Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যাত্রীরা নাকাল কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

কমলাপুর থেকে দিনাজপুর-একদিনের ট্রেন যাত্রা

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আসন নম্বরসহ টিকেট কেটে সিটে বসা সম্ভব হচ্ছে না। একই সিটে বসে আয়েস করছেন টিকেট না কাটা যাত্রী। সিট ছাড়তে বলা হলে উত্তর এলো একটু অপেক্ষা করুন সামনের স্টেশনে নেমে যাব। বেশী কিছু বলা যাবে না কারন এরা ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী। টিকেটবিহীন আসনবহনকারী যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হলো টিটি মহোদয়ের আনাগোনা। আসনে সুস্থভাবে বসতে না বসতে টিকেট বের করে দেখাতে না পারলে আরো এক বিড়ম্বনা। এ ছিল ঢাকার কমলাপুর থেকে দিনাজপুর রেল ভ্রমনে একদিনের কিছু অভিজ্ঞতা। অবশ্য আরো একটি ভিন্নধরনের অভিজ্ঞতা তা হলো স্টেশনে ঢোকার সময় কোন টিকেট চেক না করা হলেও বাহির হওয়ার সময় গেটে টিটি’র মুখোমুখি হতে হয়। যদিও টিকেট কাউন্টার বাহিরেই অবস্থিত। অথচ কর্তৃপক্ষ আইনের প্রতি আন্তরিক ও সচেস্ট হলেই নিয়মিত অভিযান চালিয়ে টিকেটধারী যাত্রীদের যাত্রা সুন্দর করার পাশাপাশি রেলের আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারেন।
গতকাল শুক্রবার কমলাপুর থেকে একতা এক্সপ্রেসে দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই টিকেটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকি। কাউন্টারে এসি চেয়ার, নন এসি চেয়ার ও শোভন শ্রেণির কোন টিকেট পেলাম না। বিকেলের দিকে ইন্টারনেটে পেয়ে গেলাম শোভন শ্রেনীর ৪টি টিকেট। দেরী না করে ক্রয় করে নিলাম। আগে-ভাগেই জানতাম ইজতেমা’র মাঠে জুম্মার নামাজ আদায়ের জন মুসুল্লিভাইয়েরা ট্রেনে যাত্রা করবেন। তাই অপেক্ষাকৃত একটু বেশী ভীড় হবেই। আর এ কারনে কমলাপুর স্টেশনে না গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম ভীড় এড়িয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে ট্রেনে উঠার জন্য বিমান বন্দর স্টেশনে এলাম। স্টেশনে এসে কমলাপুরের পরিবর্তে বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন ধরার সিদ্ধান্ত নেয়ায় নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ জানালাম। কেননা স্টেশনে ইজতেমাগামী যাত্রী চোখে পড়লো না। প্রায় পৌনে দু’ঘন্টা পর কাংখিত ট্রেন আসলো। পরিবার নিয়ে ট্রেনে উঠতে যেয়ে রীতিমত যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হলো। ট্রেনে নির্দিস্ট সিট পর্যন্ত যেতে লাগলো আরো কয়েক ঘন্টা। লক্ষ্য ছিল আসনে বসে ল্যাগেজ জানালা দিয়ে তুলে নিবো। এজন্য আমার ছেলে ল্যাগেজ নিয়ে প্লাটফরমে দাড়িয়ে থাকলো। অনেক কস্টে আমার ৫২ থেকে ৫৫ নম্বর সিটের কাছে এসে দেখলাম কয়েকজন ভদ্র মহিলা বসে আছেন। তাদের সিট ছাড়ার অনুরোধ করার পর উত্তর এলো একটু অপেক্ষা করুন। বললাম ল্যাগেজ নিবো। তাতে কোন কর্ণপাত করলো না। এর মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিলো। দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম ল্যাগেজ নিয়ে আমার ছেলে ছাড়া পড়লো কিনা। এরমধ্যে ওই মহিলাদের আসন ছেড়ে স্ত্রী, কন্যাদের বসার সুযোগ দিতে বলায় রীতিমত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। বললো আসতে বলতে পারেন না। আমিতো বেয়াকুপ বনে গেলাম। যাহোক কোন মতে স্ত্রী-সন্তানদের বসিয়ে নিজে ল্যাগেজসহ সন্তানের খোজে আগাতে শুরু করলাম। যাক দুই কামড়ার পর দেখলাম হ্যান্ডেল ছাড়াই ল্যাগেজ হাতে আমার সন্তান শীতের মধ্যে ঘামছে।
যাহোক সিটের কাছে আসা মাত্র আসন দখল করা মহিলা যা তা ভাসায় ভৎসনা করছে আমাকে উদ্দেশ্য করছেন আর বলছেন আমরা নিয়মিত যাতায়াত করি। পাশ থেকে একজন বললেন আপনাদের সিট নেই। গর্বিত সুরে মহিলা বললেন সিট দিতে পারে না তাই টিকেট কেটে লাভ কি!!! পাশের আরো কয়েকজন সিটধারী যাত্রীও বললেন আমাদের সিটেও অন্যেরা বসে আসে। যা হোক জয়দেবপুর স্টেশনে এসে মহিলারা নেমে গেলেন (মহিলার নাম ও পরিচয় উল্লেখ করলাম না তাদের সম্মানের কারনে। তবে গুলশান এলাকায় বান্ধবীসহ আড্ডা তাদের।
টিকেট বিহীন যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর যখন সিটে বসে ল্যাগেজ গোছানোর কাজ করছি-ঠিক সেই মুহুর্তে সাবিবদ্দভাবে টিটিগন আসলেন এবং টিকেট দেখতে চাইলেন। বললাম ভাই এটা আন্তঃনগর ট্রেন। এটেনডেন্ট বা স্টেশনে দায়িত্বরত টিটিরা কি কেউ টিকেট চেক করেন না। টিটি কিছু না বললেও পাশ থেকে এক যাত্রী বললেন মাসিক চুক্তি রয়েছে।
আলাপচারিতায় জানতে পারলাম, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার যানজোট এড়িয়ে বাস ধরার জন্য ট্রেনে কমলাপুর থেকে টঙ্গি, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন পর্যন্ত এভাবেই বিনা টিকেটে এসে থাকেন। আবার উল্টরা, বারিধারা বসুন্ধরাসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দা যারা ঢাকায় পড়াশোনা অথবা চাকুরী করেন তারা এভাবেই এসে থাকেন। কস্ট এড়াতে এরা লোকাল নয় আন্তঃনগর ট্রেনগুলিকেই ব্যবহার করে থাকে।
ভুক্তভোগী একজন যাত্রী ক্ষোভের শুরেই বললেন প্লাট ফরম থেকে বের হতে গেটে টিটির চেকে পড়তে হয়। কিন্তু ঢোকার সময় টিটির চেকে পড়তে হয় না। দ্বিতীয়তো আন্তঃনগর ট্রেনে এটেনডেন্ট রয়েছে তারা টিকেট দেখে উঠালেই হয়। সবশেষ কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর-পরই মাঝে মাঝে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেই টিকেট না কেটে ট্রেনে উঠার প্রবনতা কমে যাবে। হয়তো সচেতনতা বাড়বে জ্ঞানী যাত্রীদের। আয় হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের। যা উন্নয়নের কাজে লাগবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ