পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জনসাধারণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি পান করা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে তারা বোতলজাত ও পিউরিফায়ারের পানি পান করার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জনসাধারণের এই চাহিদা পুঁজি করে বিভিন্ন কোম্পানি বিশুদ্ধ পানি নাম দিয়ে জার ও বোতলের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানি ফিল্টার করার জন্য পিউরিফায়ার নির্মাণ ও আমদানি করে চলেছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব পিউরিফায়ার পানি কতটা বিশুদ্ধ করছে বা আদৌ পানি বিশুদ্ধ হচ্ছে কিনা, এ সম্পর্কে জনসাধারণের তেমন কোনো ধারণা নেই। তাদের ভরসা, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পিউরিফায়ারের বিভিন্ন গুণকীর্তন। এসব গুণকীর্তন শুনেই অনেকে পিউরিফায়ার ক্রয় করছেন। ভারত, চিন, কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে আমদানির পাশাপাশি কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পিউরিফায়ারের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশে পিউরিফায়ারের একটি বিরাট বাজার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর শতকরা ৩০ ভাগ হারে এ বাজারের বিস্তৃতি ঘটছে। তবে এসব পিউরিফায়ার সঠিকভাবে পানি ফিল্টার বা বিশুদ্ধ করতে পারছে কিনা, তা এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য বিএসটিআইসহ কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কোনো উদ্যোগ নেই। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি ছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা তথাকথিত বিশুদ্ধ পানির কোম্পানির ভেজাল পানি সরবরাহ নিয়ে বেশ হইচই হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে দিলেও এসব প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম কমেনি। অবাধে চলছে বিশুদ্ধ পানির নামে অবিশুদ্ধ পানির ব্যবসা। এর সাথে নতুন শঙ্কা যুক্ত হয়েছে, মান নিশ্চিত না করা পিউরিফায়ার।
অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্য, বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের আধিক্য, আর্সেনিক সমস্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এখন বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশুদ্ধ পানি ছাড়া জীবনধারণ সম্ভব নয়। মানবদেহের প্রায় ৭০ শতাংশ পানি হওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা অবধারিত। এই পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে পানির বিকল্প নেই। যদি অপরিশোধিত পানি গ্রহণ করা হয়, তবে মানুষের কোনোভাবেই সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। যে পানিই মানুষের জীবন, সেই পানিই দূষিত হয়ে মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে। বলা হয়, মানুষের ভয়াবহ রোগব্যাধি সংক্রমণের মূল মাধ্যম হচ্ছে পানি। গবেষণায় দেখা গেছে, মানবদেশের শতকরা ৭০ ভাগ রোগ সংক্রমণ হয় পানিবাহিত হয়ে। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পানিকে নিরাপদ ও বিশুদ্ধকরণের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানি পান করা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও অনেকেই তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনসাধারণকে অনেকটা অপরিশোধিত পানি পান করেই জীবনধারণ করতে হচ্ছে। রাজধানী ও জেলা শহর বাদে সরকারিভাবে পরিশোধিত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। গ্রামাঞ্চলে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা থাকলেও কোনো কোনো এলাকায় ভয়াবহ আর্সেনিক দূষণের কারণে বিশুদ্ধ পানি বিরল হয়ে উঠেছে। এর ফলে ঐসব এলাকার ব্যাপক সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে ওয়াসা পরিশোধিত পানি সরবরাহ করলেও তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগ প্রায়ই উঠে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে ওয়াসার পানি পরীক্ষা করে দেখেছেন, এতে ব্যাক্টেরিয়া, ই-কলি, কলিফর্মসহ ভয়ংকর জীবাণু রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ওয়াসার পানিতে ভয়াবহ জীবাণু থাকা সত্ত্বেও তা পরিশোধনে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে নগরবাসী এখন ওয়াসার পানি পান করা কল্পনাও করতে পারে না। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ব্যাপকহারে পিউরিফায়ার ক্রয় করছেন। এসব পিউরিফায়ার নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে জানেনই না, এগুলো সঠিকভাবে পানি বিশুদ্ধ করতে পারে কিনা। যারা একটু সচেতন তারা ফিল্টার করার আগে পানি ফুটিয়ে তারপর পিউরিফায়ারে দিচ্ছেন। অনেকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিসিএসআইআর-এ পিউরিফায়ার নিয়ে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, ক্রয়কৃত পিউরিফায়ারের পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, বাজার থেকে কেনা অনেক পিউরিফায়ার পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ করতে পারে না। অথচ মানুষ বিক্রেতাদের চটকদার কথা শুনে এসব পিউরিফায়ার ক্রয় করছে এবং তথাকথিত জারের বিশুদ্ধ পানির মতোই পিউরিফায়ারের রমরমা ব্যবসা বিস্তৃতি লাভ করছে। এতে সরকারের কোনো সংস্থারই মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষার উদ্যোগ নেই। এই উদ্যোগ না থাকার ফলে একদিকে জনসাধারণ প্রতারিত হচ্ছে, অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও মানহীন পিউরিফায়ারের ব্যবসায়ের কারণে জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এতে নানা ব্যাধিতে জনসাধারণ যেমন আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি একটি অসুস্থ জনগোষ্ঠীই গড়ে উঠছে। অসুস্থ এ জনগোষ্ঠী যে রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে উঠছে, তাতে সন্দেহ নেই। এ প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে এবং এক সময় ব্যাপক জনসংখ্যা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পানি বিশুদ্ধকরণের সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে জনসাধারণকে পানি সরবরাহ করতে হবে। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার অপরিহার্য। বলাবাহুল্য, ওয়াসা যদি জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়, তাহলে জনসাধারণের পিউরিফায়ার ও ভেজালযুক্ত বোতলজাত পানি ক্রয়ের কোনো প্রয়োজনই পড়বে না। জনসাধারণ নিশ্চিন্তে বাসার কলের পানি পান ও ব্যবহার করতে পারবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, জনসাধারণ চড়ামূল্যে ওয়াসার পানির বিল পরিশোধ করেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। তারা বিশুদ্ধ পানির বিল দিয়ে নোংরা ও জীবাণুযুক্ত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়বে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেসব পিউরিফায়ার আমদানি ও বাজারজাত করা হচ্ছে, সেগুলোর মান পরীক্ষা করে জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করাও জরুরি। যে কোনো উপায়ে হোক, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।