচিতে যে কোন ধরনের অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দিকে যাবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার একটু হতাশ হয়ে গেছে। তারা মনে করেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে দেওয়ার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা ভাঙচুর করবে আর এই সুযোগে তারা গাড়িতে আগুন দিবে। সরকার নিজেরা মানুষ পুড়িয়ে মেরে বিএনপির উপর দায় চাপাবে। কিন্তু এই সুযোগটা তারা পায়নি এজন্য তারা খুব হতাশ।
বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সামনে একাদশ সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি মামলায় সাজা দেয়া তাদের একটি কৌশল। তাই বিএনপির সামনের দিনগুলো হবে কঠিন থেকে কঠিনতর। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি ইস্যুতে রাজনৈতিক মতৈক্য হতে হবে। নির্বাচনের মাঠ যেমন সমতল করতে হবে, তেমনি নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন কেমন হবে তারও ফয়সালা করতে হবে। তারা বলেন, নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি নির্বাচনপূর্ব এসব দাবি আদায়ে তারা সোচ্চার হবেন। এমনকি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে এসব দাবি আদায় করা হবে।
দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করতে সরকারের পরিকল্পিত কোনো পাতানো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। দেশনেত্রীকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় অন্যায়ভাবে জেলে নেওয়ার পর সরকার নানা ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া করার চেষ্টা করবে। এতে নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে আইনশৃঙ্খলবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ লিপ্ত হলে সেই সুযোগে শত শত মামলা দিয়ে রাজপথ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে। ফলে আগামী নির্বাচনে নেতাকর্মী শূন্য মাঠ দখল করে ক্ষমতায় আসীন হতে চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করে যাবে। সরকারের কোন ফাঁদেই পা দেবে না বিএনপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।