পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণের পর থেকেই উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। ওইদিন রাজপথ দখলের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। মামলাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে নেতিবাচক কোন রায় হলে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দফায় দফায় চলছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাদের বৈঠক। তবে এর আগেই গত মঙ্গলবার পুলিশের প্রিজনভ্যান ও পুলিশের উপর হামলা করে বিএনপির কর্মী ছিনতাইয়ে ঘটনা ঘটে। আর এরপর থেকেই শুরু হয় রাজধানীজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার ও তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের তল্লাশি। গত দুই দিনেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকারসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে। অবশ্য এই গ্রেফতার অভিযানকে আলাদা করে দেখতে চাইছেন না বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে সরকার মারমুখী অবস্থানে যেতে পারে এমন তারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। হামলা-মামলা ও গ্রেফতারে আর পালিয়ে থাকতে চান না দলের নেতাকর্মীরা। বরং এখন থেকে রাজপথেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চান তারা। নেতাকর্মীদের এই কথার প্রমাণ পাওয়া যায় গতকালই। বিগত দিনগুলোতে বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলায় হাজিরার দিনে যে পরিমাণ নেতাকর্মী রাস্তায় উপস্থিত থাকতেন তার চেয়ে বিপুল সংখ্যক বেশি নেতাকর্মী এদিনে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে দেখা যায়।
সারাদেশে বিএনপির সিনিয়র নেতা এবং কর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সরকার দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই গ্রেফতার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, এখন পর্যন্ত কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। অথচ গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। দেশের যে স্থিতিশীল পরিবেশ নিজেরাই (সরকার) নষ্ট করছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনে রাজধানীতেই বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান-১ পুুলিশ প্লাজার সামনে থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা পুুলিশ তুলে নিয়ে যায়। রাত ১২টায় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে তার শান্তিনগরের বাসভবন থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। যুবদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক গাজী হাবিব হাসান রিন্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাছাড়া গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর থেকে ঢাকা মহানগর (উত্তর) দক্ষিণ খান থানার ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এম মিন্নত আলী, দক্ষিণ খান থানা বিএনপি’র সদস্য হারুন অর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তর খানা থানা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন, দক্ষিণ খান থানার ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, পল্লবী থানা বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান, তুরাগ থানা বিএনপি নেতা বুলু, খোকন সরকার, কবির, রামপুরা থানা বিএনপি নেতা ডল, ঢাকা মহাগর দক্ষিণ কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপি নেতা বাবুল, মানিক, নিউ মার্কেট থানা বিএনপি নেতা মতিউর রহমান, চকবাজার থানা বিএনপি নেতা আলামীন, শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা জামান আহমেদ পিন্টু, পল্টন থানা বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন তালুকদার, মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, মহিলা দল নেত্রী আরজু, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর নেতা জিল্লুর রহমান, আলম, জসিম এবং আলম দেওয়ানসহ প্রায় ৭০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার রাতে বিএনপি’র সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে রমনা হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যুবদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক গাজী হাবিব হাসান রিন্টুকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বাসায় বাসায় তল্লাশি: বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি গত মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন নেতার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবীর খোঁজ জানতে চায়। এছাড়াও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের ধানমন্ডির বাসভবন, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরীর শান্তিনগরের বাসভবন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, সাবেরা আলাউদ্দিন, যুবদলের কাজী আজিজুল হাকিম আরজুর বাসাসহ শত শত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশী তল্লাশী চালায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আশঙ্কা করছি সরকার তার একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য অর্থাৎ বিএনপিকে বাদ দিয়ে বিরোধী দলগুলোকে বাদ দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করার নীলনকশার দিকে এগুচ্ছে। এখন আমাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, তারপরও হঠাৎ করে গ্রেফতার বেড়ে যাওয়া একটা অশনিসংকেত। তিনি বলেন, সব চাইতে ভীতিকর বিষয় হলো গয়েশ্বর রায়কে গ্রেফতারের ঘটনা অনেক রাত পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করেনি। তিনি একজন বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ মানুষ। তার ওষুধগুলো পর্যন্ত সেখানে নিতে দেয়নি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী তাকে দেখতে গিয়েছেন, তার পুত্রবধূ দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুর রায় গয়েশ্বরকে দেখতে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এর আগেও গ্রেফতার হয়েছি কিন্তু ভেঙে পড়িনি। বিরোধী দলের উপর সরকার পক্ষের যতো নির্যাতন হয়, ততোই জনপ্রিয়তা বাড়ে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ধরপাকড়তো হবেই। তাদের (সরকারের) একটাইতো পথ খোলা। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথেতো সরকার যাবে না। তাই ধরপাকড় হচ্ছে। তবে যেকেনো পরিস্থিতি এমন হয় যে, কিছু মানুষ গ্রেফতার হলে অন্য কিছু মানুষ ভয় পায়। কিন্তু মানুষ এগুলো মানিয়ে নেয়। বড়জোড় দু-চার দিন এমন চলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।