পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিনের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি অথবা খানাখন্দে বেহালদশা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মিরপুরের ১০ নম্বর গোল চক্কর থেকে যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা অথবা লালবাগ চকবাজারের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় এখন অভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ঢাকার যানজট নিয়ে আলোচনা উঠলেও প্রথমেই যে বিষয়টি উঠে আসে তা হচ্ছে, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ট্রাফিক আইন অমান্য বন্ধ করা এবং যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ট্রাফিক আইন ও শৃঙ্খলা বলবৎকরণে এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গত কয়েক বছরে নগর কর্তৃপক্ষকে বেশকিছু উদ্যোগ নিতে দেখা গেলেও বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিস এবং সংস্কার ও উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি মোটেও কমেনি, বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার যে হালহকিকত বর্ণিত হয়েছে তা রীতিমত উদ্বেগজনক। দীর্ঘদিন ধরে খনাখন্দে পরিনত রাস্তাগুলো সংস্কারের নামে কেটে খাল বানিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। এসব রাস্তায় একদিে ক যান চলাচল অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে, অন্যদিকে শীতের শুস্ক আবহাওয়ায় ধুলোতে সয়লাব হয়ে পড়ছে রাস্তার আশপাশ। সেই সাথে সামান্য বৃষ্টিতে এসব রাস্তা বিপজ্জনক ফাঁদে পরিনত হয় এবং কাঁদাপানি ও নর্দমার আবর্জনায় দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে পরিবেশ। শহরের কোন কোন রাস্তা সেই বর্ষার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ার পর এখনো পানিবদ্ধ হয়ে আছে।
আমরা যখন অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার নানা পরিসংখ্যান দেখছি তখন দেশের রাজধানী শহরটি বিশ্বের অন্যতম অনিরাপদ ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় বার বার শীর্ষস্থান লাভ করছে। ঢাকার রাস্তায় যানজট, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ, শহরের ভেতরের খাল ও জলাশয়গুলো বেদখল ও ভরাট করার পেছনে কারা জড়িত তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। ঢাকার যানজটের কারণে নাগরিকদের দৈনিক কত কোটি কর্মঘন্টা নষ্ট হয়, বছরে কত হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সেই পরিসংখ্যানও বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ঢাকার খাল ও সরকারী জমি দখলের সাথে জড়িতদের তালিকাও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে এসব তালিকা ধরে কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বা সরকারী জমি উদ্ধার করা হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। রাজধানী শহরকে বসবাসের অযোগ্য, অনিরাপদ এবং অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের জন্য অচল হয়ে পড়ার বাস্তবতা জিইয়ে রেখে দেশেকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায়না। সরকারের সংশ্লিষ্টরা যত তাড়াতাড়ি এটা বঝবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। যেখানে গত বছরের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া অনেক রাস্তায় এখনো পানি জমে থাকে, সে সব রাস্তাকে পরিচ্ছন্ন ও যান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে কোন জরিপ রির্পোটের প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও উদ্যোগই যথেষ্ট।
এখানে শুধু ঢাকা নগরীর বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর, সিটি কর্পোরেশন এবং জেলাশহরের রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। সারাদেশে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পরও অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হচ্ছেনা। সড়ক-মহাসড়ক, ফ্লাইওভার ও অবকাঠামো নির্মানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বাহুল্য ঘটে বাংলাদেশে। যা প্রতিবেশী ভারত ও চীনের চেয়ে কয়েকগুন বেশী এমনকি ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়েও বেশী। সবচেয়ে বেশী টাকা থরচ করে সবচেয়ে অনুন্নত ও কম টেকসই রাস্তা নির্মান করা হয় বাংলাদেশে। এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের মন্ত্রনালয়গুলো ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাটে মেতে উঠে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা। ঢাকার জনদুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কাজে সমন্বয় বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। ঢাকার নির্বাচিত মেয়ররা তাদের প্রতিশ্রুতির সিকিভাগও বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও কথার ফুলঝুরি নয়, অব্যাহত স্বেচ্ছাচারিতা, পরিকল্পনাহীনতা, দখলবাজি, যানজট ও জনদুর্ভোগের বাস্তব পরিবর্তন চায় নগরবাসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।