মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রেসিডেন্টের সমর্থনে পার্লামেন্ট ভবন দখল সেনাবাহিনীর
ইনকিলাব ডেস্ক : রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মালদ্বীপের বিরোধীদলীয় নেতারা। সঙ্কট নিরসনে দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছেন তারা। গত সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসিদসহ বিরোধীদলীয় ৯ নেতাকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের প্রশাসন বিরোধী দলীয় ৯ রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর জেরে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে যায়। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
রোববারও সুপ্রিম কোর্ট আদেশ বাস্তবায়ন করতে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রতি আহŸান জানান। কিন্তু দেশটির এই প্রেসিডেন্ট নিজ অবস্থানে অনড় থেকে সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় দুই নেতাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। রোববার গভীর রাতে রাজধানী মালেতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে মালদ্বীপের নাগরিকেরা। বিরোধী দল মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) ও সরকারি দল প্রগ্রেসিভ পার্টি (পিপিএম) সমর্থকরা নিজেদের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এমডিপির বিক্ষোভ সোমবার রাত পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে বিচার প্রশাসনের মুখপাত্র নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য সানের খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে রোববার সকালের দিকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সুপ্রিম কোর্ট চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করার পর মালদ্বীপ সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে। তার ওই অভিযোগের পর সকালের দিকে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী মালেতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করার পর দখলে নেয়।
দেশের শীর্ষ আদালতের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের চলমান উত্তেজনার অবসানের লক্ষ্যে মালদ্বীপের বিরোধীদলীয় নেতারা এক চিঠিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। চিঠিতে তারা বলেছেন, মালদ্বীপে জনগণের শাসন ফিরিয়ে আনতে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সম্ভব সবকিছু করতে ভারত, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আমরা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই সঙ্কটের জেরে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন। উত্তেজনা না বাড়াতে ও সঙ্কট দ্রæত সমাধানে ব্যবস্থা নিতে ইয়ামিনের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরাস।
গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা ইয়ামিনের অভিশংসনের চেষ্টা করেছিল; তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
কিন্তু বহিষ্কার ১২ সংসদ সদস্যকে সুপ্রিম কোর্ট স্বপদে বহালের নির্দেশ দেয়ায় পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে ইয়ামিন নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল। রোববার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের যেকোনো ধরনের চেষ্টা হবে অসাংবিধানিক ও অবৈধ।
নির্বাসন থেকে ফেরা বিরোধীদলীয় দুই সংসদ সদস্যকে রোববার গ্রেফতার করা হয়। পরে সোমবার সকালের দিকে তাদেরকে আদালতে নেয়া হয়। পরে মালের অপরাধ আদালত এক সংসদ সদস্যকে মুক্তি দেয়। অপর সংসদ সদস্যের শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন সুপ্রিম কোর্টকে তিনটি চিঠি দিয়েছেন। এসব চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রত্যাহারের আহŸান জানানো হয়েছে। সোমবার লেখা তৃতীয় চিঠিতে তিনি দেশের প্রধানবিচারপতির গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রত্যাহারের আহŸান জানান।
১ ফেব্রæয়ারির আদেশের পর প্রধান বিচারপতি হাসান সায়িদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন প্রেসিডেন্ট সমর্থকরা। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতের তরফে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই আদেশ বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
প্রেসিডেন্টের লেখা চিঠিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেওয়ার আদেশ সংবিধানে দেওয়া প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এছাড়া আবদুল্লাহ ইয়ামিন সুপ্রিম কোর্ট ও এটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গত রোববার এটর্নি জেনারেল পুলিশ ও সেনাপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে টেলিভিশন ভাষণে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের ষড়যন্ত্র করছে। তবে এই আদেশ বাস্তবায়ন করবেন না তারা। সুপ্রিম কোর্টকে লেখা চিঠিতে আবদুল্লাহ ইয়ামিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছে।
বৃহস্পতিবারের আদেশ বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট ভবনের সামনে সমর্থকদের নিয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এর কিছুক্ষণ পরই তাদের ওপর পিপার স্প্রে প্রয়োগ করে পুলিশ। তা সত্তে¡ও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা। আদালতে উপস্থিত রয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান সায়িদ।
বিচার প্রশাসনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের কাছে কোনও সাহায্যের আবেদন জানাননি। এর আগে সোমবার ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গ্রেফতারের আশঙ্কায় প্রধান বিচারপতির তরফে ভারতের পদক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
চীনের পর্যটকদের মালদ্বীপে না যাওয়ার পরামর্শ
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে চীনা পর্যটকদের মালদ্বীপ সফরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিতসহ কারাদÐপ্রাপ্ত অন্যান্য নেতার মুক্তির নির্দেশ দেয়ার পরও তাদের মুক্তি দিতে বিলম্ব করায় সরকারের বিরুদ্ধে রোববার বিক্ষোভ শুরু করেছে বিরোধীদলীয় সমর্থকরা। দেশটির এটর্নি জেনারেল রোববার হুশিয়ার করে বলেছেন, কারাদÐপ্রাপ্ত বিরোধী দলের নেতাদের মুক্তির নির্দেশ অমান্য করার দায়ে অভিযুক্ত প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সরকারকে প্রতিহত করতে সুপ্রিম কোর্ট যে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নিবে।
এদিকে সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, মালদ্বীপের জাতীয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করতে চীনের সমর্থন রয়েছে। সূত্র : এএফপি ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।