পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এ বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। মানুষ অনেকদিন ধরে ভোট দিতে না পারায় খুবই অসন্তুষ্ট ও উদ্বিগ্ন। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন নির্বাচন করে সরকার বল প্রয়োগের মাধ্যমে ৪ বছর দেশ শাসন করছে। প্রতিকার ও প্রতিরোধের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিরোধীদলকে রাস্তায় নামতে দেয়া হচ্ছে না। এমন কি ঘরের মধ্যে সভা করার অনুমতি পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিরোধীদল এমনকি ছোট ছোট বাম দলগুলোও রাস্তায় প্রতিবাদ করতে পারছে না। গণদাবি নিয়ে মাঠে নামলে পুলিশের ধরপাকড় ও মামলা-হামলা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। জনগণের দাবি নিয়ে গণতান্ত্রিক পথ ও পদ্ধতিতে আন্দোলন করতে গেলেও পুলিশের পিটুনি খেতে হচ্ছে। যৌক্তিক দাবির যে কোন পদক্ষেপকে সরকারবিরোধী কর্মকান্ড ভেবে সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর উপায়ে বন্ধ করছে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় তাদের কোন জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নেই। জনগণের পরোয়া না করে জনদাবিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সরকার কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিবার্য পরিণতি হিসাবে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অস্থিরতা, গুম, খুন, রাহাজানি, লুণ্ঠন, দখল ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতা সমাজে বিরাজমান। সমাজ কলুষিত। লুণ্ঠন, ধর্ষণ, খুনখারাবি এমন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, মানুষ জীবনের ভয়ে ভীত, সন্ত্রস্ত্র ও উদ্বিগ্ন। প্রতিদিনই ধর্ষণ, খুন-জখমের মহোৎসব চলছে। ধর্ষণের হাত থেকে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। সুশাসনের অভাবে সন্ত্রাসীরা কোন পরোয়া করছে না। একের পর এক খুন ও ধর্ষণ চলছে। কর্তৃত্ববাদী সুশাসনের অভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা চলছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা কেউ কাউকে মানছে বলে মনে হয় না। অন্তর্কোন্দল ও কলহে জর্জরিত সরকারি দলের নেতাকর্মীরা বেপরোয়াভাবে মারামারি, কাটাকাটি, খুন, জখম ও আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, বিবাদ ও কোন্দলে শত শত কর্মী আহত ও নিহত হচ্ছে। সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। লক্ষ হাজার কোটি টাকা শেয়র বাজার ও ব্যাংক থেকে লুট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। আজও তার কোন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের লোক জেল খাটছে অথচ বাংলাদেশে কাউকে আসামী পর্যন্ত করা হয়নি। প্রতিটি সেক্টরে সুশাসনের অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়াভাবে অন্যায়, অনিয়ম ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে। মানীর মান নাই, গুণীর কদর নাই। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হচ্ছে। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে মানী লোকেরা অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করছে না। সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের অভাবে অপরাধীরা দ্বিগুণ উৎসাহে অপরাধ করে চলেছে। সন্ত্রাসীদের কর্মকাÐে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, সংখ্যালঘু স¤প্রদায়, ভিন্নমতের লোকজন সকলে ভীত-সন্ত্রস্ত্র। গুম, খুন, অপহরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা প্রভৃতি অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে।
‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত সীমিত। এছাড়া রাষ্ট্র উগ্রপন্থীদের দ্বারা হত্যা ও হামলার ভয়ে নাগরিক সমাজ ভীত ও সন্ত্রস্ত্র। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে মানুষের জীবন ও সম্পদ অনিরাপদ। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ক্রমবর্ধমান হারে হয়রানি করছে। কর্তৃপক্ষ ভিন্ন মতাবলম্বী অথবা সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে অতিমাত্রায় আইন প্রয়োগ করছে। সমালোচকদের শাস্তি দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) ব্যবহার করছে’। কথাগুলো ২০১৭ সালে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ। ১৯ জানুয়ারি সারাবিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ অধ্যায়ে রোহিঙ্গা সংকট, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে আইন লংঘনের অভিযোগ, তাদের দায়মুক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার, শ্রম অধিকার, নারী অধিকার, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের ভূমিকার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদনকে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। অবশ্য সরকার সবসময় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আসছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়মুক্তির ইতিহাস দীর্ঘ। তারা আইন লংঘন করে চলছে। টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করছে। তাদের ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কথা জনগণের মুখে মুখে। বেনামী আসামীর তালিকা থেকে খেয়ালখুশীমত গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাÐ ঘটেই চলেছে। এই পরিস্থিতির আশু অবসান এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা আমাদের আশু কর্তব্য। নানামুখী সমস্যা ও সংকট উত্তরণে সরকারি দল বিরোধী দল একসাথে কাজ করা উচিত। সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সরকার ও বিরোধীদলের একসাথে কাজ করা উচিত। বিরোধীদল থেকে বার বার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করা হচ্ছে। একপক্ষীয়, একদলীয় নির্বাচন হতে দেয়া হবে না, জনগণ আন্দোলন করে দাবি আদায় করে নেবে ইত্যাদি বলে বিরোধীদল বল সরকারের কোর্টে ছুঁড়ে দিচ্ছে। সরকারি দল থেকে আলোচনা-সংলাপকে অপ্রয়োজনীয় বলে কঠোর হাতে আন্দোলন দমনের হুংকার ছাড়া হচ্ছে। অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পথে আন্দোলন দমন করার ঘোষণা দিয়ে সরকার একগুঁয়েমীর পরিচয় দিচ্ছে। এতে সংকট সমাধান না হয়ে ক্রমান্বয়ে ঘনিভূত হবে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠবে। বিরোধীদলকে কঠোর হাতে দমন করতে গেলে দেশ আবার সন্ত্রাস নৈরাজ্যে নিপতিত হবে। রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে তার দায় সরকার এড়াতে পারবে না। রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান হলে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য আপনা-আপনি থেমে যাবে। সরকার বলছে, সন্ত্রাসীদের সাথে আলোচনার কোন সুযোগ নেই। বিএনপি সন্ত্রাস করেছে অতএব বিএনপির সাথে নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হবে না। আমরা জানি, বিশ্বে সংলাপের মাধ্যমে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের সাথে সংলাপ করে শান্তি চুক্তি হয়েছে। প্রায় দু’যুগ ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাহাড়ে সসস্ত্র যুদ্ধ করে বহু নিরিহ বাঙ্গালী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও সেনাসদস্যদের হত্যা করেছিল। এসব সন্ত্রাসীদের সাথে সংলাপ করে শান্তি চুক্তি হয়।
প্রশ্ন হলো, আমরা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সংকট সমাধানে আগ্রহী কিনা। গণতন্ত্রহীনতার সুযোগে যেভাবে সর্বগ্রাহী সমস্যা-সংকট তৈরি হয়েছে তার হাত থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে সকলের ঐক্যমত্য আবশ্যক। সরকার ও বিরোধীদলের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও সম্মিলিত কর্মসূচী দরকার। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গীবাদ স্তিমিত হয়ে পড়বে। দেশীয় সংকটের সাথে মায়ানমার থেকে বিতাড়িত ১০/১১ লক্ষ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। ১৬ কোটি মানুষের থাকা-খাওয়ার সমস্যার মধ্যে বাড়তি এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চাপ বাংলাদেশের অর্থনীতি সহ্য করতে পারছে না। এ সমস্যার সন্তোষজনক ও আশু সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্ষা আসলে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এখন রোহিঙ্গারা নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। স্বদেশে ফেরত পাঠানোর কার্যকর ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা আবশ্যক। গত ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কর্মসূচি শুরু হওয়ায় কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কাজটি শুরু করা যায়নি। কবে শুরু হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। সুখের বিষয় হলো, সমস্যাটি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিসীমার মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র অকৃপণহাতে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসস্থ করেছে। জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের ঐক্য দরকার। সুশাসন ও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বহু সমস্যাই দূরিভূত হবে। এখন প্রয়োজন সরকার ও বিরোধীদলগুলোর ঐক্য। এ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে সংলাপ শুরু করতে হবে।
বিরোধীদল দমনের কর্মসূচি বাতিল করে সরকারকে তাদের আস্থায় নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের ৮০% লোক বিএনপিকে ঘৃণা করে’। লোক ঘৃণা করলে সরকারের ভয় পাবার কিছু নেই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও সরকার নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। তাহলে সহায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়। অনেক মেগা প্রজেক্ট করে অনেক উন্নয়ন করেছে সরকার। এই উন্নয়নের কথা মনে রেখে সরকারি দলকেই ভোট দেবার কথা মানুষের। উন্নয়ন যে হচ্ছে তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে সে উন্নয়ন হচ্ছে একটি বিশেষ গোষ্ঠির। দেশের সম্পদ জমা হচ্ছে ধনীদের হাতে। গরীব দেশের যেটুকু সম্পদ তার ৮০% জমা হচ্ছে ২% ধনীর হাতে। সুষম উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তার সাক্ষাত নেই। গণতন্ত্র ও সুশাসনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে উন্নয়ন করতে চাইলে তা হবে ভঙ্গুর, ক্ষয়িষ্ণু ও লুটপাটের উন্নয়ন। উন্নয়ন করতে চাইলে সবাইকে নিয়ে এগুতে হবে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা নেই বলে চিৎকার করে লাভ নেই। মঙ্গা আছে বলেই শীতে আগুন পোহাতে মানুষ বাধ্য হচ্ছে। তাদের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা থাকলে আগুন পোহাতে হতো না। আগুন পোহাতে গিয়ে কয়েক ডজন মানুষ পুড়ে মারা গেছে। আরও অনেকে পোড়াদেহ নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে।
দেশ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালিত হওয়া দরকার। তার জন্য আবশ্যক হলো মুখে গণতন্ত্র নয়, প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সরকারি দল সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এমপি মন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন আর বিরোধীদল মামলা ঘাড়ে আদালতে দৌড়াবে এটি কোন সমতল রাজনৈতিক ক্ষেত্র হতে পারে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা লক্ষ লক্ষ আসামী ও হাজার হাজার মামলা কাঁধে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে আর সরকারি দলের নেতাকর্মীরা বগল বাজিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাÐ পরিচালনা করলে এ কাজ অনৈতিক ও অসমীচীনও বটে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমা জর্জরিত হয়ে জেলখানায় থাকলে এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সত্যিকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। অসমতল মাঠে খেলা জমে না। ভালো খেলা অনুষ্ঠানের জন্য ভালো মাঠ দরকার। সে কারণে মামলা, হামলা বন্ধ হওয়া দরকার। এখন পরিবেশ শান্ত, কোন রকম আন্দোলন নেই। এমনকি বিএনপি বড় কোন মিটিং মিছিলের অনুমতিও পাচ্ছে না। অথচ কদিন আগে বিএনপি নেতা ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। ক’দিন আগে বিএনপি চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে নারায়ণগঞ্জ আদালত অঙ্গন থেকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও তিনি পরে মুক্ত হয়েছেন। এসবই লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির বিপরীতধর্মী কর্মকাÐ। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবল আলম হানিফ বলেছেন, যারা পেট্রোল দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে না। কে বা কারা পেট্রোল দিয়ে মানুষ মেরেছে সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে বিষয়টি পরিষ্কার হতো। সরকার নিরপেক্ষ তদন্তে উৎসাহ দেখায়নি। এক একটি ঘটনায় হাজার হাজার বেনামী আসামী করে পুলিশ দিয়ে মামলা রুজু করা আছে। বেনামী তালিকা দিয়ে যে কোন নেতাকর্মী বা সমর্থককে গ্রেফতার করে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় স্বাধীনভাবে চলাচল করা ও নির্বাচনী কর্মকাÐে অংশ নেয়া কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব নয়। নির্বাচনী কর্মকাÐে একটু বেশি সক্রিয় হলে গ্রেফতার, রিমান্ড, অত্যাচার, নির্যাতনের খড়গ তাদের উপর পড়বে একথা অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়।
সততার সাথে সদিচ্ছা নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অগ্রসর হওয়া উচিত। কোন রকম ছলচাতুরী বা চাতুর্যের আশ্রয় না নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে সরকার এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি। কীভাবে ও কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে, কীভাবে বিরোধীদলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা যাবে, সংসদ থাকবে না বিলুপ্ত হবে, সেনাবাহিনী কোন পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হবে ও নির্বাচনের কতদিন আগে পরে সেনা নিয়োগ হবে, নির্বাচন সংক্রান্ত আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলো সমাধান না করে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অগ্রসর হওয়া সমীচীন হবে না। আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র এরূপ ¯েøাগান বর্তমান বিশ্বে অচল। কারণ গণতন্ত্র মূর্খের শাসন হলেও বিশ্বে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন শাসন পদ্ধতি আজও আবিষ্কার করা যায়নি। সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে সুশাসন ও সুনীতি ফিরে আসতে বাধ্য। মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পেও গণতন্ত্র আবশ্যক। সংলাপ ও আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে সরকারি দল ও বিরোধীদলের মধ্যে সহযোগিতা ও সহমর্মীতা ফিরে আসবে। উভয়ের মধ্যে একটি সুন্দর ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। অবিশ্বাস ও অনাস্থা দূরীভূত হলে নির্বাচন অনুষ্ঠান সহজতর হবে। দেশে বিরাজ করবে স্থিরতা ও শৃঙ্খলা। আর নিয়ম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সাথে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ও নৈরাজ্য দূর হয়ে দেশ বসবাসের উপযোগী হবে। জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে দেশের মানুষ সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে। মানুষ সরকারকে বাহবা দেবে ও দোয়া করবে।
লেখক: প্রফেসর (অব.), দর্শন বিভাগ, সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।