পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শীত গ্রীস্ম বর্ষা কোন মওসুমেই স্বস্তিতে থাকছেনা উত্তরাঞ্চলের মানুষ। বছর জুড়েই বিরুপ আবহাওয়ার সাথে লড়াই করছে। শীত মওসুমে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে তিন চার ডিগ্রী সেলসিয়সের নীচে। আবার গ্রীস্মের সময় তাপমাত্রা চড়ে যাচ্ছে ৪৪ ডিগ্রীতে। বর্ষার সময় উজান থেকে ঢলের পানি আর ভারতের পানি জল্লাদের হাতে বিভিন্ন ব্যারেজের বন্দি পানি ওপারের বন্যার চাপ ঠেকাতে ছেড়ে দিচ্ছে। ডুবছে গ্রাম জনপদ ফসলের ক্ষেত। প্রচন্ড শীতে কাপছে মানুষ। মরছে শীতজনিত অসুখ বিসুখে। ফসলে আঘাত হানছে কোল্ড ইনজুরি।
গরমে চামড়া জ্বালানো উত্তাপ। হিট স্ট্রোকে মানুষ মরা। ফসলের ক্ষেত জ্বলে ছারখার। আবার বন্যায় ভাসছে চারিদিক। এটাই যেন নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। দেশের খাদ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত উত্তরের মানুষ শীতে কাঁপতে কাঁপতে ফসলের ক্ষেতে যাচ্ছে। কষ্ট সহ্য করে ফসলের যত্ম আত্তি করছে। টাটকা শাকস্বব্জির যোগান দিচ্ছে। আবার গরমের সময় রোদে পুড়ে ধান ফলছে। দিচ্ছে খাদ্যের যোগান। এরমধ্যে বর্ষা মওসুমে এসে ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যায় সয়লাব হচ্ছে। ঘাম ঝরানো ফসল ডুবছে। কৃষকের লোকসানের আর কষ্টের পাল্লা আরো ভারী হচ্ছে প্রতিবছর। ধার-দেনা করে ঘাম ঝরিয়ে আবাদ করে কখনোই নায্য দাম পাচ্ছেনা উৎপাদকরা। ধান থেকে আলু শাকস্বব্্িজ কোন কিছুর বিক্রি করে লাভের মুখ খুব কমই দেখতে পায়। কখনো বেগুনের দামে আগুন থাকলেও তা পাচ্ছে না যারা ঘাম ঝরিয়ে এসব ফলায় তাদের কাছে।
মুলো বেশীর ভাগ সময় হয়ে পড়ে মূল্যহীন। এবারো ব্যাপক আলু ফলিয়ে গলায় লোকসানের রসি পড়েছে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের। কোন মওসুমে কোন ক্ষেত্রেই স্বস্তি নেই এখানকার মানুষের। বিগত বছর গুলোর তুলনায় এবার শীতটা একটু বেশী ঝাঁকিয়ে বসেছে। তাপমাত্রা নামতে নামতে তিন ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নেমেছে। শীতের সাথে হিমালয় ছুঁয়ে আসা শীতল বাতাস বিপর্যস্ত করে ফেলেছে জনজীবনকে। কাঁপছে মানুষ। কাঁপছে পশু পাখি। গরমের সময় ৪৪ ডিগ্রীর তেজ দেখানো সূর্যের দেখা নেই বেশ কাদিন ধরেই। চারিদিক গাঢ় কুয়াশার চাদরে মোড়া। কুয়াশার আবরন ভেদ করে মধ্য দুপুরে কখনো কখনো সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তা গণগনে নয় থাকছে ফ্যাকাসে তেজহীন উত্তাপহীন। পৌষের মধ্যভাগ থেকে এমন বিরুপতা দেখা যাচ্ছে। শুরু হয়েছে মাঘের। প্রবাদ রয়েছে মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে। এবারতো মাঘের আগেই বাঘ কাপানো শীত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া বিশারদরা বলছেন সামনে শীতের তীব্রতা আর শৈত্য প্রবাহ বাড়বে। তাপমাত্রা দশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নেমে গেলে ধরা হয় শৈত্যপ্রবাহ। একক সংখ্যার ঘরে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা। তিন ডিগ্রীতে নেমে যাওয়া তাপমাত্রা আট নয় ডিগ্রীতে উঠলেও এতটুকু কমেনি শীতের তীব্রতা। কুয়াশার কারনে রাতেতো বটেই মধ্য দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে যানবাহনকে। রাতের বেলায় সড়ক পথে চলাচল করাবেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এ অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম যমুনা সেতু ক্ষনিকের জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখা হয় কখনো কখনো। তারপর টাঙ্গাইলের কাছে ফোরলেন রাস্তার কাজ আরো দূর্ভোগ বাড়িয়েছে। যানজটে কেটে যাচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা দু:সহ সময়। সব পরিবহন কোম্পানীর গাড়ি চলাচলের সিডিউল লন্ডভন্ড। কয়টার গাড়ি কয়টায় পৌছায় তার ঠিক নেই। রেলের স্ডিউলও বিপর্যয়। সকালের ট্রেন ছাড়ছে দুপুরে। রাত নটার ট্রেন পৌছাচ্ছে রাত তিনটায়। পশ্চিমরেলের এমন সিউিউল বিপর্যয়ে মানুষ পড়েছে বিড়ন্বনায়। বাস ট্রেন সর্বক্ষেত্রে লন্ডভন্ড অবস্থা। গাঢ় কুয়াশার কারনে সড়ক দুঘটনার পরিমানও বেড়ে গেছে। রেহায় পায়নি রেলও। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলটি যেন পুরো প্রকৃতি এক হিমাগার। এতে করে দূর্ভোগে পড়েছে নানা বয়স ও শ্রেণী পেশার মানুষ। নি¤œআয়ের মানুষগুলো পড়েছে সবচেয়ে বিপাকে। বিশেষ করে দিন খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে ডালি কোদাল নিয়ে গ্রাম থেকে ছুটে আসছে শহরে। জড়ো হচ্ছে শ্রম বিক্রির স্থান গুলোয়। শীতের প্রচন্ডতা থমকে দিয়েছে উন্নয়ন কর্মকান্ড। আর কাজ বন্ধ থাকা মানে এসব মানুষ কর্মহীন হওয়া। পরিনতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহার অর্দ্দাহার। শীতের হিমেল হাওয়া কাপিয়ে তুলেছে পদ্মা-যমুনা-তিস্তা পাড়ের ছিন্নমুল মানুষকে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের জনজীবনকে। শীতের তীব্রতা আঘাত হেনেছে শস্য প্রধান এ অঞ্চলের ক্ষেত গুলোয়। বিশেষ করে বোরোর বীজতলায় কোল্ড ইনজুরির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষকরা এনিয়ে বেশ শংকিত। আমনের দাম বেশী পাওয়া এবং বাজারে চালের দাম বেশী থাকায় এবার বোরো আবাদের দিকে বেশী ঝুকে পড়েছে। চাহিদার কথা ভেবে বোরোর বীজতলা তৈরী হয়েছে বেশী। সেই বীজতলা এখন কোল্ড ইনজুরির মুখে। শীতের তীব্রতা থেকে বীজতলা বাঁচাতে প্রানান্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কৃষক। রাতের বেলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছে বীজতলা। সূর্য উঠলে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। কেউ বীজতলার কুয়াশার পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছেন। আলু ক্ষেতে লেটব্রাইটের প্রকোপ। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রকম বালাই নাশক। টমেটোসহ বিভিন্ন শাক স্বব্জির ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। সূর্যের তাপ না থাকায় টমেটোয় পাক ধরছেনা। অন্যসব ফসলের গাছগুলো বেশ কুকড়ে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা সব বয়সের মানুষকে কাহিল করে ফেলেছে। হাসপাতালে ক্লিনিক ডাক্তারের চেম্বারে শীত জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে ঠাই নেই অবস্থা।
আবহাওয়ার এমন রকম ফের নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবার সব কিছুর রেকর্ড ভেঙ্গেছে। যেমন গরম পড়ছে। তেমনি বেশী বর্ষণ হচ্ছে। তেমনিভাবে এবার শীত পড়ছে রেকর্ড ভাঙ্গা। তাদের মতে এটাকে এখনই জলবায়ু পরিবর্তন বলা যাবেনা। বারে বারে এমন শীত যদি আসে তবে তাকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলা যেতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাবেক প্রোভিসি প্রফেসর সারওয়ার জাহান সজল বলেন অর্ধশত বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে এবারের শীত। খরা যেমন ফি বছর ফিরে আসছে। তেমনি শীত বারবার এমন রুপে ফিরে আসছেনা। এ কারণে এটাকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলা যাবেনা। এ বছর বেশী বৃষ্টি হয়েছে। প্রচন্ড ঘরম পড়েছে। শীতের তীব্রতা বেশী। বর্ষার পরে এবার ভাদ্র মাসে ভালো রোদ্র পড়েনি। ভেজা অবস্থার কারনে মাটি গরম হয়নি। যার কারনে শীতের অনুভুতি বেশী হচ্ছে। একই বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর গোলাম শাব্বির তাপুর অভিমত জলবায়ু পরিবর্তনের মুল কারন হিসাবে সর্বাগ্রে যে বিষয়টা আসে সেটি হচ্ছে মানব সৃষ্ট কারন। এর কারনে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে যে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এটিকে স্বাভাবিক ভাবে দেখতে হবে। জেট স্ট্রিম সাধারনত ৫০ থেকে ৬০ হাজার ফুট উপর দিয়ে বয়ে যায়। এ বছর তা দশ হাজার ফুট নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের দেশে শীত অনুভুত হয় সাইবেরিয়ান বাতাসের কারনে। এ বছর সে বাতাসে তাপমাত্রা খুব কম। যার কারনে শীত বেশী পড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।