Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে আন্দোলন দেখতে চায় জেলা সভাপতিরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে গত আন্দোলনের মতো আর কোন ব্যার্থ আন্দোলন দেখতে চায় না বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতিরা। তারা বলছে, জেলা নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছে কেন্দ্রের দিকে। কেন্দ্রীয় যে কোনো ডাকে সাড়া দেবেন তারা। তবে গত আন্দোলনের মতো আর রাজধানীকে দেখতে চায় না তারা। বক্তব্যে তারা বলেন, প্রয়োজনে সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে রাজধানীতে স্থান ভাগ করে দিতে হবে যেন আন্দোলনকে আরো বেগবান করা যায়। গতকাল (শনিবার) রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশনের বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা সভাপতিরা। নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুতেই বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা সভাপতি মো. শাহাজাহান, কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম আলম।
বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, আমরা মনে করি ৮ তারিখ যদি কোনো ষড়যন্ত্রমূলক রায় দেয়া হয় তাহলে সবাই রাজপথে নামবো যাতে কোনো ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে না পারে। নেত্রী সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহবান জানিয়েছেন। কোনো কর্মসূচি ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কোনো কর্মসূচি ঠিক হয়নি। যে কর্মসূচি হবে তা হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক।
খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক স¤পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভায় বলেন, আমাদের মূল্যায়ন না করায় অনেক ক্ষোভ রয়েছে সেসব আর বলতে চাইনা। কিন্তু আগামী ৮ ফেব্রæয়ারির রায় নিয়ে আমাদের সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। শুধু তাই নয় ঢাকায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ড. মোর্শেদ হাসান খান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় যদি বেগম জিয়াকে অন্যায় সাজা দেয়া হয় তাহলে আমরা তা প্রতিহত করবো। সারাদেশে এর রেশ ছড়িয়ে পড়বে। আমরা বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপি ছাড়া দেশে কোনো একদলীয় নির্বাচন হতে দেবনা।
দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের মিথ্যা মামলায় ৮ তারিখ কী রায় হবে সেটা সরকার জানে। তবে আমরা জনগণকে নিয়ে রাজপথে থাকবো। আমাদের নেত্রী জেলে গেলে আমরা বাইরে থাকবো না, আমরাও জেলে যাবো। বৈঠকে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা কী ছিলো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশনেত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির সাংবাদিকদের বলেন, দল অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। যত ষড়যন্ত্র হোক না কেনো আমরা এক থাকবো। ম্যাডাম যেখানেই থাকুক তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হলে আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা প্রহসনম‚লক মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে যদি কনভিকশন দিয়ে থাকে তাহলে দেশের জনগণ তা মানবে না। সেজন্য যেটা করতে হবে সেটাই আমরা করবো। অবশ্যই আমাদের কর্মস‚চি থাকবে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনেছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সভায় আগামী ৮ ফেব্রæয়ারির রায় ঘিরেই বেশিরভাগ নেতা বক্তব্য দেন। বিশেষ করে অতীতের রাজনৈতিক আন্দোলন কর্মসূচী নিয়েও কিছু কিছু নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। আবার কেউ কেউ শুধু তৃণমূলে নয় রাজধানীতেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন। তবে নেতাদের বক্তব্য শোনার পর প্রায় তিন মিনিটের সমাপনী বক্তব্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনাম‚লক বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমার হারানোর কিছুই নেই। রাজনীতির জন্য স্বামী, মা, সন্তানকে এমনকি বাড়ি হারিয়েছি। আমার এক সন্তান বিদেশে আছে। আপনারাই আমার আশা। আপনাদের নিয়েই আমি রাজনীতি করছি। আমি ভিতু নই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে চলবে। আপনারা অনেক পরিশ্রম করছেন। আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কারো ভাই, ছেলে, বোন, বাবা হারিয়েছে। এখন নতুনদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা হঠকারী কোনো কিছুতে পা দেবেন না। দলকে বিপদে ফেলার মতো কিছু করবেনা। সবাই একতাবদ্ধ থাকবেন। এবার যদি কেউ দলের বিরুদ্ধে কিছু করে থাকে তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে কোনো পদ দেয়া হবে না। আমার বিশ্বাস সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে শক্তিশালী করবেন। এছাড়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেওয়া হবে। কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে, তাদের কোনো মূল্যায়নের জায়গা নেই। এদের তারাও (সরকার) নেবে না, আমরাও নেবো না। ক্ষমা কিন্তু একবার হয়, বারবার হয় না।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ ব্রিফিং হয়নি। এরআগে সকালে উদ্বোধনী পর্বে সোয়া ১ ঘন্টা বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বেলা সোয়া ১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাহী কমিটির মোট ৪২ জন বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে মহিলা দলের সভাপতি সহ ৫ জন মহিলা নেত্রী বক্তব্য দেন। বক্তাদের মধ্যে মফস্বল থেকে আসা নেতারা অতীতে রাজধানীতে আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য মহানগর নেতাদের সমালোচনা করেন। এবার যেন তা না হয় সেজন্য নেতৃবৃন্দকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ