পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : চট্টগ্রামে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন বøুুম বার্নিকাট পৃথক বৈঠক করেন। এই বৈঠকটিকে রাজনীতি সচেতন চট্টগ্রামের নাগরিকমহল গভীর তাৎপর্যের চোখে দেখছেন। চলছে এপিঠ-ওপিঠ আলোচনা। তবে দুই পৃথক বৈঠকের রাজনৈতিক আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে কেউই সরাসরি মুখ খুলছেন না। গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উভয় বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আলোচনায় প্রাধান্য পায় আগামী জাতীয় নির্বাচন। চলমান রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামের সার্বিক রাজনীতির পরিবেশ বর্তমানে কেমন সে সম্পর্কে বিশেষ কৌতূহল ছিল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের। তিনি অবহিত ও আশ্বস্ত হন, চট্টগ্রামে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ও অপরাপর দল-জোটের মধ্যকার রাজনৈতিক কর্মকাÐের একটা ঐতিহ্যগত স¤প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সদ্ভাব বজায় রয়েছে। বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের হালচাল সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেন মার্শা বার্নিকাট। রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাবও আলাপচারিতায় উঠে আসে।
গত ১৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাত করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন বøুম বার্নিকাট। এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সাথে তিনি সাক্ষাত করেন। রাষ্ট্রদূত নগরীর মেহেদিবাগস্থ আমীর খসরুর বাসায় হাজির হন ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায়। ফিরে আসেন রাত ১০টার দিকে। এ সময় সেখানে তিনি নৈশভোজে আপ্যায়িত হন। দীর্ঘ তিন ঘণ্টার সেই একান্ত বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল? জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত শুক্রবার রাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এটি ছিল ‘ওয়ান-টু-ওয়ান প্রাইভেট মিটিং’। একান্ত বৈঠক। আমরা আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বাইরে কথা বলতে চাই না। তবে তিনি জানান, এই বৈঠক ছিল পূর্বনির্ধারিত। ঘরোয়া আন্তরিক পরিবেশে কথাবার্তা হয়েছে।
অবশ্য দলীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে তার বাসভবনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের ম্যারাথন বৈঠকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েই মূলত দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়। তাছাড়া আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার এবং সব দলের অংশগ্রহণ যাতে নিশ্চিত হতে পারে সেসব বিষয় আলোচনায় গুরুত্বের সাথে উঠে আসে। চট্টগ্রামে আন্তঃরাজনৈতিক বা পারস্পরিক দলের নেতাদের মধ্যকার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও স¤প্রীতি রক্ষার বিষয়টি জেনে রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, আমীর খসরুর সাথে তার বাসভবনে অনুষ্ঠিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠককালে বেশিরভাগ সময়েই তারা দু’জনে একান্তে আলাপ-আলোচনা করেন। বৈঠকটি হয় হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক এবং বনেদী ব্যবসায়ী সাবেক মন্ত্রী মরহুম মাহমুদুন্নবী চৌধুরী পরিবারের সন্তান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বৈঠকটি তাৎপর্যের সাথে দেখছেন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বোদ্ধারা। উক্ত বৈঠকের শেষ পর্যায়ে এসে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাত করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি সুস্পষ্ট কোনো কথা বলছে না দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির উদ্দেশে বলেছিলেন, কোনটা চান, আপনারা রূপরেখা দিন। এই প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি সময়মতো রূপরেখা অবশ্যই দেবে।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের সঙ্গে বৈঠক
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন বøুুম বার্নিকাট গত ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরকালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে তার দপ্তরে বৈঠকে মিলিত হন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেয়র রাষ্ট্রদূতকে দেশের বাণিজ্যিক নগরী ও প্রধান সমুদ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হওয়ার কারণ নেই। এখানে স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে যার যার রাজনীতি চর্চা ও কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা হচ্ছে বলে জানান। মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে তাকে বিকশিত করার উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে। যেমন- কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম মহানগরী নদীর দুই তীরে সম্প্রসারিত হবে। এরফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আরও জোরালো হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহুমাত্রিক ব্যবহার বাড়ানো হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও গতিশীল হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
মেয়র নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও দুর্যোগ মোকাবিলা, ‘ক্লিনসিটি-গ্রিনসিটি’ ধারণার বাস্তব রূপায়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিচ্ছন্নতাসহ সেবার মান বৃদ্ধি করে তা কিভাবে নগরবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন সে সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত মেয়রের নাগরিক কল্যাণে গৃহীত কর্মকাÐের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির বলেন, চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজমান। এখানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবেও চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অটুট রয়েছে। যা চট্টগ্রামের অনেকটা ঐতিহ্য। দলে দলে বড় ধরনের কোনো বিবাদ নেই। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুর প্রভাব প্রসঙ্গে মেয়র রাষ্ট্রদূতকে জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চট্টগ্রাম নগরে তেমন প্রভাব পড়েনি। চট্টগ্রামে কোনো রোহিঙ্গা বসতি নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এখানে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজ করছে। মেয়র উল্লেখ করেন, গণতান্ত্রিক ও শান্তির দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হচ্ছে আমেরিকা। তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট জানান, চট্টগ্রাম সফরে এসে তিনি অভিভূত। মেয়রের গৃহীত গণমুখী পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন। চট্টগ্রামে ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল বা সংগঠনসমূহের মধ্যকার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি বজায় রেখে রাজনীতি চর্চার বিষয়টি অবহিত হয়ে রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।