পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘আমি কারাগারে ভীত নই; অন্যায় করিনি, দুর্নীতি করিনি, ন্যায়বিচার হলে বেকসুর খালাস পাবো’ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে ন্যায় বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আমি যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি। আমাকে কারাগার বা সাজার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমি কারাগারে ভীত নই; আমি মাথা নত করবো না। জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে পিছু হটবো না।
জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাকে রাজনীতির ময়দান ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। এতে একদলীয় শাসন কায়েম ও খালি মাঠে গোল দেয়ার খায়েশ পূরণ হবে না। গতকাল (বুধবার) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। ক্ষমতাসীনদের নিষ্ঠুরতা ও জুলুম নির্যাতনে বাংলাদেশকে বৃহত্তর কারাগার হয়ে গেছে দাবী করে তিনি বলেন, এই বাংলাদেশটাকে আজ এক বৃহত্তর কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের শাসন কায়েমের মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে পারলে আমরা সকলেই মুক্ত হবো ইনশাআল্লাহ্। তিনি মামলার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আমি স্বগৌরবে জানাতে চাই যে, আপনাদের খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি। কোনো দুর্নীতি আমি করিনি। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ন্যায় বিচার হলে আমার কিছুই হবে না বেকসুর খালাস পাব। তবে অন্যরকম রায় হলে দেশের কলঙ্কের ইতিহাস তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, এই মিথ্যা মামলায় ন্যায় বিচার হলে আমার কিছুই হবে না। ইনশাল্লাহ আমি বেকসুর খালাস পাবো। দেশে ন্যুনতম আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে এই জালিয়াতপূর্ণ মামলা যারা দায়ের করেছে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের হতো। যারা এই মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে তাদেরও সাজা হওয়া উচিৎ। ক্ষমতাসীনদের ইংগিতে যদি অন্যরকম কোনো রায় হয় তাহলে তা কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কুয়েতের তৎকালীন আমীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিলো। জিয়াকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কুয়েতের আমীর যে অনুদান প্রদান করেন তা তখনকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্ণেল মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে নিয়ে আসা হয়। সেই অর্থের বিলিবন্টন, তহবিল পরিচালনা করেন তিনিই। জিয়া অরফানেজের সঙ্গে আমি কখনোই কোনোভাবে জড়িত ছিলাম না। তাছাড়া এই অর্থ সরকারি অর্থ নয় এবং ট্রাস্টটিও প্রাইভেট ট্রাস্ট। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এ মিথ্যা মামলায় আমাকে জড়িত করা হয়েছে। আমার আইনজীবীরা আদালতে প্রশ্নাতীতভাবে তা প্রমাণ করেছেন। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে জিয়া অরফানেজের একটি টাকাও তছরুপ হয়নি। সমস্ত টাকা প্রতিষ্ঠানের নামেই ব্যাংকে জমা আছে। এখন সুদাসলে সেই টাকা বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। এ মিথ্যা মামলায় ন্যায়বিচার হলে আমার কিছুই হবে না। ইনশাআল্লাহ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার নির্ধারিত তারিখের আগের দিন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশি-বিদেশী মিডিয়া শত শত কর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। রায় নিয়ে সরকারই ভীত ঃ বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলায় রায় হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে শাসক মহল আমাদের চেয়ে বেশি অস্থির ভীত হয়ে পড়েছে। ভীত হয়ে তারা জনগণের চলাচলের অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার, সভা-মিছিলের সাংবিধানিক অধিকার, প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করা হচ্ছে। ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের ভয়ে ভিত হয়ে এ হীন পথ খুঁজে নিয়েছে সরকার। সারাদেশে তারা বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনগণের প্রতিবাদের সম্ভাবনাকে তারা এতোটাই ভয় পায়!
ক্ষমতাসীনরাই রায় ঠিক করছে: রায় আদালত নয়, ক্ষমতাসীনরাই ঠিক করে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আদালত রায় দেয়ার বহু আগে থেকেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে, আমার জেল হবে। যেন বিচারক নন, ক্ষমতাসীনরাই রায় ঠিক করে দিচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে চাপের মুখে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার পর কোনো আদালত শাসকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করতে সাহস পাবে কিনা তা নিয়ে সকলেরই সন্দেহ আছে। তারপরেও দেশবাসীর উদ্দেশে সগৌরবে জানাতে চাই যে, আপনাদের খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি। কোনো দুর্নীতি আমি করিনি।
দেশবাসীকে ছেড়ে যাবো না: যেখানে থাকি যতক্ষণ থাকি দেশবাসীর সাথে আছি মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। কম বয়সেই স্বামী হারিয়েছি। দেশের জন্য জিয়াউর রহমান জীবন দিয়েছেন। দেশবাসীকে এক দলীয় বাকশালী শাসন থেকে মুক্ত করতে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশের গণতন্ত্র আজ বিপন্ন, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। দেশবাসী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনীতির বিপদসংকুল পথে পা বাড়িয়েছি। আরাম-আয়েশ, সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়েছি। দেশবাসী আমাকে তার প্রতিদান দিয়েছে অপরিমেয় ভালোবাসায়। প্রতিবারের নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আজ পর্যন্ত আমি পরাজিত হইনি। জনগণের সমর্থনে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হবার গৌরব আমি অর্জন করেছি। তিন-তিনবার তারা আমাকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন। এখনো আমি দেশের যে প্রান্তেই যাই উচ্ছ¡াসিত জনজোয়ারে আমি তাদের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হই। আমি রাষ্ট্র পরিচালনায় কিংবা বিরোধী দলে যেখানেই থাকি জনগণ প্রতিটি সুখে-দুঃখে, শান্তিতে-সংগ্রামে আমার সাথী হন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আরো বলেন, রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখার পর থেকে আমি জনগণকে যতটা সময় দিয়েছি, পরিবার ও সন্তানদের ততোটা সময় দিতে পারিনি। কারাগারে থাকতে আমি আমার মাকে হারিয়েছি। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমি একটি সন্তান হারিয়েছি। আরেকটি সন্তান নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে দূরদেশে এখনো চিকিৎসাধীন। আমার এই স্বজনহীন জীবনেও দেশবাসীই আমার স্বজন; তাঁরাই আমাকে আগলে রেখেছেন। আল্লাহ্ আমার একমাত্র ভরসা। আমি যেমন থাকি যেখানেই থাকি যতক্ষণ বেঁচে থাকবো দেশবাসীকে ছেড়ে যাবো না। আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার যতই অপচেষ্টা হোক; আপনারা ধরে নেবেন আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি।
আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস করছে: বিএনপি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদেরকে অফিসে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছে। সেই সময়ে বাইরের নানা ঘটনার জন্য আমাকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। আমার দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে জেলগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। যারা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুনের নির্দেশ দেয়, গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারে, যারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের নামে ব্যাংকে আগুন, পেট্টোল পাম্পে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, রেললাইন তুলে দিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করেছে দেশজুড়ে তাÐব চালিয়েছে, তারাই আজ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করিনা। সারাদেশে প্রকাশ্য সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না। তাদের কোনো বিচার হয়না।
সশন্ত্র বাহিনী সম্পর্কে বৈরী প্রচারণা: খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশে ন্যায় বিচার নেই। ইনসাফ নেই। জনগণের কোনো নিরাপত্তা নেই। নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার। দেশে আজ সত্যিকারের সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে নেই প্রকৃত বিরোধী দল। শাসকদের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে বৈরী প্রচারণা ও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। দলীয়করণ ও নানা কৌশলে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। শিল্পায়ন, উৎপাদন ও বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। মানুষের কাজ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে চরম মন্দা। ডলারের দাম বাড়ছে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ ডুবে যাচ্ছে এক গভীর অন্ধকারে।
উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট: বিএনপি প্রধান বলেন, তথাকথিত উন্নয়নের জজবা তুলে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ থেকে দশগুণ বাড়িয়ে এরা লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নামে বিদ্যুৎ খাতকে বানিয়েছে হরিলুঠের কারখানা। শেয়ার বাজারে লাখ লাখ তরুণ বিনিয়োগকারীর অর্থ লুটে খেয়েছে। দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ লোপাট করে ব্যাংকগুলো করে ফেলেছে দেউলিয়া। হাজার হাজার কোটি টাকার তছরুপকে এরা ‘সামান্য ক্ষতি’ বলে উপহাস করছে। বিদেশে পাচার করছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে এরা পাচার করা অর্থের পাহাড় গড়েছে। যারা এই দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় না, তদন্ত হলেও সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। দোষীদের গ্রেফতার করা হয় না। বিচার হয় না। স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় অন্যায়-অবিচার ও শোষণ-বঞ্চনা-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সকল পথ এরা বন্ধ করে দিয়েছে। হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও জেল-জুলুম চালিয়ে প্রতিবাদী সব কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের লাখো কর্মী আজ মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশ হয়ে গেছে অপহরণ, গুম, খুনের এক ভয়াবহ বিভীষিকার রাজ্য। ঘরে ঘরে হাহাকার। স্বজন হারানো কান্নার রোলে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। হেনস্তা ও অপমানের ভয়ে নাগরিক সমাজ স্বাধীন মত প্রকাশের সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। এই দুঃসহ অবস্থার মধ্যেও একদল উচ্ছিষ্টভোগী স্তাবকের গুণকীর্ত্তনে মানুষ অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দলীয়করণ, ভীতি প্রদর্শন ও নানা অপকৌশলের মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আজ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।
দেশের মানুষ গণতন্ত্র অনুরাগী: গণতন্ত্রের প্রতি এদেশের জনগণের প্রবল অনুরাগ রয়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, এই অনুরাগের কারণেই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি হিসাবে গণতন্ত্রকেই বেছে নিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য এদেশের মানুষের। তারা রক্ত ঢেলে দিয়ে গণতন্ত্র এনেছে। বারবার সেই গণতন্ত্র এবং এদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের কষ্টার্জিত গণতন্ত্র এবং অধিকারগুলো আজ আবার হারিয়ে ফেলেছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে শোষণ, বঞ্চনা, লুটপাট ও অত্যাচারের এক দুঃসহ দুঃশাসন আজ জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছে। এই স্বৈরশাসন জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা মানুষকে আজ ভাতে মারছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের কাজের সংস্থান নেই। চাকরির খোঁজে লুকিয়ে বিদেশে যাবার পথে আমাদের তরুণেরা সাগরে ডুবে মরছে।
সরকার নৈতিকভাবে অবৈধ: সরকার বিনাভোটে হওয়ার কারণে নৈতিকভাবে অবৈধ বলে মনে করেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, কেবল নিজেদের দলীয় স্বার্থে ও সুবিধার্থে সংবিধান বদল করে গায়ের জোরে যারা এখন ক্ষমতায় টিকে আছে তারা জনগণের ভোটে আসেনি। দেশের মানুষ তাদের নির্বাচিত করেনি, ভোট দেয়নি। তাদের দেশ পরিচালনার প্রতি জনগণের সায় ও সম্মতি নেই। নৈতিক দিক থেকে এরা অবৈধ। তাই তারা যতই হুংকার দিক, তাদের কোনো নৈতিক সাহস ও মনোবল নেই। বিএনপি প্রধান বলেন, এই শাসকদের কোনো গণভিত্তি নেই। পেশীশক্তি, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করে ওরা টিকে আছে। জনগণের সমর্থন নেই বলেই তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ভয় পায়। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। জনগণের অধিকার তাদেরকে ফেরত দিতে চাই। তাই আমরা আন্দোলন করছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। যে নির্বাচনে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারবে এবং সেই ভোট সঠিকভাবে গণনা করে সুষ্ঠুভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সকল দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। তেমন সুষ্ঠু নির্বাচন তারা চায় না। তাদের কথা, ক্ষমতায় থেকে এবং সংসদ বহাল রেখেই তারা নির্বাচন করবে। যাতে মানুষ ভোট দিতে না পারে এবং কারচুপির মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দেয়া যায়। এই প্রহসন তারা একবার করেছে। আবারো করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই তারা আমাদেরকে নির্যাতন ও হামলা-মামলা ও বন্দি করে তটস্থ রেখে সরকারি খরচে এক বছর আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ প্রহসন নয়, সত্যিকারের নির্বাচন চায়। তেমন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি বলেই আজ আমাদের ওপর এতো জুলুম-নির্যাতন, এতো মিথ্যা মামলা।
২০১৪’তে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো: ২০১৪ সালে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি অবশ্যই সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি ওই সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের সমর্থনে এখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকতো। যাদের আজ ক্ষমতায় থাকার কথা সেই দলের সঙ্গে বিনাভোটের সরকার এমন আচরণ করছে যেন বিএনপি নির্মূল করাই তাদের প্রধান কাজ।
স্বৈরশাসকের আচরণ: বর্তমান সরকার পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এক সময় মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে এদেশের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের নির্বাচন ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী, সেটি টেকে নাই। গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুবের পতন ঘটেছিল। ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের অবৈধ সরকার রাজনীতিবিদদের হেয় করা এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে আমাকে বিদেশে চলে যেতে বলেছিল, আমি আপনাদের ছেড়ে দেশ থেকে যাইনি। যার জন্য আমার এবং আমার সন্তানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিলো। আমাকে এক বছর নয় দিন কারারুদ্ধ করে রেখেছিলো। আমার দুই সন্তানকেও কারারুদ্ধ করে নির্যাতন করেছিলো। সেই অবৈধ সরকার আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। সেই অবৈধ সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাসহ তাদের দলের নেতা-কর্মীদের হাজার হাজার মামলা তুলে নিয়েছে। আর আমিসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের সেই সব মামলায় হেনস্তা করা হচ্ছে। যোগ হয়েছে হাজারো নতুন নতুন মিথ্যা মামলা। জরুরি সরকারের সে-সব মামলায় আওয়ামী লীগের অনেকের সাজা হয়েছিল। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সেই আসামীরাও বিনাভোটে এমপি-মন্ত্রী হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে হুংকার দিচ্ছে। তারা ক্ষমতায় থাকবেন আর আমাদের বিরুদ্ধে শুধু অবৈধ সরকারের দেয়া মামলা চলবে-এই অন্যায় বাংলাদেশ মেনে নেবেনা।
জনগণ পরাজিত হয় না: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের দুঃসহ অবস্থা থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি চায়। তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের সেই আশা-আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটাতেই আমরা গণতন্ত্রের জন্য আবারো সংগ্রাম শুরু করি। সেই সংগ্রামের পথে অনেক জীবন ইতোমধ্যে ঝরে গেছে। অনেক মানুষ গুম ও খুন হয়েছে। দুঃসহ বন্দীজীবন কাটাচ্ছে অগণিত নেতা-কর্মী। অসংখ্য মানুষ হামলা, মামলা, হুলিয়া, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আজকের দুঃশাসনের হাত অনেক নিরাপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। এই রক্তপিপাসু শাসকদের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা সহজসাধ্য কাজ নয়। কিন্তু আমরা হার মানিনি। জনগণ পরাজিত হবে না। দুঃশাসন একদিন থাকবে না। কিন্তু যে কলঙ্কের ইতিহাস তারা রচনা করছে সেই কলঙ্কের ছাপ চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবানন : নিজে কারাগারে গেলেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আপনারা গণতন্ত্রের জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, জনগণের সরকার কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশে সব সময়ই ছাত্র-যুবক তরুণেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে- ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সৈনিক, ছাত্র-জনতার মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। এই ছাত্র-জনতা আন্দোলনেই স্বৈরাচার পরাজিত হয়েছে। আজ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সেই ছাত্র, জনতাকে আহবান জানাই এগিয়ে আসতে বিএনপি, ২০ দলসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক দল, কৃষক শ্রমিকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে আমি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবানন জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগেও অনেকে আছেন যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করেন এবং ভবিষ্যত পরিণতির কথা ভাবেন। তাদের প্রতিও আমার একই আহবান রইলো। ফাঁদে পা দিবেন না: খালেদা জিয়া বলেন, আগামীতে অনেক ফাঁদ পাতা হবে, অনেক ষড়যন্ত্র হবে, সবাই সাবধান ও সতর্ক থাকবেন। বুঝে-শুনে কাজ করবেন। এই দেশ আমাদের সকলের। কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। আমরা সংঘাত, হানাহানি, নৈরাজ্য চাই না। আমরা শান্তি চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এখনো আমরা আশা করে বসে আছি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সেই প্রত্যাশা রেখেই আহবান জানাই, হুমকি-ধামকি ও নির্যাতনের পথ ছেড়ে আসুন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি। এ নির্বাচন কাউকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ এবং কাউকে ক্ষমতায় বসাবার নির্বাচন নয়। এ নির্বাচন হবে জনগণের রায় নিয়ে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্বাচন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।