Inqilab Logo

সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ডলারের সাথে পাল্লা দিয়ে চাইনিজ ইউয়ানের রিজার্ভ বাড়ছে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর অন্যতম অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে চীন তার খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষের দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন এখনি সময় চীনকে বিশ্বের মধ্যমণির স্থানে নিয়ে যাবার। বিশ্বায়নের এই যুগে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং তুখোড় পররাষ্ট্রনীতি চীনকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মোড়লে পরিণত করতে পারে। এই অর্জনের ক্ষেত্রে মূল পদক্ষেপ নিতে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের মুদ্রাকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। গত কয়েক দশক যাবৎ আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার তার প্রতাপ ধরে রেখেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির দুই তৃতীয়াংশ প্রায় ৬.৯ ট্রিলিয়ন ডলার (৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা প্রায়) মার্কিন ডলারেই লেনদেন হয়। ২০১৬ সালে চীনের ইউয়ান আন্তর্জাতিক বাজারে এক বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেখানে আইএমএফ ডলারের পাশাপাশি ইউয়ান মুদ্রা রিজার্ভের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আইএমএফ-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর বৈশ্বিক মুদ্রা রিজার্ভের চার তৃতীয়াংশের মধ্যে ইউয়ানের পরিমাণ ছিল এক শতাংশ, যদিও এখন তুলনামূলকভাবে এর পরিমাণ বাড়ছে। তবে মজার বিষয় হল, গত দু’সপ্তাহ ধরে ডলারের বিরুদ্ধে ইউয়ান-এর মূল্যবৃদ্ধির আঘাত যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যেটি অর্থনীতিবিদদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।
এদিকে জার্মানির বুন্দেস ব্যাংক জানায়, এই প্রথম তারা তাদের রিজার্ভে চাইনিজ ইউয়ানকে সংযুক্ত করেছে। ইউরোপিয়ান অর্থনীতিবিদদের মতে, ইউয়ানের ধারাবাহিক উন্নতি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে নতুন করে ভাবাতে শুরু করবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যনির্বাহী বোর্ডের সদস্য আন্দ্রেস ডম্ব্রেট হংকংয়ে এক সম্মেলনে বলেন, গত বছরে নতুন বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত নতুন করে বিনিয়োগ করা হয়নি। সিদ্ধান্তটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তবে নতুন করে ফ্রান্স কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য প্রকাশ করে তাদের রিজার্ভে কিছু পরিমাণ ইউয়ান ছিল।
অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রিজার্ভের ক্ষেত্রে ডলারের সূচকে নির্ধারিত করে সেক্ষেত্রে অন্যান্য মুদ্রা, যেমন ইউয়ান কিংবা অন্যান্য যেসব মুদ্রা রয়েছে তাদের বিনিময়ের ক্ষেত্রে গ্রিনব্যাক নীতি অনুসরণ করা হবে। গত বছরের জুনে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দেয়, তারা চীনের বিভিন্ন সিকিউরিটিজ কোম্পানির সাথে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ইউয়ানে বিনিময় করেছে, যদিও তারা মনে করে, এটি আপাতদৃষ্টিতে একটি ছোট বিনিময়। তাদের ভাষ্যমতে, তাদের রিজার্ভে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ইউরো রয়েছে। ইউয়ানের এই ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতি চীনের উন্নয়নের ছাপ বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এই দিকে ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে বহির্বিশ্বের কাছে দাম্ভিকতার রূপ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রান্তিকতার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। যার ফলে জনগণের মনে মার্কিনবিরোধী অর্থনৈতিক মনোভাব দেখা দিয়েছে তা চীন পুরণ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতি বিষয়ক অধ্যাপক এবং বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থার বিশ্লেষক ব্যারি ইচেনহেনিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের আধিপত্য হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য মুদ্রার সাথে ডলারের বিনিময় হজার প্রায় সমান হবে বলে ভবিষ্যাদ্বাণী করেন। বিশেষ করে ইউয়ান এবং ইউরো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে বলে তিনি আশা করেন। একটি সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানের মুদ্রা থাকার পরও চীন এখনো অর্থনৈতিক কিছু অসুবিধার সম্মুখীন। ক্যাপিটাল নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতার অভাব এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনীহা এই সমস্যাগুলি তাদেরকে কিছুটা অন্ধকারের দিকে ঝুকে দিলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের উত্থান এই অন্ধকারকে পুরোপুরি আলোতে নিয়ে আসবে এই আশাই করছেন ঝানু অর্থনীতিবিদরা। সূত্র : রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডলারের

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৫ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ