পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে চীন, তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ফল, ফুল ও সবজির চাষ হচ্ছে। হাইড্রোফনিক হলো মাটি ছাড়া ফসল উৎপাদনের একটি পদ্ধতি। প্লাস্টিকের বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় ফসল উৎপাদন করা যায়। পাত্রের মধ্যে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলো যথোপযুক্ত মাত্রায় দিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতির চাষাবাদে অব্যবহৃত জায়গায় যেমন ফসল উৎপাদন সম্ভব তেমনি কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনও সম্ভব। একই জায়গায় মাচা বানিয়ে বিভিন্ন স্তরে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। একখ- জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে ফল, ফুল, সবজি আবাদ করে যে ফলন পাওয়া যায় হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে তার চেয়ে অন্তত ৯ গুণ ফলন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে মাটির ব্যবহার যেমন নেই, তেমনি পানির প্রয়োজনও হয় অত্যন্ত কম। উৎপাদনের পরিমাণ ও উৎপাদিত ফসলের মান মাটিতে উৎপাদিত ফসলের চেয়ে ন্যূন নয়, ক্ষেত্রে বিশেষে বরং বেশি। সঙ্গতকারণেই উল্লেখিত দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়ছে। বাংলাদেশেও হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান। আশার কথা, এই পদ্ধতির চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক বলে প্রতিভাত হচ্ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: জাহিদুর রহমান বাংলাদেশ একাডেমী অব সাইন্সেস (বাস) ও ইউএডিএ’র একটি প্রকল্পের অধীনে দেশের চাষীদের জন্য হাইড্রোফনিককে লাভজনক করতে কাজ করছেন। ইনকিলাবকে তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের মধ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষীদের এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তার আশা, চাষীরা এটাকে খুব দ্রুত গ্রহণ করবে এবং অতিদ্রুতই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হবে।
কথায় বলে, প্রয়োজন আবিষ্কারের মা। হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উদ্ভাবন ও প্রচলনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনই নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। একথা বলাইবাহুল্য, সারা বিশ্বেই মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে খাদ্যপণ্যের চাহিদাও। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যপণ্যের চাহিদা পূরণের চ্যালেঞ্জ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। একদিকে নানা কারণে বিভিন্ন দেশে আবাদযোগ্য জমি কমছে অন্যদিকে অনাবাদী জমি আবাদযোগ্য করাও খুব একটা সম্ভবপর হচ্ছে না। এমন প্রকৃতির জমি বিশ্বে যথেষ্টই আছে, যে জমিতে চাষাবাদ ও ফসল ফলানোর তেমন সুযোগ নেই। মরু অঞ্চলের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। মরু অধ্যুষিত দেশগুলোতে চাষাবাদের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। চাষাবাদ করতে গেলে খরচ এত বেশি হয় যে, লোকসান ছাড়া লাভ হয় না। বালি, পাথর ও কঙ্করময় জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই বাস্তবতায় বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে, কৃষি উৎপাদন নিয়ে, প্রযুক্তির উদ্ভাবন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যেমন তেমনি বিভিন্ন দেশের তরফেও গবেষণা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসলের জাত আবিষ্কৃত হচ্ছে, খরা, বন্যা, লবণসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবিত হচ্ছে, চাষের পদ্ধতি, লাগসই প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়েও ব্যাপকভাবে কাজ হচ্ছে। হাইড্রোফনিক পদ্ধতি এমনই একটি উদ্ভাবন যাতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়াচ্ছে এবং তার জনপ্রিয়তা দিনকে দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।
হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাংলাদেশেও ফসল উৎপাদনে বৈপ্লবিক অগ্রগতি এনে দিতে পারে। এ কথা বিশদ বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ বিশাল জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র দেশ। এখানে প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে। ঘর-বসতি ও শিল্প-কারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট তৈরি ইত্যাদিতে জমি কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর অন্তত এক শতাংশ হারে আবাদী জমি কমছে। কয়েক দশকে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়লেও এবং দেশ এ মুহূর্তে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর্যায়ে এলেও আগামীতে এ অবস্থা বহাল থাকবে না। জমির ফসল উৎপাদনের সক্ষমতা অনিঃশেষ নয়। এক সময় আসতে পারে যখন শত চেষ্টা করেও ফসল উৎপাদন বাড়ানো যাবে না। আবাদী জমিও এখনকার চেয়ে কমে যাবে। জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে বেশি হবে। কী হবে তখন, এ বিষয়টি এখনই ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে যাতে ভবিষ্যতের দুর্ঘট মোকাবিলা সম্ভবপর হয়। কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের যে সুযোগ হাইড্রোফনিক পদ্ধতি এনে দিয়েছে তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু এতে উৎপাদন বেশি হবে, পানির ব্যবহার কম হবে, উৎপাদন ব্যয় কম হবে, সুতরাং এই পদ্ধতির অনুসরণ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে অনেক বেশি সংহত ও শক্তিশালী করবে। দেশের কৃষিবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে যে কাজ করছেন সেই কাজকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। এই পদ্ধতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় পোষকতা দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করবে এবং উপযুক্ত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।