Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ও মৎস্য আহরণে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

স্মরণকালের শৈত্যপ্রবাহ

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : লাগাতর শৈত্য প্রবাহ ও উত্তর-পশ্চিমের হিমেল হাওয়ায় দেশের দক্ষিনাঞ্চলের শীতকালীন শাক-সবজীর উৎপাদন ও মৎস্য আহরন ব্যাহত হবার পাশাপাশি বোরো এবং গোলআলুর আবাদেও বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের সাথে দক্ষিনাঞ্চলেও মৃদু থেকে মাঝারী ও তীব্র শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন এ শৈত্য প্রবাহে দক্ষিনাঞ্চলের জনজীবনেও মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বরিশালে তাপমাত্রার পারদ গতকাল স্মরনকালের সর্বনিম্ন ৬.৭ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পেয়েছে। যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম। ফলে ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত নানা রোগব্যাধির প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালসহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যার বেশীরভাগই শিশু ও বয়স্ক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন সকল শিশু ও বয়স্কদের শৈত্য প্রবাহের এ সময়ে ঠান্ডা এড়িয়ে চলার পরমর্শ দিয়েছেন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া প্রত্যুষে ও সন্ধ্যার পরে বাইরে বের না হবার পরামর্শ দিয়ে শীতকালীন কাপড় পরিধানের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বরিশালে গত ৩ জানুয়ারী সর্বনিম্ন তাপমাত্র ছিল ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা পরের দিন ছিল ১০.৪ ডিগ্রী। ৫ জানুয়ারী তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পেলেও ৬ জানুয়ারী তা আবার ১১.২ ডিগ্রীতে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তা আবার ৭.৮ ডিগ্রীতে নেমে গেলেও পরের দিন ৮ জানুয়ারী তা আরো ১ ডিগ্রী হ্রাস পেয়ে ৬.৮ ডিগ্রীতে হ্রাস পায়। গতকাল বরিশালে তাপমাত্রার পারদ সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন ৬.৭ ডিগ্রীতে হ্রাস পেয়েছে। অথচ পৌষের শেষভাগে বরিশালে স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ১১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধিসহ পরবর্তি ২৪ ঘন্টায় সারাদেশেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।
এদিকে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬ ডিগ্রী নিচে নেমে যাওয়ায় দক্ষিনাঞ্চলে শীতকালীন শাক-সবজী উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি এর গুনগত মানও হ্রাস পাচ্ছে। হিমেল হাওয়ায় ফুলকপি, বাঁধাকপি ও গোলআলুসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি মওশুমে দেশে সাড়ে ৫ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ১৫ লাখ টন শীতকালীন সবজী উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। যার মধ্যে দক্ষিনাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৩ লাখ টন শীতকালীন শাক-সবজী উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। তবে এবার দফায় দফায় কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারনে শীতকালীন সবজীর সরবরাহ হ্রাসের সাথে এর দামও বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশী রয়েছে।
কিন্তু লাগাতার শৈত্য প্রবাহ ও মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশায় এ বিপুল পরিমান শীতকালীন শাক-সবজী উৎপাদনসহ গুনগতমান ক্রমশ বিনষ্ট হচ্ছে। চলতি রবি মওশুমে দক্ষিনাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে, তার বীজতলাও ক্রমশ ঝুকির মুখে। শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারনে বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’র কবলে পড়ার আশংকা বাড়ছে। চলতি মওশুমে দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় ১৩ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারনে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরীর কবলে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হলেও এখনো সে ধরনের কোন খবর পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে বøক সুপারভাইজারদের সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে লাগাতার শৈত্যপ্রবাহের সাথে মধ্যরাতের পর থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা আর উত্তর-পশ্চিমের হিমেল হাওয়ায় গত সপ্তাহধিককাল ধরে নদীতে নামতে পারছে না জেলেরা। তাপমাত্রার পারদ ৭ ডিগ্রীর নিচে নামার সাথে হিমশীতল বাতাসে নৌকা নিয়ে জেলেদের নদীতে নামাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। ফলে বাজারে মাছের সরবরাহ গত কয়েকদিন ধরে হ্রাস পেয়েছে।
দক্ষিনাঞ্চচলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা মৃদু থেকে মাঝারী আকারে অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চলে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ