Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতের প্রকোপ কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি
৫০ বছরের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সোমবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করার পর গতকাল বুধবার শীতের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তবে ঠান্ডার তীব্রতা তেমন কমেনি। গতকাল বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় ছিল তাপমাত্রা ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পৌষের কনকনে শীতে কাঁপছে সারাদেশ। সাথে আবার ঘনকুয়াশা ও হীমেল হাওয়া। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক জীবনের নিত্য প্রবাহে পড়েছে ভাটা। শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেশিরভাগই সময় সূর্য আড়মোড়া ভাঙতে পারছে না। ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুরে ৫ জন মত্যৃবরণ করেছে। গত কয়েক দিনে সারাদেশে মারা গেছে প্রায় অর্ধশত মানুষ।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বুধবার চুয়াডাঙ্গায় জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে যশোরে ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়স। যা মঙ্গলবারের তুলনায় অনেক উন্নত। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়াও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া স›দ্বীপ, সীতাকুন্ড, কুমিল্লা, ফেনি ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরণের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
হিমেল হাওয়ায় কাবু উত্তরাঞ্চলের সবখানেই এখন উষ্ণতার পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। প্রচন্ড শীতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, বগুড়া, নিলফামারী, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষ। চরাঞ্চল তথা দরিদ্র জনপদে এবং অতি দরিদ্র এলাকাগুলোর শীতার্ত মানুষের দুঃসহ দিনযাপনের করুণ-কঠোর চিত্রের খুব অল্প চিত্রই জাতীয় পর্যায়ের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় উঠে আসছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রকাশিত স্থানীয় সংবাদপত্রে হয়তো দুঃসহ-দুর্গতির এই চিত্র কিছুটা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। শীত ও শৈত্যপ্রবাহের সাথে তীব্র-ঘন কুয়াশা জনজীবনের পাশাপাশি যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করে তুলেছে ব্যাহত, বিপর্যন্ত। দিনের বেলায় অধিকাংশ জেলায় যানবাহনগুলোয় হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরি বন্ধ রাখা হচ্ছে ঘণকুয়াশার কারণে। মূলত নৌপথে যোগাযোগ ও যাতায়াত মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার কবলে পড়েছে। এছাড়া কৃষি কাজের প্রতিবন্ধকতা, বিশেষভাবে প্রাথমিক ধাপে বাধার মুখে পড়ছে কৃষিজীবীরা। শীতে মৃত্যুর ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। শীতবস্ত্রের অভাব প্রকট। মুন্সীগঞ্জে ঘন কুয়াশায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি সার্ভিস রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ থাকছে। ফেরি পারাপারের বাস আটকে পড়ায় কনকনে শীতে হাজার হাজার যাত্রী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহায়। ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উভয় প্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় থাকছে কয়েকশ যানবাহন ও পন্যবাহী ট্রাক। রাজশাহী অঞ্চলে শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া অপরিবর্তিত রয়েছে। রাতের ঘন কুয়াশা বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয়। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। শীতে কাঁপছে গাইবান্ধার মানুষ। গতকাল গাইবান্ধার আকাশে সূর্যের দেখা মিললেও দিনভর ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে মানুষের জীবনযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানবাহনের ছিল অস্বাভাবিক চাপ। ঘন কুয়াশার কারণে বাতি জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও গাইবান্ধা বালাসি-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে নৌকা চলাচল বিঘিœত হয়। শীতবস্ত্রের অভাবে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
অপরদিকে এবার সরকারিভাবে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অথচ বেসরকারিভাবেও তেমন একটা শীতবস্ত্র বিতরণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না।
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম জানান, অব্যাহত শৈত প্রবাহে কুড়িগ্রামের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পরেছে। গত কয়েকদিনের টানা তীব্র শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। তীব্র ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশার ফলে কাজে বের হতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। দেরীতে কাজে যাওয়ার ফলে মজুরী কমে যাচ্ছে। এদিকে গত চব্বিশ ঘন্টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ১ শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরফলে এই শীতের সময় বিভিন্ন রোগে ১১জন মারা গেল। এদিকে কনকনে ঠান্ডার ফলে বয়স্ক আর শিশুরা অল্পতেই কাহিল হয়ে পড়ছে। দেখা দিচ্ছে নানান রোগব্যাধী। আগুন জ¦ালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছে শীতার্ত মানুষ। সকালে হেডলাইট জ¦ালিয়ে গড়ি চলাচল করছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারদিক। সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যায় গোটা এলাকা। প্রতিদিন হাসপাতালে বাড়ছে নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ১৮২ জন রোগী ভর্তি ছিল। এদের মধ্যে ডায়রিয়ায় ২১ শিশুসহ ২৪ জন, শিশু ওয়ার্ডে ৩৪ জন।
নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ মোটা কাপড়েও ঠেকাতে পারছে না হিম ঠান্ডা। তাপমাত্রা কিছুটা উন্নতি হলেও বুধবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলা জুড়ে শীতের ভয়াবহতা বিরাজ করছে। মানুষকে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীত জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ আনোয়ারুল হক জানান, সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ১৮২জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ৫৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরো ৪০ হাজার কম্বল ও শিশু উপযোগী ১০ হাজার গড়ম কাপড়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে জানান, সাতক্ষীরায় প্রচন্ড শীতে শিশুদের শ^াসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গত কয়েক দিনে মৃত্যু হয়েছে অন্তত সাতজনের। এছাড়া ঠান্ডাজনিত রোগাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে অন্তত ২৪৯ শিশু।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত দশদিনে সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগাক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৪১ শিশু। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৩জন।
একইভাবে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩৫ শিশু। সাতক্ষীরার আশাশুনি সদরের ইসমাইল হোসেন জানান, তার ছেলের বয়স ২দিন। প্রচন্ড শীতে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জরুরী ভিত্তিতে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে তিন দিন ধরে তার চিকিৎসা চলছে। এখন অবস্থা মোটামুটি ভাল। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার ইশারত আলী জানান, তার ছেলের বয়স দেড় বছর। হঠাৎ গত ৭ জানুয়ারি সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাই হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া কোন পথ ছিল না। সদর হাসপাতালের স্টাফ নার্স রাবেয়া খাতুন বলেন, হঠাৎ শৈত্য প্রবাহের সাথে শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দশদিনে আড়াই শতাধিক শিশু সদর হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রচন্ড শীত পড়ায় অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত দশদিনে এই হার বেড়েছে। সচেতন না হলে অর্থাৎ শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে না পারলে তা ভোগান্তির কারণ হতে পারে। এদিকে, সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, সাতক্ষীরায় জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ৮ জানুয়ারি ৭.৫ ডিগ্রি, ৯ জানুয়ারি ৫.৬ ডিগ্রি ও ১০ জানুয়ারি ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ম আয়ের মানুষজন। হিমালয়ের পাদদেশে ঘেঁষা নীলফামারী জেলায় বরাবরে শীতের তীব্রতা অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশী। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ জেলায় গত সোমবার ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরপর মাঝখানে একদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও গতকাল বুধবার সকাল থেকে আবারও তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বুধবার সকালে নীলফামারীতে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাত ৮ টা থেকে দুপুর ৩ টা পযর্ন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে পথ-ঘাট। কুয়াশার কারণে কয়েকগজ দুরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এদিকে তীব্র শীতে মানুষজনের পাশাপাশি যুবুথুবু হয়ে পড়েছে গবাদি পশুরাও। কেউ চট গায়ে দিয়ে বাহিরে বের করলেও অনেকে দুপুর পযর্ন্ত ঘর থেকে বের করেনি গবাদি পশুকে।
আনোয়ারা উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তীব্র শীতে ২ জন বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামের মৃত কালা মিয়ার পুত্র সোনা মিয়া (৬০) ও সকাল ৯টায় আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের মৃত দ্বীনবন্ধু মিত্রের পুত্র প্রবোধ মিত্রকে (৬৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা.ঈশিতা আইরিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। উভয়কে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়েছে। উল্লেখ্য,গত তিনদিন ধরে আনোয়ারা উপক‚লে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তীব্র শীত আর হিমেল বাতাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সোনাগাজী উপজেলার ০৩ নং মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নে শীতে, একই উপজেলার আহমদ পুর নিবাসি কাতু মিয়ার পুত্র সায়েদুল ইসলাম (২০) মারা যায়। জানা যায়, সায়েদুল ইসলাম রাজাপুর গ্রামে ১টি মোরগের খামারে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো। গত মঙ্গল বার রাতে প্রচন্ত ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকালে খামারেই তার মৃত্যু হয়। এলাকাবাসী জানান, সায়েদুল দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার ভোগছিল। এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজেম হোসেন জানান, তার মৃত্যতে থানায় একটি অপমৃত্যর ডায়েরী করা হয়েছে।
লালপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কয়েকদিন যাবত উত্তরাঞ্চলে পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুরে উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সৈত্যপ্রবাহ সাথে রয়েছে ঘনকুয়াশা ও হিমেল বাতাস। পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় বিপাকে পরেছে ছিন্নমূল সহ হতদরিদ্র মানুষে জীবন। ৪দিন যাবত লালপুরে বেলা ১২ দিকে হালকা দুর্যের মুখ দেখা গেলেও তা বিকেল হতে হতে আবর তা ঘনকুয়াশায় চারেদিক ঢিকে গেছে। এতে খেটে খাওয়া, চাকুরিরত, পথযাত্রীসহ যানবাহন চালকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বুধবার সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ঘনকুয়াশার কারনে কাজে যেতে পারেনি খেটে খাওয়া মানুষ। ঘনকুয়াশার কারনে সড়কে যানবাহন বেরকতে পারেনি চালকরা। ফলে উপজেলার প্রধান সড়ক গুলি ছিলো ফাঁকা। কর্মস্থলে সময় মত পৌঁছাতে পারেনি চাকুরিরতরা। সবমিলিয়ে কয়েক দিনে উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বুধবার সকালে নাটোর জেলার তাপমাত্র ছিলো ০৯ ডিগ্রী সেনসিয়াস।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপকূলীয় মঠবাড়িয়ায় গত ৫/৬ দিন ধরে বয়ে যাওয়া শৈত্য প্রবাহে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র শীতে ঠান্ডা জনিত রোগে উপজেলার ওয়াহেদাবাদ গ্রামে মোঃ বায়জিদ (২০ মাস) নামে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বায়জিদ ওই গ্রামের কাঠ মিস্ত্রী মোঃ মিরাজ এর ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, তীব্র শীতে বায়জিদের নিউমোনিয়া দেখা দেয়। বুধবার সকালে শ্বাষকষ্ট দেখা দিলে মঠবাড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসার পথে বায়জিদের মৃত্যু হয়। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবনে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বলেশ্বর নদ তীরবর্তী জেলে পল্ল­ীসহ বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১০ হাজার মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। শৈত্য প্রবাহের কারনে রাস্তা-ঘাটে মানুষজনের উপস্থিতি কমে গেছে। পৌর শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার সন্ধা নামার সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষজনও কাজে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রচন্ড শীত থেকে রক্ষা পেতে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে দরিদ্র শ্রেনীর লোকদের। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঠান্ডাজনিত সর্দি ও কাশি সহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে বৃদ্ধাসহ শিশুরা বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ বশির আহমদ জানান, ঠান্ডা জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও ব্যাপক আকার নেয়নি। তবে শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে ব্যাপক আকার নিতে পারে। তিনি শৈত্য প্রবাহে শিশু ও বৃদ্ধদের ঘরের ভিতর থাকা এবং প্রয়োজন হলে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ