Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, জাতীয় বিবেকের কণ্ঠস্বর, প্রখ্যাত রাজনীতিক এবং সমাজসেবক দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর আজ দ্বাদশ ইন্তেকাল বার্ষিকী। আজকের এইদিনে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় আমরা তাকে স্মরণ করছি। মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ১৯৩৫ সালে চাঁদপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী দেশের এই কৃতী সন্তান আমৃত্যু দেশ ও মানুষের খেদমতে নিবেদিত ছিলেন। ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি ৭১ বছর বয়সে তার বহুকীর্তিময় জীবনের অবসান ঘটে। তার জীবন পরিসরে তিনি এত কাজ করেছেন, জাতীয় ও জনকল্যাণে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন যে, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণও এই ক্ষুদ্র নিবন্ধে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তার প্রতিটি উদ্যোগ, প্রতিটি কর্ম ও সেবা একেকটি মাইলফলক হয়ে আছে। সারা জীবন তিনি জাতি, দেশ, শিক্ষা ও ধর্মের সেবা করে গেছেন। যৌবন থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি বাঁকে ও পর্যায়ে নানা মহৎ কর্মে, নানা পরিচয়ে তিনি নিজেকে সমুজ্জ্বল ও ভাস্বর করে গেছেন। তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীতে জাতির শিক্ষকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক, সংগঠক ও শিক্ষকদের অবিসংবাদিত নেতা। মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের তিনি ছিলেন সভাপতি এবং বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারী ও শীর্ষ নেতা। তিনি ছিলেন তৌহিদী জনতার মুখপত্র দৈনিক ইনকিলাবের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকার মহাখালীতে তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন দেশের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্স। তার এসব কীর্তি অবিস্মরণীয়। তার কীর্তির চেয়েও তিনি ছিলেন মহান।

আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক উন্নয়ন ও ক্রমবিকাশে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি হিসেবে দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা হিসেবে শিক্ষকদের আত্মপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি যে ভূমিকা ও অবদান রেখে গেছেন তার তুলনা বিরল। দেশের ক্রান্তিকালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে তার কীর্তিময় অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি এবং পর্যায়ক্রমে শিক্ষা, ধর্ম, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮ সালে স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যা ও দুর্যোগের সময় তিনি ধর্ম এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম ও চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তার এই পরিচিতি, খ্যাতি ও যোগাযোগদক্ষতা কাজে লাগিয়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা আদায় করতে সক্ষম হন, যা বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে বিশেষভাবে আসে। তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, জাতীয় সংস্কৃতি, ইসলাম, মুসলিম বিশ্ব এবং দেশ-জনগণের বৃহত্তর খেদমতে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ ধরনের একটি সংবাদপত্র প্রকাশ ছিল তার দীর্ঘলালিত স্বপ্ন। দৈনিক ইনকিলাব হলো তার সেই স্বপ্নের জাতীয় সংবাদপত্র। তার নির্দেশিত লক্ষ্য সামনে রেখেই দৈনিক ইনকিলাব তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর মতো বিদ্বান, দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও কর্মীপুরুষ বাংলাদেশে খুব বেশি জন্মাননি। তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষেই একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তার মতো সর্বদর্শী দেশ-জাতিপ্রেমী মানুষ এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দেশ সব দিক দিয়েই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে একটা দুঃসময় চলছে। বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, অপরিণামদর্শিতা, হটকারিতা দেশকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ মুহূর্তে তার মতো মানুষের খুবই প্রয়োজন। দেশের রাজনীতি চরম দেউলিয়াত্বের শিকার, অর্থনীতি সঙ্কটে, সমাজ দুর্বৃত্তায়নের কবলে, নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা চরমে। এ অবস্থায় মানুষ হতাশ-দিশাহারা। এ-ও কম দুর্ভাগ্যজনক নয় যে, ৯২ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে ইসলাম উপেক্ষিত, মুসলমানরা নিগ্রহ, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। এহেন পরিস্থিতিতে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর কথা আমাদের বিশেষভাবে মনে পড়ছে। কিন্তু অনেক আগেই তিনি আমাদের চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে চলে গেছেন। তার সুযোগ্য পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এবং তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশ-জাতির খেদমতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ। আজকের এ দিনে আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন