পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আসামে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক জনসভায় ‘বাংলাদেশী অভিবাসী’ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য রেখেছেন তা উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে নতুন করে অভিবাসী আসা বন্ধ করতে যেমন তার সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে তেমনি আসামে থাকা অভিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, আসামের কংগ্রেস সরকার সব সময়ই বাংলাদেশীদের চেয়েছে। তারা বাংলাদেশীদের জন্য সোনার প্লেট এগিয়ে দিয়েছে অথচ আদিবাসী মানুষদের যেটুকু ছিল তাও কেড়ে নিয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, আগামী ৪ এপ্রিল আসামে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হবে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সেখানে সরকার গঠনের প্রত্যাশা করছে বিজেপি। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই দলটি ফের বাংলাদেশী অভিবাসী ইস্যু সামনে এনেছে। বিগত লোকসভা নির্বাচনেও এনেছিল। তখন নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে বাংলাদেশীদের বের করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আসামের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির তরফে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যে বিজেপি আসাম ভিশন ডকুমেন্ট প্রণয়ন করেছেন তাতে বলা হয়েছে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করে আসছি, বিভিন্ন উপলক্ষে বিশেষত নির্বাচন উপলক্ষে বিজেপিসহ ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ’ বা ‘বাংলাদেশী অভিবাসী’ ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসে এবং ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। ঐতিহাসিক কারণেই আসামে বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী বসবাস করে। তারা দীর্ঘকাল থেকে সেখানে বসবাস করছে এবং বংশপরম্পরায় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। এর আগে ‘বাঙাল খেদা’ আন্দোলন জোরদার করার কথা আমরা জানি। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষাভাষী বিশেষত মুসলমানদের আসাম থেকে বিতাড়ন করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া। সে আন্দোলন এখনো জারি আছে। তবে কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি ভারতীয় রাজ্যে বাঙালী মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ভারতীয় রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই ভালো চোখে বা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে না। দেখে না বলেই সব নেতা সব দলেরই এক রা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে। এ অনুপ্রবেশ রুখতে হবে। যারা অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। আরো আগে বিভিন্ন সময়ে ভারত তার ভাষায় ‘পুশ ব্যাক’ কর্মসূচি নিয়েছে এবং বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেছে। সে চেষ্টা সফল হয়নি। দেখা গেছে, বাংলাদেশী বলে যাদের ঠেলে দেয়া হয়েছে, তারা ভারতেরই নাগরিক। বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করেনি, ফেরত পাঠিয়েছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ বা বাংলাদেশী অভিবাসী ইস্যুটি সম্পূর্ণই ভারতের সৃষ্টি এবং এর পেছনে রয়েছে দূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর ও মর্যাদা হানিকর। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসাম বা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যাবে কেন? আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত এত উন্নত ও অগ্রসর নয় যে, বাংলাদেশ থেকে মানুষ ভারতে চলে যাবে। অবশ্য সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু মানুষ নানা কারণে ওদেশ থেকে এদেশে কিংবা এদেশ থেকে ওদেশে যাতায়াত করে। তারা কেউ ভারতে কিংবা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে না বা করার জন্য যায় না। এ ধরনের যাতায়াত বিশ্বের অন্যান্য দেশেও হয়ে থাকে। আরো একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, ভারতে অভিবাসী বাংলাদেশী বলে যাদের কথা বলা হয়, তাদের মধ্যে হিন্দুদেরও একটা বিরাট সংখ্যা রয়েছে। এরা বিভিন্ন সময়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে সেখানে গেছে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস গড়ে তুলেছে। সেখানকার বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-মুসলমানদের বাংলাদেশী বলে অভিহিত করা এবং তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেয়া বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই উৎকণ্ঠা বিচলনের বিষয়। এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া খুবই স্বাভাবিক।
বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজেপি’র মাতৃসংগঠন আরএসএস নেতারা মুসলমানদের ধ্বংস করার ডাক দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা দিনকে দিনই বাড়ছে। ইতোপূর্বে ‘ঘর ওয়াপস’ নামে এক কর্মসূচী নেয়া হয় যার লক্ষ্য মুসলমানদের হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করা। এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় হয়। পরে গো রক্ষার নামে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের তা-ব চালানো হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। এটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ভারতে মুসলমানরা স্বাধীনতার এত বছর পরও দলিত শ্রেণীর নীচে অবস্থান করছে। শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক ও সামাজিক নিরাপত্তা-কোনো ক্ষেত্রেই তারা সাংবিধানিক ও সমান অধিকার পাচ্ছে না। যে অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষমূলক পরিবেশ এখন সেখানে বিরাজ করছে তাতে কোনো মুসলমানই স্বস্তি অনুভব করছে না। এই অস্বস্তি ও অনিরাপত্তার কথাও তাদের উচ্চারণ করার উপায় নেই। কয়েকজন সাহস করে উচ্চারণ করায় নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের কম নয়। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে ধ্বংস করে হিন্দুরাষ্ট্র বা রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ভারতে শুধু হিন্দু-মুসলমানই নয়, সব মিলে ৪ হাজার ৬৩৫ টি জন সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতকে ঐক্যবদ্ধ ও সংহত রেখেছে। হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হলে এই ঐক্য ও সংহতি হুমকির মুখে পড়বে বলে সেখানকার বিদ্বৎ সমাজই বলছে। কাজেই, বিজেপি বা ভবিষ্যতে যে দলই ভারতে ক্ষমতায় আসুক, তাদের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির নীতি অনুসরণ করার বিকল্প নেই। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার অঙ্গীকার করেছেন। তার কিছু উদ্যোগ-প্রচেষ্টার কথাও সবার জানা। কিন্তু তার দল যখন আসাম-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করার কথা বলে, যখন তিনি তথাকথিত অভিবাসী ঠেকানো ও অভিবাসিত লোকদের বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানোর কথা বলেন তখন উদ্বেগ-বিচলনের পাশাপাশি দুঃখিত না হয়ে পারা যায় না। এই প্রেক্ষাপটে বিষয়টির প্রতি নজর রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের অবশ্যই সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।